Advertisement
১৮ মে ২০২৪

অ্যাসিডে জখম তরুণী, ফেরাল দুই হাসপাতাল

ঠান্ডা পড়েছে বলে বাবাকে স্টেশনে আসতে বারণ করে একাই বাড়ি ফিরছিলেন সদ্য চাকরি পাওয়া তরুণী। আর তাতেই তাঁকে চরম বিপদের মুখে পড়তে হল। বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে চোখে মোটরবাইকের আলো পড়তেই হকচকিয়ে গিয়ে রাস্তার ধারে সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। আর তখনই বাইক থেকে তাঁর মুখে ছোড়া হল অ্যাসিড। একটি চোখ খুইয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন হুগলির দিয়াড়া রামচন্দ্রপুরের পূর্ব পাড়ার বছর কুড়ির ওই তরুণী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দিয়াড়া ও বালি শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৫
Share: Save:

ঠান্ডা পড়েছে বলে বাবাকে স্টেশনে আসতে বারণ করে একাই বাড়ি ফিরছিলেন সদ্য চাকরি পাওয়া তরুণী। আর তাতেই তাঁকে চরম বিপদের মুখে পড়তে হল। বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে চোখে মোটরবাইকের আলো পড়তেই হকচকিয়ে গিয়ে রাস্তার ধারে সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। আর তখনই বাইক থেকে তাঁর মুখে ছোড়া হল অ্যাসিড।

একটি চোখ খুইয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন হুগলির দিয়াড়া রামচন্দ্রপুরের পূর্ব পাড়ার বছর কুড়ির ওই তরুণী। গত শনিবার রাতে এই ঘটনায় ফের প্রমাণিত হল হাজারো প্রচার এবং আইনের পরেও এখনও এ রাজ্যে অ্যাসিড হামলা বন্ধ হয়নি। রাতে যন্ত্রণায় ছটফট করা মেয়েকে নিয়ে কলকাতার এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে ঘুরে ওই তরুণীর বাবা এটাও বুঝেছেন, রাজ্যে চিকিৎসা ব্যবস্থার হাল কী!

শ্রমজীবী হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, তরুণীর ডান চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বাঁ চোখ ভাল হওয়ার আশা ক্ষীণ। মুখের অনেকটাই পুড়ে গিয়েছে। তাঁকে কে বা কারা অ্যাসিড ছুড়ল তা নিয়ে পুলিশ অন্ধকারে। তরুণী বা তাঁর পরিবারের লোকও এ নিয়ে কিছু বলেননি। তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকে সিঙ্গুর থানায় লিখিত অভিযোগ করা হলেও তাতে কারও নাম করা হয়নি। তরুণীর বাবা বলেন, “কারা যে মেয়েটার ক্ষতি করল তা জানি না। পুলিশ যেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়।” তরুণীর কাকিমা বলেন, “কারও সঙ্গেই মেয়েটার শত্রুতা ছিল না। তাও কেন এমন হল?”

তদন্তকারীরা জানান, ওই তরুণী আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। তবু যতটা জানা গিয়েছে তার উপর ভিত্তি করেই তদন্ত এগোনো হচ্ছে। জেলা এসপি সুনীল চৌধুরী বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে।”

পুলিশ সূত্রের খবর, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই সেক্টর ফাইভের একটি কল-সেন্টারে চাকরি পেয়েছিলেন ওই তরুণী। বাবা, মা ও ভাইকে নিয়ে ছোট সংসার। তাঁর বাবা কলকাতায় একটি আসবাবপত্রের দোকানে পালিশের কাজ করেন। সংসারে সাহায্যের জন্যই কল-সেন্টারে চাকরি নিয়েছিলেন হরিপালের একটি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ওই তরুণী। প্রতিদিন রাত ৮টা ৪০ মিনিটে হাওড়া থেকে যে তারকেশ্বর লোকালটি ছাড়ে সেই ট্রেনটিই তিনি বালি স্টেশন থেকে ধরতেন।

পুলিশকে ওই তরুণী জানিয়েছেন, ওই রাতে ৯টা ২০ মিনিট নাগাদ তিনি দিয়াড়া স্টেশনে নামেন। স্টেশনের পশ্চিম দিকে কিছুটা গেলেই তাঁর বাড়ি। মাঝেমধ্যেই বাবা স্টেশনে তাঁকে নিতে আসেন। সে দিন স্টেশনে নেমে তিনি বাবাকে ফোন করে ঠান্ডার জন্য আসতে বারণ করেন। তাঁদের বাড়ির অদূরেই রয়েছে ক্লাব। পিচ রাস্তা ছেড়ে ক্লাবের পিছনের ইট পাতা রাস্তা দিয়ে তাঁকে বাড়ি ফিরতে হয়। প্রতিদিন ক্লাবের পাশের মাঠে ভলিবল খেলা হলেও সে দিন বন্ধ ছিল। ইটের রাস্তা দিয়ে সাইকেলে যাওয়ার সময় আচমকাই দূর থেকে তাঁর চোখে মোটরবাইকের জোরালো আলো ফেলা হতে থাকে। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় সাইকেল থেকে নেমে রাস্তার এক পাশে দাঁড়ান ওই তরুণী। অভিযোগ, তখনই মোটরবাইকটি তাঁর পাশে আসে। বাইক-আরোহী তরুণীর মুখ লক্ষ করে তরল কিছু ছোড়ে। মুখে তা লাগতেই যন্ত্রণায় কাতরে উঠে রাস্তায় ছিটকে পড়েন ওই তরুণী। মোটরবাইকটি চলে যায়।

পুলিশ জানায়, রাস্তায় পড়ে ছটফট করতে থাকা তরুণীর চিৎকারে প্রতিবেশীরা বেরিয়ে আসেন। প্রথমে ওই তরুণীকে বড়া বিট হাউস পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পুলিশ তরুণীর নাম-পরিচয় লেখে। এর পরে তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে।

কিন্তু শীতের রাতে জখম তরুণীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে গিয়ে বিস্তর দুর্ভোগ পোহাতে হয় পরিবারের লোকজনকে। তাঁদের অভিযোগ, মুখের ক্ষত দেখেও শুধুমাত্র স্যালাইন ও দু’টি ইঞ্জেকশন দিয়ে স্থানাভাবের কথা বলে এসএসকেএম শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল কিংবা বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। সেইমতো তরুণীকে শম্ভুনাথে নিয়ে যাওয়া হলে সেখান থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে অনেক অনুরোধের পরে তরুণী ভর্তি নেওয়া হলেও রবিবার সারা দিন কোনও চিকিৎসকই তাঁকে দেখেননি। তাই রবিবার সন্ধ্যায় তাঁকে শ্রমজীবীতে ভর্তি করানো হয়।

সোমবার শ্রমজীবী হাসপাতালে এসে তরুণীর বাবা বলেন, “মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করতে গিয়ে এত সমস্যায় পড়তে হবে ভাবিনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

hooghly diara ramchandrapur acid attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE