Advertisement
E-Paper

আম-দুধ খেয়ে রাতভর আরামের চুরি

বাঁশদ্রোণীর পরে বালি। সপ্তাহ তিনেক আগে রিজেন্ট পার্ক থানার বাঁশদ্রোণী প্লেসে একটি বাড়িতে বাসিন্দাদের ঘুমিয়ে থাকার সুযোগে লক্ষ টাকার গয়নাগাঁটি, কয়েক হাজার টাকা হাতিয়ে পালিয়েছিল চোরের দল। এতেই শেষ নয়। ফ্রিজ খুলে তারা মনের সুখে খেয়েছিল আম এবং ঠান্ডা পানীয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৪ ০১:৪৮
অঙ্কন: সুমন চৌধুরী।

অঙ্কন: সুমন চৌধুরী।

বাঁশদ্রোণীর পরে বালি। সপ্তাহ তিনেক আগে রিজেন্ট পার্ক থানার বাঁশদ্রোণী প্লেসে একটি বাড়িতে বাসিন্দাদের ঘুমিয়ে থাকার সুযোগে লক্ষ টাকার গয়নাগাঁটি, কয়েক হাজার টাকা হাতিয়ে পালিয়েছিল চোরের দল। এতেই শেষ নয়। ফ্রিজ খুলে তারা মনের সুখে খেয়েছিল আম এবং ঠান্ডা পানীয়। এমনকী, বার করেছিল কাঁচা মাছও। কিন্তু রান্না করতে গেলে আওয়াজে বাড়ির লোকদের ঘুম ভেঙে যাবে ভেবে সেটা শেষ পর্যন্ত তারা ফেলে রেখেই পালায়। এ বার অনেকটা একই কায়দায় চোরেরা হাতসাফাই সারল বালির অন্যতম ব্যস্ত রাস্তা জি টি রোডের একটি বাড়িতে। এ যাত্রায় তারা ভুরিভোজের পাশাপাশি অবশ্য এসি চালিয়ে আরাম করেছে। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা জল বার করে হাত-মুখও ধুয়েছে। সঙ্গে হাতিয়েছে লক্ষাধিক টাকার গয়না, বেশ কিছু বাসনপত্র, নগদ টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী।

স্বভাবতই এই ঘটনায় আবারও প্রশ্নের মুখে পুলিশ। যে বাড়িতে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখান থেকে বালি থানা মিনিট পাঁচেকের হাঁটাপথ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাঝে পুলিশি টহলদারি বাড়লেও সম্প্রতি তা কমে এসেছিল। সেই সুযোগকেই কাজে লাগিয়েছে দুষ্কৃতীরা। পুলিশ টহলদারি কার্যত না থাকায় তারা কাজ সেরে অবাধে পালিয়ে যেতে পেরেছে।

ঠিক কী ঘটেছিল? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১১১/১ নম্বর জি টি রোডের ওই দোতলা বাড়িতে দুই মেয়েকে নিয়ে ভাড়া থাকেন বেসরকারি সংস্থার কর্মী কুন্তল ঘোষ ও তাঁর স্ত্রী অন্তরা ঘোষ। কুন্তলবাবুর নিজের বাড়ি কাছেই বালি বাজার এলাকায়। সম্প্রতি তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পরে কুন্তলবাবুরা ওই বাড়িতেই থাকছিলেন। রোজ দু’বেলা জি টি রোডের বাড়িতে ঘণ্টাখানেকের জন্য আসতেন। বাকি সময়ে বাড়িটি বন্ধ থাকত। পুলিশ জানিয়েছে, রোজকার মতো শনিবারও মেয়েরা স্কুল থেকে ফেরার পরে জি টি রোডের বাড়িতে আসেন কুন্তলবাবু। কিছুক্ষণ থেকে তাঁরা বাড়ি বন্ধ করে চলে যান। রবিবার সকাল ৬টা নাগাদ পরিচারিকা কাজে আসবে বলে ওই বাড়িতে আসেন অন্তরাদেবী। দেখেন, বাড়িতে ঢোকার মূল গ্রিলের গেটটি খোলা। গেট দিয়ে ঢুকে একতলার দরজা খুলতে চেষ্টা করেন তিনি। কয়েক বার ধাক্কাও দেন। কিন্তু দরজা খোলেনি। কিছুক্ষণ পরে অন্তরাদেবী নিজেই দরজার পাশে একটি ভেজানো জানলায় ধাক্কা মারেন। উঁকি মেরে তিনি দেখেন, ঘর লন্ডভন্ড। জিনিসপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। আলমারি খোলা। এর পরেই কুন্তলবাবুকে ফোন করেন তিনি।

কুন্তলবাবুর থেকে খবর পেয়ে আসে বালি থানার পুলিশ। তারা এসে মই লাগিয়ে স্থানীয় একটি ছেলেকে ছাদে তোলে। ছাদে ওঠার গ্রিলের গেট ছিল ভাঙা। সেখান দিয়ে নেমে বাড়িতে ঢুকে দেখা যায়, একতলার দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। পুলিশ ঘরে ঢুকে দেখে, এসি চলছে। ফ্রিজ খোলা। ঘরময় ছড়ানো দেশলাইয়ের প্যাকেট, সিগারেটের পোড়া টুকরো, গুটখার প্যাকেট, এমনকী দুধের খালি প্যাকেটও। জানলায় সাজানো আমের আঁটি। তাই দেখে পুলিশের সন্দেহ, চোরেরা প্রথমে ঢুকে ফ্রিজ থেকে আম ও দুধ বার করে ভুরিভোজ সারে।

অন্তরাদেবী পুলিশকে জানিয়েছেন, একতলার আলমারির চাবি থাকে আলমারিরই মাথায়। পুলিশ জানিয়েছে, পেটপুজো সেরে চোরেরা চাবি দিয়ে আলমারি খুলে সোনার গয়না হাতায়। এর পরে তারা দোতলায় ওঠে। দোতলার ঘরে ছিল দু’টি আলমারি। সে দু’টি ভেঙে তারা চুরি করে আরও গয়না, বাসন ও টাকা। কুন্তলবাবুর অভিযোগ, সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ ভরি সোনার গয়না, ৫ ভরি রুপোর গয়না, পিতলের বাসনপত্র, ডিজিটাল ক্যামেরা ও কয়েক হাজার টাকা চুরি গিয়েছে।

পুরো ঘটনাটি দেখে পুলিশের সন্দেহ, দুষ্কৃতীরা দলে ছিল একাধিক জন। শনিবার গভীর রাতে ঢুকে ঠান্ডা মাথায় প্রায় চার-পাঁচ ঘণ্টা ধরে তারা কুকর্ম সারে। তদন্তে নেমে পুলিশ আরও দেখেছে, কুন্তলবাবুদের ওই বাড়ির পাশে একটি সরু গলি রয়েছে। পুলিশের অনুমান, ওই গলি দিয়ে ঢুকে চোরেরা প্রথমে একটি বাড়ির জানলায় ওঠে। সেখান থেকে কুন্তলবাবুদের বাড়ির এসি মেশিনের বক্সে ওঠে। সেখান থেকে তারা ছাদে নেমে গ্রিলের গেট ভেঙে ঢোকে বাড়িতে। এসি মেশিনের ওই বক্সের উপরে পায়ের ছাপ পেয়েছে পুলিশ।

এ দিনই বিকেলে ঘটনাস্থলে আসেন হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দাকর্তারা। আনা হয় পুলিশ কুকুরও। পায়ের ছাপ-সহ কিছু নমুনা সংগ্রহ করেন গোয়েন্দারা। পুলিশের সন্দেহ, দুষ্কৃতীরা এলাকার খুঁটিনাটি জানত। কারণ, জি টি রোডের মতো সদাব্যস্ত ওই এলাকায় বহু পুরনো বাড়ি রয়েছে। সহজেই এক গলি থেকে অন্য গলিতে চলে যাওয়া যায়। পুলিশের আরও সন্দেহ, দুষ্কৃতীদের সঙ্গে স্থানীয় লোকদের একাংশের যোগাযোগ রয়েছে। তা না হলে চোরেদের পক্ষে এমন ভাবে চুরি করে পালানো সম্ভব ছিল না। কুন্তলবাবুর বাড়ির পরিচারিকার সঙ্গেও দুষ্কৃতীদের যোগাযোগ থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। কারণ অন্তরাদেবী পুলিশকে জানিয়েছেন, প্রতিদিন ওই পরিচারিকা কাজে আসত সকাল ৬টার মধ্যে। কিন্তু রবিবার সে এসেছিল সকাল সাড়ে সাতটায়।

স্বভাবতই এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, ঢিল ছোড়া দূরত্বে থানা থাকলেও পুলিশ কেন কিছু টের পেল না? বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাঝে চুরি খানিকটা কমলেও সম্প্রতি বালি এলাকা চোরেদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। মাসখানেক আগে বালি সরখেলপাড়া ও শান্তিরাম রাস্তায় দু’টি ফাঁকা বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছিল। কিছু দিন আগেই বালি বাজার এলাকার একটি বাড়িতে চুরির চেষ্টা হয়। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা অবশ্য বলেন, “ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। আমরা নিয়মিত টহলদারি চালাই। সেটা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। দুষ্কৃতীদের ধরতে বিশেষ দল তৈরি হয়েছে। গোয়েন্দা দফতরকেও আমরা কাজে লাগিয়েছি। আশা করছি, খুব শীঘ্রই দুষ্কৃতীরা ধরা পড়বে।”

theft in bally kuntal ghosh antara ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy