Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কুণ্ডুবাড়িতে দেবীর পছন্দ রেশমী কাপড়

ছে অনেক। কিন্তু শ্রীরামপুরের কুণ্ডুবাড়ির দুর্গাপুজোর ঐতিহ্য কার্যত একই রয়ে গিয়েছে। পরিবারের সদস্যরা জানান, উনিশ শতকের আটের দশকে এই বাড়িতে পুজোর প্রচলন হয় বনমালী কুণ্ডুর হাত ধরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪০
Share: Save:

সময়ের হাত ধরে পরিবর্তন হয়েছে অনেক। কিন্তু শ্রীরামপুরের কুণ্ডুবাড়ির দুর্গাপুজোর ঐতিহ্য কার্যত একই রয়ে গিয়েছে।

পরিবারের সদস্যরা জানান, উনিশ শতকের আটের দশকে এই বাড়িতে পুজোর প্রচলন হয় বনমালী কুণ্ডুর হাত ধরে। ধারাবাহিক ভাবে চলতে থাকলেও ১৯৪২ সালে তাতে ছেদ পড়ে। ওই বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকারের নির্দেশে শ্রীরামপুর কলেজে সামরিক হাসপাতাল হয়। একই সঙ্গে কলেজের পাশের কুণ্ডুবাড়িও অধিগ্রহণ করে সেনারা। ফলে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত পুজো বন্ধ ছিল। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন ভারতবর্ষে ফের পুজো আরম্ভ হয়। ১৯৮৬ সালে মূলত আর্থিক কারণে আবার পুজো বন্ধ হয়ে যায়। ফের পুজো চালু হয় ১৯৯৬ সালে। এক সময় এই পরিবারের যথেষ্ট নামডাক ছিল। গাওয়া ঘি এবং আখের গুড়ের ব্যবসা ছিল। গঙ্গায় বড় বজরা করে মালপত্র বেচাকেনা হত। বিহারের ভাগলপুর থেকে গাওয়া ঘি এবং উত্তরপ্রদেশের ফরিদাবাদ থেকে আখের গুড় আসত।

পরিবারের বর্তমান কর্তা দিলীপ কুণ্ডু জানান, দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে জমজমাট হয়ে ওঠে এই বাড়ি। প্রথমে চণ্ডীমণ্ডপ ছিল মাটির দেওয়াল এবং বাঁশ-খড়ের চালার। ১৯৬৭ সালে রাজেন্দ্রনাথ কুণ্ডু পাকা চণ্ডীমণ্ডপ তৈরি করেন। পুজো আয়োজনের রীতি অবশ্য প্রায় একই রকম রয়ে গিয়েছে। জন্মাষ্টমীতে কাঠামো পুজো হয়। পুজো আরম্ভ হয় পঞ্চমীতে। দেবীকে সিল্কের কাপড় পরানো হয়। অলঙ্কারে সাজানো হয়। প্রতিমার অস্ত্রশস্ত্র পিতলের। বাড়ির পিছনে চণ্ডীমণ্ডপের পাশে একটি বেলগাছ ছিল। ষষ্ঠীতে সেই গাছ পুজো করে মায়ের বোধন হত। বর্তমানে গাছটি আর নেই। এখন বেল ডাল পুজো করেই বোধন হয়। এক সময় পুজোর জন্য ১০০-১৫০টি নারকেল একসঙ্গে ভাঙা হত। বাড়ির মেয়েরা সেই নারকেল দিয়ে বিভিন্ন রকমের স্বাদু মিষ্টান্ন তৈরি করতেন। সেই খাবার দেবীকে সমর্পন করা হত। এখন পরিমানে কম হলেও সেই রেওয়াজ বন্ধ হয়নি।

এই বাড়ির পুজোতে অষ্টমীতে ধুনো পোড়ানো হয়। মাকে ভোগ হিসেবে লুচি দেওয়া হয়। নবমীতে কুমারী পুজো হয়। ছাঁচি কুমড়ো বলি দেওয়া হয়। নবমীতে খই, মুড়কি, নাড়ু বিতরণের রেওয়াজ ছিল। পরিবারের নতুন প্রজন্মের সদস্য শুভমের কথায়, “পরিবারের সবাই শ্রীরামপুরে থাকেন না। তবে পুজোর সময় সব আত্মীয়-স্বজনেরাই এখানে চলে আসেন। খুব আনন্দ হয়।” গঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন হয় বাড়ির সদস্যদের কাঁধে চড়ে।

কুণ্ডুবাড়িতে কান পাতলেই এখন শোনা যাচ্ছে ঢাকের আওয়াজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sreerampur pujo southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE