Advertisement
E-Paper

কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে যান-শাসনে পুলিশি ‘ব্যর্থতা’, লরিতে পিষ্ট চার

ফের প্রমাণ মিলল কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে যান-শাসনে পুলিশি ব্যর্থতার। বিদ্যাসাগর সেতুর দিক থেকে দ্রুতগতিতে আসা বেপরোয়া লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল শিশুকন্যা-সহ এক মহিলা, তাঁদের বাড়ির পরিচারিকা এবং এক মোটরবাইক আরোহীর। গুরুতর আহত হলেন এক ভ্যানচালকও। বৃহস্পতিবার সকাল এগারোটা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতর নবান্ন থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে শেখপাড়ার কাছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০৭
দুর্ঘটনার পরে। বৃহস্পতিবার।  ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

দুর্ঘটনার পরে। বৃহস্পতিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

ফের প্রমাণ মিলল কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে যান-শাসনে পুলিশি ব্যর্থতার। বিদ্যাসাগর সেতুর দিক থেকে দ্রুতগতিতে আসা বেপরোয়া লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল শিশুকন্যা-সহ এক মহিলা, তাঁদের বাড়ির পরিচারিকা এবং এক মোটরবাইক আরোহীর। গুরুতর আহত হলেন এক ভ্যানচালকও। বৃহস্পতিবার সকাল এগারোটা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতর নবান্ন থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে শেখপাড়ার কাছে।

পুলিশ জানায়, মৃতদের নাম অনিন্দিতা সেন (৩৫), ঈশিতা সেন (৬) ও পুষ্প পাঁজা (৫৫)। তিন জনেরই বাড়ি শেখপাড়া লেনে। মৃত বাইক আরোহীর পরিচয় রাত পর্যন্ত মেলেনি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিত্‌সাধীন ভ্যানচালক সমীর মাজি।

নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা নতুন বিষয় নয়। নিত্য দিনই ওই রাস্তায় ছোট বড় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি লেগেই থাকে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্য প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যাল বসিয়ে ও রাস্তার মাঝে কাট আউট বন্ধ করে প্রাথমিক ভাবে দুর্ঘটনা এড়াতে চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে যে কাজের কাজ হয়নি, নিত্য দিনের দুর্ঘটনা তা প্রমাণ করে। অভিযোগ, এ দিনও যান-নিয়ন্ত্রণে পুলিশি ব্যর্থতার জন্যই দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, ১১টা নাগাদ কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ধরে নবান্নের পাশে উড়ালপুল দিয়ে আসা ওই ফাঁকা লরিটি সাঁতরাগাছি স্টেশনের দিকে যাচ্ছিল। তখন উড়ালপুলে কোনও পুলিশ ছিল না। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তীব্র গতিতে আসা লরিটি শেখপাড়ার কাছে নিয়ন্ত্রণ হারায়। এর পরেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তখন স্কুল থেকে মেয়েকে নিয়ে পরিচারিকার সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন হাওড়ার এক স্কুলের শিক্ষিকা অনিন্দিতাদেবী। পুলিশ জানায়, তাঁরা শেখপাড়ায় নেমে রাস্তার বাঁ দিক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। লরিটি প্রথমে রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়া একটি ভ্যানরিকশাকে ধাক্কা মেরে দুমড়ে মুচড়ে দেয়। এর পরেই শিশুটিকে গার্ডওয়ালে পিষে দেয়। শিশুটির মা ও তাঁদের বাড়ির পরিচারিকাকে ধাক্কা মেরে সামনের এক মোটরবাইক আরোহীকে চাপা দেয়। এর পরে তিন ফুট নিচে পাশের একটি মাঠে পড়ে যায়। লরির ভাঙা চাকা ও যন্ত্রাংশের তলায় আটকে যায় অনিন্দিতাদেবী, পুষ্পদেবী ও মোটরবাইক আরোহীর দেহ।

পুলিশ আসার আগে স্থানীয়েরা উদ্ধার কাজে হাত লাগান। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছুটে আসেন হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তারা। আনা হয় ক্রেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কোনা এক্সপ্রেসওয়ের দু’দিকেই যান চলাচল বন্ধ। শিশুটির দেহ উদ্ধার করে একটা লরিতে রাখা হয়। হাসপাতালে পুষ্পদেবীকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ভ্যানচালককে সমীর মাজি হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি। ক্রেনের সাহায্যে লরিটিকে তোলার পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করা হয় অনিন্দিতাদেবীকে। এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হলে দুপুরের দিকে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। লরির যন্ত্রাংশের মধ্যে পিষে যাওয়া অবস্থায় উদ্ধার হয় মোটরবাইক চালকের দেহ। দুর্ঘটনার জেরে মাঠে থাকা দু’টি সাইকেল ও মোটরবাইকও ভেঙেচুরে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা রহমত আলি খান বলেন, “কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে সার্ভিস রোড নেই। তাই লোকজনকে রাস্তা দিয়েই হাঁটতে হয়। তার উপর পুলিশ যান-নিয়ন্ত্রণ করা তো দূর, শুধু লরি থামিয়ে পয়সা তোলে। তাই এত দুর্ঘটনা হয়।” অন্য এক বাসিন্দা ইমাম আসিফ হালদারেরও অভিযোগ, “দিনের পর দিন পুলিশকে বেপরোয়া লরি ও অন্য যান-নিয়ন্ত্রণের জন্য বলছি। কিছুই হয়নি। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। পুলিশ যানশাসন না করে শুধু পয়সা তোলে।”

যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ হাওড়ার ডিসি ট্রাফিক সুমিত কুমার। তিনি বলেন, “অভিযোগ ঠিক নয়। কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে যান-শাসন ঠিক মতো হয় বলেই আগের তুলনায় দুর্ঘটনা অনেক কমেছে। তবে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের কয়েকটি জায়গায় ফুটপাথ বা সার্ভিস রোড তৈরি করা জরুরি।

kona expressway accident ishita sen anindita sen death southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy