বিধিবদ্ধ ভাবে ‘ই-টেন্ডার’ না করে দু’কোটির বেশি টাকার সরকারি প্রকল্পের কাজে হাত দেওয়ার জন্য তৃণমূল পরিচালিত উত্তরপাড়া পুরসভাকে বৃহস্পতিবার শোকজ করলেন শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক। ওই কাজ বন্ধ করে সাত দিনের মধ্যে শোকজের জবাব দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
যে কাজকে ঘিরে এই পরিস্থিতি তা হল কেন্দ্র সরকারের বিএসপিইউ (বেসিক সার্ভিসেস অব আরবান পুওর) বা শহরাঞ্চলের গরিবদের উন্নয়ন প্রকল্প। যে প্রকল্পে উত্তরপাড়ার দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারীদের ঘর তৈরি করে দেওয়া হচ্ছিল। সেই কাজ আপাতত বন্ধ করে দিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু কেন উত্তরপাড়া পুর কর্তৃপক্ষ ওই ধরনের পদক্ষেপ করতে যাচ্ছিলেন তা নিয়ে প্রশাসনিক মহলে জলঘোলা শুরু হয়েছে। কেননা, পাঁচ লক্ষ টাকার উপরে কোনও সরকারি প্রকল্প করতে হলে তা ই-টেন্ডারের মাধ্যমে করতে হবে, এমনটাই বিধি। মহকুমাশাসক (শ্রীরামপুর) মৃণালকান্তি হালদার বলেন, “পুর কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে কী পরিস্থিতিতে এবং কেন ওই ধরনের পদক্ষেপ করা হয়েছে? পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান পিনাকী ধামালি অবশ্য বলেন, “পুরসভার কাজে এখনও সে ভাবে ই-টেন্ডারের চল নেই। সে জন্যই সাবেক পদ্ধতিতে টেন্ডার ডেকে ওই কাজ করি। কিন্তু যে হেতু মহকুমাশাসকের দফতর থেকে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তাই আমরা এখনই আগ বাড়িয়ে আর কিছু করছি না।”
ওই প্রকল্পে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারীদের ২৭০ বর্গফুটের বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়। সেখানে একটি রান্নাঘর এবং শৌচালয়ও থাকে। প্রতিটি পরিবারের পিছনে ওই প্রকল্পে মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে খরচ করা হয়। যে পরিবার ওই সরকারি প্রকল্পের আওতায় আসে তাদের খরচ করতে হয় ২০ হাজার টাকা করে।
উত্তরপাড়া পুর কর্তৃপক্ষ গত ডিসেম্বর মাসের ২৪ তারিখ ওই প্রকল্পে কাজের একটি দরপত্র আহ্বান করে। মোট ১০টি ভিন্ন ভিন্ন কাজের তালিকা ছিল ওই দরপত্রে। তাতে কাজে টাকার পরিমাণ ছিল ২৩ লক্ষ ৯৭ হাজার থেকে ২১ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকার মধ্যে। ওই দরপত্রে কাজে অংশগ্রহণের আবেদনের সময়সীমা ছিল চলতি মাসের ৯, ১৪ এবং ১৯ তারিখ বিকেল পর্যন্ত। দরপত্রটি আহ্বান করেন পিনাকীবাবুই। সেখানে তাঁর সইও ছিল।
এর পরেই প্রশাসনিক স্তরে বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর শুরু হয়। প্রশাসনও নানা মহল থেকে অভিযোগ পায়, যেখানে টাকার পরিমাণ এত বেশি, সেখানে কেন ই-টেন্ডার করা হল না? কেন পুর কর্তৃপক্ষ নিয়ম এড়িয়ে ঘুরপথে ওই কাজে উদ্যোগী হয়েছিল? সরকারি কাজে টাকা খরচের ক্ষেত্রে পুর কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতার প্রশ্নটিও সামনে চলে আসে। নানা দিক থেকে খোঁজ নিয়ে প্রশাসনের কর্তারা দেখেন, ওই অভিযোগের সারবত্তা আছে। সম্ভাব্য পরিস্থিতি আঁচ করেই অবশ্য শুক্রবার পুর কর্তৃপক্ষ ওই প্রকল্পের কাজে আর না এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ফের কবে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে, তা নিয়ে কোনও উত্তর মেলেনি পুর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও বিষয়টিতে অস্বস্তিতে পড়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, পুরভোটের মুখে জনমানসে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। দলের অন্দরে এ নিয়ে জলঘোলাও হচ্ছে। পুরসভায় যা হয়েছে, তা কাম্য নয় বলে নেতাদের অনেকেই পুরকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। এ নিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত জানান, দলীয় স্তরে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy