Advertisement
১০ মে ২০২৪

গুড়িয়া-হত্যা মামলার শুনানিতে সম্পাদককে দুষলেন হোম-সুপার

দু’বছর আগে গুড়াপের ‘দুলাল স্মৃতি সংসদ’ হোমের আবাসিক গুড়িয়ার দেহ উদ্ধার ঘিরে তোলপাড়া হয়েছিল গোটা রাজ্য। অত্যাচার চালিয়ে তাঁকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। সেই মামলার শুনানিতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে মঙ্গলবার হোমের তৎকালীন সুপার বুলবুল চৌধুুরী বিচারককে জানালেন, হোমের সম্পাদক উদয়চাঁদ কুমার এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ শ্যামল ঘোষ আবাসিক মেয়েদের উপর শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন চালাতেন।

ধৃত হোমের সম্পাদক উদয়চাঁদ কুমার। ছবি: তাপস ঘোষ।

ধৃত হোমের সম্পাদক উদয়চাঁদ কুমার। ছবি: তাপস ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৪ ০১:৪০
Share: Save:

দু’বছর আগে গুড়াপের ‘দুলাল স্মৃতি সংসদ’ হোমের আবাসিক গুড়িয়ার দেহ উদ্ধার ঘিরে তোলপাড়া হয়েছিল গোটা রাজ্য। অত্যাচার চালিয়ে তাঁকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। সেই মামলার শুনানিতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে মঙ্গলবার হোমের তৎকালীন সুপার বুলবুল চৌধুুরী বিচারককে জানালেন, হোমের সম্পাদক উদয়চাঁদ কুমার এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ শ্যামল ঘোষ আবাসিক মেয়েদের উপর শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন চালাতেন।

কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ওই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছে সিবিআই। সম্প্রতি ওই মামলার শুনানি শুরু হয় চুঁচুড়া জেলা আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (ফার্স্ট কোর্ট) অরূপ বসুর এজলাসে। এর আগে হুগলির তৎকালীন সমাজকল্যাণ আধিকারিক রমা সামন্ত এবং ধনেখালির যুগ্ম বিডিও অজয় সরকার সাক্ষ্য দিয়েছেন। মঙ্গলবার সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বুলবুলদেবী আদালতকে জানান, গুড়িয়ার মৃত্যুর সময় তিনি হোমে ছিলেন না। একটি সেমিনারে থাকার সময় তিনি গুড়িয়ার মৃত্যুর খবর পান। ফিরে এসে জানতে পারেন, গুড়িয়ার দেহ পুঁতে দেওয়া হয়েছে। এর পরেই তিনি উদয়চাঁদ এবং শ্যামলের নামে আবাসিক মেয়েদের উপর নির্যাতন চালানোর কথা জানান। হোমের অন্য এক আবাসিককে শ্যামল ধর্ষণ করেছিল, এমনটাও তিনি শুনেছিলেন বলে দাবি করেন বুলবুলদেবী। এর আগে পুলিশের তদন্ত চলাকালীন বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দিও দিয়েছেন তিনি।

মামলার সরকারি আইনজীবী বিদ্যুৎ রায়চৌধুরী বলেন, “ওই হোমের আবাসিকরা এখন রাজ্যের বিভিন্ন হোমে আছেন। তাঁরাও গুড়িয়া-হত্যা মামলার সাক্ষী। তাঁরা যাতে নিরাপদে আদালতে এসে সাক্ষ্য দিতে পারেন, সে জন্য ওই আবাসিকদের নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করতে এ দিনই পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।”

পুলিশ প্রশাসনের কর্তাদের উপস্থিতিতে ২০১২ সালের ১১ জুলাই গুড়াপের খাজুরদহ-মিল্কি এলাকার ওই হোমের পাঁচিলের পাশে পুকুরের ধারের মাটি খুঁড়ে বছর বত্রিশের গুড়িয়ার পচাগলা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মানসিক ভারসাম্যহীন ওই মহিলার উপর অত্যাচার চালিয়ে খুন করা হয় এবং প্রমাণ লোপাট করতে মৃতদেহ পুঁতে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। গুড়িয়া-কাণ্ড সামনে আসার পরেই বেসরকারি ওই হোমটি বন্ধ করে দেয় রাজ্য সরকার।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, উদ্ধারের দিন দশেক আগে ওই যুবতীর দেহ পুঁতে দেওয়া হয়। পুরো ঘটনা চেপে যেতে চিকিৎসকের সই জাল করে মৃত্যুর শংসাপত্র তৈরি করে নেন উদয়চাঁদরা। ওই শংসাপত্রে দেখানো হয়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গুড়িয়ার মৃত্যু হয়েছে। ওই জাল শংসাপত্রই চুঁচুড়ার মহকুমাশাসকের দফতরে জমা দেওয়া হয়। উদয়চাঁদ, শ্যামল-সহ ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তদন্তকারী অফিসার আদালতে চার্জশিট জমা দেন। গ্রেফতার হওয়া ১০ জনেরই নাম রয়েছে চার্জশিটে। খুন ছাড়াও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা, সরকারি নথিপত্র তছরুপ-সহ বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয় তাঁদের বিরুদ্ধে। ওই মামলায় পরে পরে তাঁরা জামিন পেলেও উদয়চাঁদ, শ্যামল এবং তাঁদের সহযোগী সোমনাথ রায় অবশ্য ওই হোমেরই অন্য এক আবাসিককে ধর্ষণের পৃথক একটি মামলায় জেলেই রয়েছেন। রাজ্য সরকার গুড়িয়া-হত্যা মামলার তদন্তভার সিআইডি-র হাতে দিলেও পরে কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআইকে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE