Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ঘড়িবাড়ি মাঠে আবাসন তৈরি হয়নি কেন, ধমক জমি-মাফিয়ার

মেয়ের বিয়ের সময়ে এক রূপ। কিন্তু ‘ব্যবসা’য় উনিশ-বিশ হলে অগ্নিশর্মা হতে সময় লাগে না রমেশ মাহাতোর। পুলিশের চোখে শ্রীরামপুর থেকে ডানকুনি এলাকার এক নম্বর এই ‘জমি-মাফিয়া’র রাগের মুখে পড়ে এখনও ত্রস্ত উত্তরপাড়ায় শাসকদলের দুই কাউন্সিলর এবং এক যুব-নেতা।

এই সেই মাঠ। —নিজস্ব চিত্র।

এই সেই মাঠ। —নিজস্ব চিত্র।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৫ ০৩:০৯
Share: Save:

মেয়ের বিয়ের সময়ে এক রূপ। কিন্তু ‘ব্যবসা’য় উনিশ-বিশ হলে অগ্নিশর্মা হতে সময় লাগে না রমেশ মাহাতোর। পুলিশের চোখে শ্রীরামপুর থেকে ডানকুনি এলাকার এক নম্বর এই ‘জমি-মাফিয়া’র রাগের মুখে পড়ে এখনও ত্রস্ত উত্তরপাড়ায় শাসকদলের দুই কাউন্সিলর এবং এক যুব-নেতা।

পুলিশ সূত্র এবং রমেশ ঘনিষ্ঠদের দাবি, উত্তরপাড়ার ঘড়িবাড়ি মাঠে প্রোমোটিংয়ের কাজ শুরু না হওয়ায় বেজায় চটেছে রমেশ। ক’দিন আগে জি টি রোড লাগোয়া এক আবাসনে এ নিয়ে ওই তিন নেতার সঙ্গে আলোচনায় বসে সে। শুরুতেই ধমক দেয়, “এক কোটি টাকা লাগিয়েছি। প্রয়োজনে আরও দেব। কিন্তু কাজ কেন শুরু হল না?”

ধমকে দৃশ্যতই অস্বস্তিতে হয়ে পড়েন দুই কাউন্সিলর এবং ওই যুব- নেতা। কয়েকদিন আগেই তাঁরা রমেশের থেকে তার দুই মেয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণ পেয়েছেন। সেই অনুষ্ঠানে দেখাও গিয়েছে তিন জনের এক জনকে। কিন্তু বিয়ে মিটতে সেই রমেশই যে এমন ‘গোঁসা’ করবে, ভাবতে পারেননি তাঁরা।

কেন ওই তিন জন রমেশের তোপের মুখে পড়লেন?

বছর চারেক আগে হুগলির আর এক ‘ত্রাস’ হুব্বা শ্যামল ওরফে শ্যামল দাসকে খুনের অভিযোগে ধরা পড়ে জেলে ছিল রমেশ। রমেশ-অনুগামীদের দাবি, সেই সময়ে ঘড়িবাড়ি মাঠে তার ঘনিষ্ঠ লোকজন যাতে প্রোমোটিং করতে পারে, তা নিয়ে ওই নেতাদের তরফে আশ্বাস পেয়েছিল সে। ভরসা পেয়ে রমেশ টাকা ঢালে প্রকল্পে। কিন্তু জামিন পেয়ে সে দেখে, প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। তাই ওই তোপ।

বিষয়টি নিয়ে ওই কাউন্সিলরেরা বা যুব নেতা মুখ খুলতে না চাইলেও পুর-ভোটের মুখে শাসক দলের অন্দরে জলঘোলা শুরু হয়েছে। উত্তরপাড়ার এক তৃণমূল নেতা বলেন, “আমাদের ওই তিন জন দলের অনুমোদন ছাড়াই ব্যবসায়িক কারণে রমেশদের সঙ্গে বসেছিলেন। এর দায় দল নেবে না। পুর-কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, ওই জমিতে মিউটেশন না দিতে। নকশা অনুমোদন না করতে।” জেলা তৃণমূলের আর এক শীর্ষনেতার দাবি, ওই মাঠে প্রোমোটিংয়ের চক্করে দলের যাঁরা জড়িত, তাঁরা যাতে ভোটে দাঁড়াতে না পারেন, তা দেখা হচ্ছে। তবে শাসক দলের আর একটি অংশের বক্তব্য, পুরোটা বিরোধীদের ‘অপপ্রচার’। একেবারেই রাজনৈতিক কারণে করা। তবে বাসিন্দা সিপিএমের শিক্ষক নেতা শ্রুতিনাথ প্রহরাজের মন্তব্য, “সবাই জানে, কারা ঘটনায় জড়িত। বিরোধীদের দিকে আঙুল তুলে লাভ নেই।”

ঘটনা কানে গিয়েছে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের। তিনি জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য সরকার মাঠটি অধিগ্রহণ করবে। কিন্তু সে প্রক্রিয়া যে সময়সাপেক্ষ, তা-ও মেনেছেন পুরমন্ত্রী। তার আগে ঘড়িবাড়ি মাঠ নিয়ে কাউন্সিলরদের সঙ্গে রমেশ বৈঠক করায় প্রমাদ গনছে পুলিশ। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে বলে আশ্বাস জেলার পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরীর।

জমিদারি আমলের ঘড়িবাড়ি মাঠে খেলাধুলো করেন অন্তত তিনটি ক্লাবের সদস্যেরা। অনেকে সকাল-বিকেল সেখানে হাঁটতে যান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রিকেট-ফুটবল প্রতিযোগিতাও হয়। কিন্তু মাস কয়েক আগে মাঠটির মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। স্থানীয় কিছু প্রোমোটার এবং তাদের দলবল মাঠটি কব্জা করতে চায় বলে অভিযোগ। মাঠ লাগোয়া তিনটি পুকুর কার্যত বুজিয়েও ফেলা হয়। প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন এলাকাবাসী। গড়ে ওঠে ‘মাঠ বাঁচাও কমিটি’।

সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশের উপস্থিতিতে মাঠের চারপাশ ঘিরে দেওয়া হয়। জেলাশাসকের দফতর থেকে পুরসভাকে নির্দেশ দেওয়া হয়, তাদের না জানিয়ে যেন ওই জায়গায় আবাসনের অনুমোদন দেওয়া না হয়। জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল বলেন, “মাঠ যাতে সাধারণ মানুষেরই থাকে, সেটাই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।”

প্রশাসনের এই কড়া মনোভাবের ফলে ওই মাঠে আবাসন নির্মাণ আদৌ করা যাবে কি না, তা নিয়ে এখন ধন্দে পড়েছে রমেশ। তাই তিন নেতার কাছে জবাবদিহি চেয়েছে, “আন্দোলন কেন বন্ধ করা যায়নি?”

জবাব পায়নি সে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE