—নিজস্ব চিত্র।
‘টুনি বাল্ব গিয়ে এলইডি এসেছে। কলকাতায় মণ্ডপে মণ্ডপে তাল ঠোকাঠুকি লেগেছে। কিন্তু বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের আলোয় লড়াইয়ের উৎপত্তিস্থল বছরের পর বছর ধরে থেকে গিয়েছে গঙ্গা পারের পুরনো শহর সেই চন্দননগর।
মণ্ডপের থিমের প্রতিযোগিতার পাশাপাশি আলোর থিম নিয়েও পুজো কমিটিগুলির একে অন্যকে টেক্কা দেওয়ার লড়াইয়ে জমে যায় কলকাতার পুজো। উত্তরে বাগবাজার থেকে কলেজ স্কোয়ার, মহম্মদ আলি পার্ক থেকে দক্ষিণ একডালিয়া এভারগ্রিন, যোধপুর পার্ক কে থাকে না সেই লড়াইয়ে। আর আলোর এই লড়াইয়ে প্রায় সকলের ভরসা চন্দননগর।
আলোর সাম্রাজ্য চন্দননগরে অবশ্য পুজোর মরসুম বলে কিছু নেই। সারা বছরই এখানকার আলোকশিল্পীরা ব্যস্ত থাকেন নিত্যনতুন থিম ভাবনায়। কখনও তা কল্পনাকে আশ্রয় করে আবার কখনও তা বাস্তবের কোনও ঘটনা, দুর্ঘটনাকে আশ্রয় করে। ঠাকুরমার ঝুলির মজাদার গল্প থেকে ৯/১১-এর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে জঙ্গি হামলা কি নেই সেই তালিকায়!
বছরভর কাজ চললেও পুজো এলে স্বাভাবিক ভাবেই বায়নার ঠেলায় ব্যস্ততা তুঙ্গে ওঠে শিল্পীদের। এ বছরও থিমে বৈচিত্র্য এনে আলোয় নজর কাড়তে দিনরাত কাজ করে চলেছেন শিল্পীরা। শহর থেকে শহরতলির মণ্ডপে দেখা যাবে বিশালাকায় এক গরিলা বাড়ির দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসছে। কোথাও দর্শকেরা খেতে পাবেন শ্বেতশুভ্র বেশে আকাশ থেকে নেমে আসথে পরীর দল। আলোর ছায়ায় দেখা যাবে শামুক, কাঁকড়া বিছে হেঁটে বেড়াচ্ছেো তো কোথাও পায়রা, বাজপাখি, ফড়িং উড়ছে। কলকাতা থেকে ইলাহাবাদ, কোচবিহার, অসম, রাজস্থানের জয়পুর সর্বত্রই চন্দননগরের আলোর রমরমা।
চন্দননগরের আলো মানেই টুনি বাল্বের চিরাচরিত ঐতিহ্য। যদিও গত দু’তিন বছরে সেই ঐতিহ্য থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন শিল্পীরা। টুনির জায়গা নিচ্ছে এলইডি। কারণ, বিদ্যুতের মাসুল বৃদ্ধি। পুজো কমিটিগুলির দাবির তাগিদেই এই পরিবর্তন বলে শিল্পীদের দাবি। তবে একই সঙ্গে তাঁদের দাবি, মাধ্যম বদলালেও চন্দননগরের আলোর আকর্ষণ কমেনি।
চন্দননগরের বিখ্যাত আলোকশিল্পীদের অন্যতম বাবু পালের অবশ্য বক্তব্য,‘‘ চন্দননগরে আলোর যে খ্যাতি ছিল তা আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে বসেছে। কারণ, আলোর ব্যবসায় আগে যে পরিমাণ লাভ থাকত তা এখন অনেকটাই কমেছে। যার অন্যতম কারণ, বিদ্যুতের খরচ বেড়ে যাওয়া। ফলে পুজো কমিটিগুলিও আলো বাবদ তাদের বাজেট আগের চেয়ে কমিয়ে দিয়েছে। তাই খরচ কমাতে এবং চন্দননগরের সেই টুনি বাল্বের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এলইডি বাল্বকে টুনির খাপে ভরে কাজ করা হচ্ছে।’’
বাবু পালের তৈরি আলোয় এ বার মণ্ডপে দেখা যাবে সমুদ্রে ডলফিনের খেলা, সৌরজগতের ননা বিস্ময়। দেখা যাবে চন্দ্র অভিযান, মঙ্গল অভিযান, স্পেস থিয়েটার, চাঁদের গাড়ি, মঙ্গলের গাড়ি, সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণ। আর সেই লক্ষ্যে ৫০ জন আলোকশিল্পী দিন রাত কাজ করে চলেছেন। চন্দননগরের আর এক শিল্পী তপন ইলেকট্রিকের তপন ঘোষ জানালেন, এ বার তাঁরা আলোর ঝুলি সাজিয়েছেন শিশুদের মনের মতো করে। রয়েছে টিনটিন, চার্লি চ্যাপলিনের খেলা, লরেল-হার্ডি, মিস্টার বিনের মতো আকর্ষণ। চন্দননগরের বিদ্যালঙ্কার জি ডি ইলেকট্রিকের স্বপন দে আবার ব্যস্ত আলোয় কচিকাঁচাদের কবিতা তুলে ধরতে। টুইঙ্কল টুইঙ্কল লিটল স্টার, হামটি ডামটি এ বার আলোয় পড়বে শিশুরা।
শুধু কলকাতা নয়, শহরের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে আলোক কারিকুরি পৌঁছে গিয়েছে জেলা শহর ও শহরতলিতেও। আলোর কী নতুন থিম হাজির করেন চন্দননগরের শিল্পীরা তারই অপেক্ষায় দর্শনার্থীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy