Advertisement
E-Paper

থানা-বিডিও অফিসে হয়রান আমানতকারীরা

সকাল সওয়া ৬টা থেকে উলুবেড়িয়া ১ বিডিও অফিসে লাইন দিয়েছিলেন কুলগাছিয়ার বাসিন্দা পল্লবকান্তি মণ্ডল। ছিলেন তিন নম্বরে। বেলা যত বেড়েছে লাইন তত দীর্ঘ হয়েছে। বেলা সাড়ে ৯টা তেই তাঁর পিছনে লাইনে ছিলেন কয়েকশো আমানতকারী। উলুবেড়িয়া থানা থেকে খবর পেয়ে তাঁরা সকলেই এ দিন এসেছিলেন সারদার চেক নিতে। কিন্তু বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ বিডিও অফিস খোলার পরে অফিস থেকে তাঁদের যা বলা হল তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না কেউই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৪ ০২:৩৭
বিডিও অফিসের বাইরে ভইক্ষোভ আমানতকারীদের। ডানদিকে, ভিতরে আটকে রয়েছেন কর্মীরা।—নিজস্ব চিত্র।

বিডিও অফিসের বাইরে ভইক্ষোভ আমানতকারীদের। ডানদিকে, ভিতরে আটকে রয়েছেন কর্মীরা।—নিজস্ব চিত্র।

সকাল সওয়া ৬টা থেকে উলুবেড়িয়া ১ বিডিও অফিসে লাইন দিয়েছিলেন কুলগাছিয়ার বাসিন্দা পল্লবকান্তি মণ্ডল। ছিলেন তিন নম্বরে। বেলা যত বেড়েছে লাইন তত দীর্ঘ হয়েছে। বেলা সাড়ে ৯টা তেই তাঁর পিছনে লাইনে ছিলেন কয়েকশো আমানতকারী। উলুবেড়িয়া থানা থেকে খবর পেয়ে তাঁরা সকলেই এ দিন এসেছিলেন সারদার চেক নিতে। কিন্তু বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ বিডিও অফিস খোলার পরে অফিস থেকে তাঁদের যা বলা হল তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না কেউই।

বিডিও অফিস থেকে তাঁদের বলা হয়, চেক বিলির কোনও খবর তাঁদের কাছে নেই। সকাল থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর এমন কথা শুনে স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন লাইনে দাঁড়ানো আমানতকারীরা। শুরু হয়ে যায় বিক্ষোভ। ক্ষুব্ধ জনতা বিডিও অফিস ঘেরাও করে রাখে। বিডিও অফিসের সমস্ত অফিসার ও কর্মীকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। ছিন্ন কর দেওয়া হয় জল এবং বিদ্যুৎ সংযোগ। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার।

ঠিক কী হয়েছিল এ দিন?

বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, আমানতের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য গত বছর জুন মাসে তাঁদের কাছ থেকে উলুবেড়িয়া থানায় দরখাস্ত জমা নেওয়া হয়েছিল। গত শুক্রবার, ২৭ জুন থানা থেকে তাঁদের জানানো হয় সোমবার উলুবেড়িয়া-১ বিডিও অফিস থেকে চেক বিলি করা হবে। তাঁরা জানান, থানায় মোট ১৩০০ জন আমানতকারীর নামের তালিকা এবং নামের পাশে তাঁদের যে চেক দেওয়া হবে তার নম্বর লিখে তা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, থানা থেকে তাঁদের একটি করে রসিদও দেওয়া হয়, যা দেখালে চেক মিলবে। সেই মতো এ দিন সকাল থেকেই আমানতকারীরা লাইন দিয়েছিলেন। বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ বিডিও অফিসের লোকজন এসে অফিসের সামনে বিরাট লাইন দেখে অবাক হয়ে যান। লাইনে দাঁড়ানো লোকজনদের জিজ্ঞাসা করে তাঁরা জানতে পারেন তাঁরা সকলেই সারদার আমানতকারী এবং আজ চেক নিতে এসেছেন। এ সব শুনে হতভম্ব হয়ে যান বিডিও অফিসের আধিকারিকেরা। তাঁরা আমানতকারীদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন এ রকম কোনও খবর তাঁদের কাছে নেই। এর পরেই শুরু হয়ে যায় আমানতকারীদের বিক্ষোভ এবং ঘেরাও কর্মসূচি।

একটি কলেজের আংশিক সময়ের শিক্ষক পল্লববাবু বলেন, “আমি ১০ হাজার টাকা সারদায় রেখেছিলাম। সুদ বাদ দিয়ে আমার আসল টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল। থানায় আমার নামের পাশে অ্যাকাউন্ট নম্বরও লেখা ছিল। থানা থেকে আমাকে একটি রসিদ দেওয়া হয়। সকাল সওয়া ৬টা থেকে লাইন দিয়ে জানতে পারলাম চেক পাবো না। পুলিশ ও প্রশাসনের মধ্যে কী কোনও সমন্বয় নেই?’’ তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘‘প্রশাসনের কাছ থেকে যদি কোনও খবরই না পাবে তা হলে পুলিশ-ই বা কেন আমানতকারীদের রসিদ দিল?’’ বস্তুত, এ দিন সব আমানতকারীদেরই ছিল একই প্রশ্ন।

বিডিও এ দিন আসেননি। যুগ্ম বিডিও বলেন, “আমরা পুলিশকে চেক দেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে কিছুই জানাইনি। পুলিশ কোথা থেকে ও সব খবর আমানতকারীদের জানিয়েছে তা বলতে পারব না।” পরিস্থিতি সামাল দিতে আমানতকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেন তিনি। ঘটনাস্থলে হাজির হন উলুবেড়িয়ার এসডিপিও শ্যামলকুমার সামন্ত। বেলা আড়াইটা নাগাদ তাঁদের হস্তক্ষেপে বিডিও অফিসে নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, কবে চেক দেওয়া হবে তা জানানো হবে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে। কিন্তু তাতেও শান্ত করা যায়নি বিক্ষোভকারীদের। পরে শ্যামলবাবু বলেন, “ থানার তরফে একটা ভুল বোঝাবুঝির কারণেই এমনটা ঘটেছে। এর পর চেক সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য আমানতকারীদের পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হবে। সে জন্য সমস্ত আমানতকারীদের টেলিফোন নম্বর নেওয়া হয়েছে।” এর পর বিকেল ৪টে নাগাদ ফিরে যান বিক্ষোভকারীরা।

agency cheque distribution saroda uluberia southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy