Advertisement
E-Paper

থানার কাছেই তোলাবাজি, দুষ্কৃতী ধরালেন লরিচালক

থানা যতটা কাছে, পুলিশ যেন ততটাই দূরে! আক্ষরিক অর্থে ঠিক এমনই ঘটনা ঘটল হাওড়ার দাশনগরে। অভিযোগ, থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে লরি থামিয়ে প্রতি রাতে তোলাবাজি চালাচ্ছিল একদল যুবক। থানার সামনে এমন ঘটনা ঘটলেও তা রহস্যজনক কারণে পুলিশের চোখে পড়ত না, কানেও যেত না। কিন্তু ১০০ ডায়ালে ফোন করে দাশনগর থানার অফিসারদের ‘চোখ’ কার্যত খুলে দিলেন এক লরিচালক।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৪ ০২:০৯
অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

থানা যতটা কাছে, পুলিশ যেন ততটাই দূরে!

আক্ষরিক অর্থে ঠিক এমনই ঘটনা ঘটল হাওড়ার দাশনগরে। অভিযোগ, থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে লরি থামিয়ে প্রতি রাতে তোলাবাজি চালাচ্ছিল একদল যুবক। থানার সামনে এমন ঘটনা ঘটলেও তা রহস্যজনক কারণে পুলিশের চোখে পড়ত না, কানেও যেত না। কিন্তু ১০০ ডায়ালে ফোন করে দাশনগর থানার অফিসারদের ‘চোখ’ কার্যত খুলে দিলেন এক লরিচালক। ১০০ ডায়ালে ফোন করে ওই লরিচালক অভিযোগ করেন, থানার কাছেই তার আলুর লরি থামিয়ে ছিনতাই করছে একদল দুষ্কৃতী। অন্য লরিও বাদ যাচ্ছে না।

খবরটি জানতে পেরে পুলিশের কন্ট্রোল রুম থেকে দাশনগর থানায় কড়া নির্দেশ আসে অবিলম্বে ঘটনাস্থলে গিয়ে অপরাধীদের গ্রেফতার করতে বলে। ফোন পেয়েই নড়েচড়ে বসেন থানার কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারেরা। তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে ছুটে যান তাঁরা। হাতেনাতে ধরা পড়ে যায় তিন তোলাবাজ। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম লক্ষ্মণ দাস, বুবাই ছাউলে এবং অভিজিৎ দাস। ধৃতদের মধ্যে দু’জন এলাকার পরিচিত তৃণমূলকর্মী এবং স্থানীয় এক তৃণমূল কাউন্সিলরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। পুলিশ ধৃত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ৩৯৭ এবং ৩৯৪ ধারায় (মারধর করে ডাকাতি) অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে।

ঠিক কী ঘটেছিল ওই রাতে?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দিন ধরে রাতে দাশনগরের সিটিআই ও দাশনগর থানার মাঝে কাশীপুর স্নানের ঘাট এলাকার মোড়ে জোর করে লরি থামিয়ে তোলাবাজি করছিল একদল স্থানীয় যুবক। এলাকার লোকজন এ সব ঘটনা জানলেও প্রতিবাদ করতে পারেননি। কারণ যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা এলাকার পরিচিত তৃণমূলকর্মী এবং এক তৃণমূল কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। পুলিশের সঙ্গেও তাদের খুব মাখামাখি বলে অভিযোগ।

অভিযোগ, ঘটনার রাতে কাশীপুর স্নানঘাটের মোড়ে দাঁড়িয়ে হাওড়ার দিক থেকে আসা বিভিন্ন পণ্য ও লোহা বোঝাই লরি থেকে জোর করে টাকা তুলছিল ওই যুবকেরা। মারধরের ভয়ে অধিকাংশ চালক টাকা-পয়সা দিয়ে দিলেও শেষ পর্যন্ত বেঁকে বসেন আলু বোঝাই একটি লরির চালক।

ওই চালকের অভিযোগ, একেই আলুর দাম অনেক বেড়ে গিয়েছে, তার উপরে তোলাবাজেরা লরি থামিয়ে তাঁর কাছে চার বস্তা আলু দাবি করে। না দিলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয় তাঁকে।

পুলিশ জানায়, ওই লরিচালক প্রথমে ভয় পেয়ে এক বস্তা আলু দিতে রাজি হয়ে যান। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট হয়নি ওই যুবকেরা। উল্টে তারা লরি থেকে জোর করে চার বস্তা আলু নামিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে দেখে ওই চালক তাঁর মোবাইল থেকে ১০০ ডায়ালে ফোন করেন। গোটা ঘটনাটি জানান পুলিশের কন্ট্রোল রুমে। এর পরেই স্থানীয় দাশনগর থানা থেকে পুলিশ গিয়ে তিন জনকে হাতেনাতে ধরে ফেলে।

কিন্তু থানার সামনে এমন ঘটনা ঘটলেও পুলিশ আগে কোনও রকম ব্যবস্থা নেয়নি কেন?

হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পরেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় থানা আগে এই ঘটনার খবর জানত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা ধৃতদের সাত দিন পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছি।” পুলিশ সব জেনেশুনেও চুপ করে ছিল না তো, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। দাশনগর থানার ওসি রঞ্জনকুমার সিংহ অবশ্য জানিয়ে দেন, “এ বিষয়ে যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই বলবেন। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা বলা নিষেধ।”

debashis das money extortion in front of police station arrest southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy