ক্ষমতায় আসার পরে এখনও বছর পেরোয়নি। তার আগেই হাওড়ার দুই মেয়র পারিষদের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হল দু’টি গুরুত্বপূর্ণ দফতর। সরকারি তরফে বলা হয়েছে, দু’টি দফতরের কাজে অগ্রগতি ঠিক মতো হচ্ছিল না। তাই কাজে গতি আনতেই মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু দলের অন্দরের খবর, ওই দু’জনের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ পৌঁছে গিয়েছিল খাস নবান্নেও। তাই তড়িঘড়ি সরানো হল হাওড়া পুরসভার বিল্ডিং দফতরের মেয়র পারিষদ বাণী সিংহরায় ও রাস্তা দফতরের মেয়র পারিষদ বিভাস হাজরাকে। দফতর দু’টির দায়িত্ব এখন থাকবে মেয়রের হাতে।
যদিও বাণীবাবু বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সর্বোচ্চ নেত্রী। তিনি আমার হাত থেকে দফতরের দায়িত্ব মেয়রের হাতে দিয়েছেন। এতে যদি কাজে গতি আসে, তাতে হাওড়ারই উন্নতি হবে।” অন্য দিকে বিভাসবাবুর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী যদি চান এই দফতরের দায়িত্ব মেয়র সামলাবেন, তাতে আমার বলার কিছু নেই। আমার মনে হয় আমি নিয়ম মেনেই কাজ করেছি।”
তৃণমূলের দলীয় সূত্রে খবর, বেশ কয়েক দিন ধরেই এই দু’টি দফতরের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ আসছিল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। এর মধ্যেই দিন কয়েক আগে উত্তর হাওড়ার এক ব্যক্তি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগে জানান, একটি রাস্তা তৈরি করার জন্য বাণীবাবু তাঁর কাছ থেকে ১ কোটি টাকা চেয়েছেন। মনোরঞ্জন বণিক মজুমদার নামের এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, উত্তর হাওড়ায় তাঁর ৫০ কাঠা একটি জমি রয়েছে। প্রোমোটিংয়ের জন্য তিনি জমিটি অমরচাঁদ দুগার নামে এক ব্যক্তিকে দেন। কিন্তু ওই জমিতে ঢোকার জন্য কোনও রাস্তা না থাকায় সরকারি জমির উপরে ব্যক্তিগত রাস্তা তৈরি করতে বাণীবাবুুর কাছে অনুমতি চান অমরবাবু। ওই ব্যক্তির অভিযোগ, বাণীবাবু তাঁকে রাত ১০টা নাগাদ নিজের বাড়িতে ডেকে জানান, সরকারি জমিতে রাস্তা তৈরি করার অনুমতি তিনি দিতে পারেন। পরিবর্তে বাণীবাবু তাঁর কাছে ১ কোটি টাকা চান বলে জানান ওই ব্যক্তি।
যদিও বাণীবাবু বলেন, “আমার বিরুদ্ধে টাকা চাওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। যে রাস্তা ওই ব্যক্তি করে দিতে বলেছিলেন, তা আমার এক্তিয়ারের মধ্যেই পড়ে না। আমি ওঁকে তা জানিয়ে দিয়েছিলাম। ওই কাজ তো পূর্ত দফতরের।”
পাশাপাশি মেয়রের কাছে বাণীবাবুর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি লিখিত অভিযোগও জমা পড়েছিল বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। বিল্ডিং দফতর থেকে পরিমাণের তুলনায় কম রাজস্ব ওঠা, বাড়ির নকশার অনুমোদন নিয়ে সাধারণ মানুষের চূড়ান্ত হয়রানি প্রভৃতি অভিযোগ আসছিল বলে পুরসভা সূত্রে খবর। তবে বাণীবাবুর দাবি, গত কয়েক মাসে তিনি বিল্ডিং দফতরে অনেক বেশি রাজস্ব আদায় করেছেন। অর্থবর্ষ শেষ হতে এখনও ন’মাস বাকি। তাতে পুরসভার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যেত বলেই দাবি তাঁর।
অন্য দিকে সড়ক দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ বিভাসবাবুও নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গত কয়েক মাস ধরে হাওড়া জুড়ে চলছে রাস্তা তৈরির কাজ। অভিযোগ, সেই সমস্ত কাজ টেন্ডার না ডেকেই বিভিন্ন ঠিকাদারকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তৃণমূলের দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সরাসরি এই সব অভিযোগ যাওয়ার পরে গত বৃহস্পতিবার মেয়র রথীন চক্রবর্তীকে ডেকে পাঠান তিনি। বিল্ডিং ও সড়ক এই দুই দফতরের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে মেয়রের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পরেই তিনি মেয়রকে নির্দেশ দেন, দুই মেয়র পারিষদের হাত থেকে দফতর দু’টি নিয়ে মেয়রের নিজের হাতে রাখতে।
শনিবার এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, “দু’টি দফতরের কাজে আরও গতি আনতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তাই দফতর দু’টি আমাকেই সামলাতে বলেছেন।” কিন্তু ওই দুই দফতরের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি মেয়র।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হাওড়া জেলার (শহর) তৃণমূলের সভাপতি তথা রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতরের মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “এটা একটি দলীয় সিদ্ধান্ত। দলই তাঁদের ওই দফতরের দায়িত্ব দিয়েছিল। দল মনে করেছে ওই দফতরের কাজে অগ্রগতি দরকার, তাই সরানো হয়েছে। এর থেকে বেশি কিছু বলার নেই।”
জল বাড়ছে হুগলির ব্লকগুলিতে
নিজস্ব প্রতিবেদন
এক টানা বৃষ্টির জেরে হুগলির কয়েকটি ব্লকে ইতিমধ্যেই চাষের জমিতে জল ঢুকে ফসলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, খানাকুলের মুণ্ডেশ্বরী নদী লাগায়ো গ্রামগুলির নীচু এলাকায় ইতিমধ্যে জল উঠতে শুরু করেছে। নদী লাগোয়া গ্রামগুলিতে সর্তকতা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। ডিভিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার ভোর রাতে ডিভিসির বর্ধমানের দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে ৭২ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই হুগলির হরিপালের ডাকাতিয়া খাল উপচে সেখানকার বেশ কয়েকটি মৌজায় কৃষিজমিতে জল উঠে গিয়েছে। একটি জায়গায় বাঁধ ভেঙে গ্রামে জল ঢুকেছে। স্থানীয় বিধায়ক তথা কৃষিপ্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, “হাওড়ায় ডাকাতিয়া খালটি খননের কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। আমরা সেচ দফতরে চিঠি দিয়েছি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy