হাওড়া জেলায় ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে মজুরি দেওয়ার ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক ফান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ইএফএমএস) চালু বাধ্যতামূলক করা হল। চলতি মাস থেকেই তা চালু হওয়ার কথা।
১০০ দিনের প্রকল্পে এতদিন পর্যন্ত যে পদ্ধতিতে জবকার্ডধারীদের টাকা দেওয়া হত তা হল তাঁদের ব্যাঙ্ক, ডাকঘর এবং সমবায় সমিতিতে নিজস্ব অ্যাকাউন্ট থাকতে হত। কাজ হয়ে গেলে জবকার্ডধারীদের মজুরি হিসাব করে তার পুরো তথ্য গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে বিডিও-র কাছে জমা দেওয়া হত। সেই হিসাব অনুযায়ী বিডিও পঞ্চায়েতের নামে চেক কেটে দিতেন। সেই চেক ভাঙিয়ে টাকা তুলে পঞ্চায়েতগুলি যে সব ব্যাঙ্ক, ডাকঘর এবং সমবায় সমিতিতে জবকার্ডধারীদের অ্যাকাউন্ট রয়েছে সেখানে টাকা জমা দিত। সেই অ্যাকাউন্ট থেকে জবকার্ডধারীরা তাঁদের মজুরি তুলে নিতেন। ১ জুলাই থেকে এই প্রথা রদ করা হয়েছে। তার পরিবর্তে বদলে চালু হয়েছে ইএফএমএস।
নতুন ব্যবস্থায় যা হবে তা হল, যে সব জবকার্ডধারী ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করবেন তাঁদের মজুরি হিসাব করে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্তারা কম্পিউটারে নথিভুক্ত করবেন। সেই তথ্য সরাসরি নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে চলে যাবে ১০০ দিনের প্রকল্পের রাজ্য সেলে। তথ্য পাওয়ার পরে রাজ্য সেল সরাসরি বিভিন্ন ব্যাঙ্কে জবকার্ডধারীদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেবে।
কেন্দ্রীয় সরকার বছর দুই আগেই রাজ্যগুলিকে ইএফএমএস পদ্ধতি চালু করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল। এই পদ্ধতির সুবিধা হল, এতে মজুরি দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি অনেক কমবে। কাজেও গতি আসবে। পুরনো পদ্ধতিতে কোনও ব্লকে যদি টাকা বরাদ্দ না করা হয় তা হলে মজুরি পেতে দেরি হয়। কিন্তু নতুন পদ্ধতিতে মজুরদের হাতে সরাসরি টাকা আসবে রাজ্য সেল থেকে। ফলে টাকার জন্য বিডিও-র কাছে বা জেলা প্রশাসনের কাছে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে হাপিত্যেশ করে বসে থাকতে হবে না। যে গ্রাম পঞ্চায়েত যত দ্রুত কাজ করবে তাদের এলাকার জবকার্ডধারীদের হাতে তত দ্রুত রাজ্য সেল থেকে টাকা পৌঁছে যাবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের ক্রমাগত তাগাদায় হাওড়া জেলার ১৫৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ইএফএমএস ব্যবস্থা চালু করার কথা ছিল। কিন্তু সেই সময়সীমা মানেনি কোনও গ্রাম পঞ্চায়েত। শেষ পর্যন্ত গত ১৯ জুন শরৎসদনে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক প্রশাসন এবং জেলা প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের রাজ্য ও জেলা সেলের কর্তারা। তাঁরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ইএফএমএস চালু না করলে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে এই প্রকল্পে আর টাকা দেওয়া যাবে না। চাপে পড়ে ওই দিনই জেলার ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত ইএফএমএস পদ্ধতি চালু করে দেয়।
১০০ দিনের প্রকল্পের হাওড়া জেলা সেলের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার ফলে অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত এই পদ্ধতি চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে। তাঁর কথায়, এটা রাজ্য বা জেলার ব্যাপার নয়, কেন্দ্রীয় সরকারই জানিয়েছে ইএফএমএস চালু না হলে কোনও গ্রাম পঞ্চায়েতকে আর ১০০ দিনের প্রকল্পে টাকা দেওয়া হবে না। ফলে নিজের তাগিদেই গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে নতুন পদ্ধতি চালু করতে হবে। ইএফএমএস পদ্ধতিতে সমবায় সমিতিতে জবকার্ডধারীদের কোনও অ্যাকাউন্ট রাখা যাবে না বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেবলমাত্র সিবিএস চালু আছে এ রকম ব্যাঙ্কেই জবকার্ডধারীদের অ্যাকাউন্ট রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে ডাকঘরগুলিতে সিবিএস চালু না-হলেও সেখান থেকে অ্যাকাউন্ট সরানোর নির্দেশ গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে দেওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রশ্ন তুলেছেন, সিবিএস চালু না-থাকায় ডাকঘরে যে সব জবর্কাডধারীর অ্যাকাউন্ট আছে তাঁদের কী ভাবে মজুরি দেওয়া হবে?
১০০ দিনের প্রকল্পের হাওড়া জেলা সেলের এক পদস্থ কর্তা জানান, এই সমস্যার সমাধানে জেলা ডাকঘরের পদস্থ কর্তা এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানদের নিয়ে ইতিমধ্যেই বৈঠক হয়েছে। সেখানে ডাকঘর কর্তারা দ্রুত গ্রামীণ ডাকঘরগুলিতে জবকার্ডধারীদের অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy