জল সঙ্কট আর মিটছে না পাঁচলার বাসিন্দাদের। প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করে চার বছর আগে জলপ্রকল্প চালু হওয়ার পরে তাঁরা ভেবেছিলেন সমস্যা মিটবে। কিন্তু তা হয়নি। তাঁদের অভিযোগ, এখনও ওই প্রকল্প থেকে কার্যত কোনও পরিষেবাই মিলছে না। কারণ, ওই জল পানের অযোগ্য। সর্বত্র সেই জল সমান ভাবে যায় না।
জলপ্রকল্পটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কে নেবে তা নিয়েও পাঁচলা পঞ্চায়েত সমিতি এবং কেএমডিএ-এর মধ্যে কাজিয়া বেঁধেছে। কেএমডিএ-এর বক্তব্য, তারা জলপ্রকল্পটি তৈরি করে দিয়েছে। কিন্তু এটি চালানো এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পঞ্চায়েত সমিতির। পঞ্চায়েত সমিতির পাল্টা বক্তব্য, প্রকল্পটি অসম্পূর্ণ। যে সব কাজ বাকি আছে তা কী ভাবে সম্পূর্ণ হবে তার ফয়সালা না-হওয়া পর্যন্ত তারা প্রকল্পটির দায়িত্ব নিতে পারবে না।
পাঁচলার যে জায়গায় জলপ্রকল্পটি গড়ে উঠেছে, এর আগেও সাতের দশকের গোড়ায় সেখানেই একটি জলপ্রকল্প তৈরি করেছিল কেএমডিএ। বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহের জন্য পাইপলাইন পাতা হয়েছিল। কিন্তু পাম্প হাউসটি যে দিন পরীক্ষামূলক ভাবে চালানো হয়, সেই দিনই কয়েকটি জায়গায় পাইপলাইন ফেটে যায়। সেগুলি আর মেরামত করা হয়নি। প্রকল্পটি বাতিল করে দেওয়া হয়। একই জমিতে ফের নতুন করে জলপ্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা করে কেএমডিএ। ২০০৯ সালে এটি তৈরির কাজ শুরু হয়। বরাদ্দ হয় দেড় কোটি টাকা। কথা ছিল এই প্রকল্পের মাধ্যমে পাঁচলা এবং চড়া পাঁচলা এই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় জল দেওয়া হবে। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে প্রকল্পটি চালু করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহ করার পরিবর্তে রাস্তার ধারের স্ট্যান্ড পোস্ট থেকেই জল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কেএমডিএ। মোট ৬০টি স্ট্যান্ড পোস্ট বসানো হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটি থেকে দিনে তিন বার করে জল দেওয়া হয়। বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহের ব্যবস্থা এখনও হয়নি।
কিন্তু প্রকল্পটি চালুর দিন থেকেই গ্রামবাসীরা পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ করতে শুরু করেন। তাঁদের বক্তব্য, জলের মান নিম্ন। দিনে তিন বার করে জল দেওয়ার কথা থাকলেও বেশির ভাগ সময়েই সেই নিয়ম মানা হয় না। বহু জায়গায় জলের পাইপলাইন ফেটে গিয়েছে। স্ট্যান্ড পোস্ট থেকে ঝিরঝির করে জল পড়ে। জলে নিয়মিত ক্লোরিন মেশানো হয় না বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীর বক্তব্য, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই প্রকল্পটির এই হাল।
এই প্রশ্নটিকে নিয়েই বিবাদ বেঁধেছে পঞ্চায়েত সমিতি এবং কেএমডিএ-এর মধ্যে। কেএমডিএ-এর বক্তব্য: প্রকল্পটি তৈরি করে দেওয়ার দায়িত্ব তাদের হাতে থাকলেও এটি চালানো এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজটি করতে হবে পঞ্চায়েত সমিতিকেই। কিন্তু পঞ্চায়েত সমিতি এই দায়িত্ব না-নেওয়ায় কেএমডিএ-এর হাতেই এখনও রয়েছে প্রকল্পটি। টাকার অভাবেই প্রকল্পটির রক্ষণাবেক্ষণ করা যাচ্ছে না বলে কেএমডিএ-এর এক পদস্থ আধিকারিক জানান।
অন্য দিকে, পাঁচলা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেখ আবদুল জলিল বলেন, “কেএমডিএ প্রকল্পটির দায়িত্ব আমাদের নিতে বললেও এই মুহূর্তে তা করা সম্ভব নয়। বাড়ি বাড়ি জল দেওয়া হলে প্রকল্পটি থেকে আয় হত। অথচ তার জন্য পাইপলাইন কেএমডিএ পাতেনি। বাড়ি বাড়ি জল দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে সেখান থেকে যে টাকা আয় হত তা দিয়ে প্রকল্পটির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা যেত। তা ছাড়া প্রকল্পটি অসম্পূর্ণ।” সমস্যাটি নিয়ে বিভিন্ন মহলে উভয় পক্ষের একাধিক আলোচনা হলেও কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি।
পাঁচলার বিধায়ক গুলশন মল্লিক আবার এই পরিস্থিতি দেখে হতাশ। এই জায়গাতেই নতুন একটি প্রকল্প চেয়ে রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে তিনি নিজেই জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “কেএমডিএ-এর প্রকল্পটির কোনও ভবিষ্যৎ নেই বলেই মনে হচ্ছে। এই প্রকল্পটির পাশে ১০ কাঠা জমি পাওয়া গিয়েছে। সেখানেই নতুন একটি প্রকল্প তৈরি করার জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy