Advertisement
E-Paper

প্রতিবাদে মুখর শহরবাসী, সাহায্যের আশ্বাস প্রশাসনের

দুষ্কৃতীর গুলিতে নিহত ছাত্রের মৃত্যুর প্রতিবাদে মুখর হয়েছে ছাত্র সংগঠন থেকে তার স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা। চুঁচুড়ার পিরতলার বড়ুয়াবাগানের বাসিন্দা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সুদেব দাস গত রবিবার রাতে বিয়েবাড়িতে ফুলের কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছিল। সেই সময় পাড়ার এক কাকুর বাড়িতে গণ্ডগোল শুনে সেখানে গিয়ে দেখে কয়েকজন দুষ্কৃতী তাঁদের মারধর করছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০১
চুঁচুড়া শহরে প্রতিবাদ মিছিল ডিএস-র।

চুঁচুড়া শহরে প্রতিবাদ মিছিল ডিএস-র।

দুষ্কৃতীর গুলিতে নিহত ছাত্রের মৃত্যুর প্রতিবাদে মুখর হয়েছে ছাত্র সংগঠন থেকে তার স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা। চুঁচুড়ার পিরতলার বড়ুয়াবাগানের বাসিন্দা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সুদেব দাস গত রবিবার রাতে বিয়েবাড়িতে ফুলের কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছিল। সেই সময় পাড়ার এক কাকুর বাড়িতে গণ্ডগোল শুনে সেখানে গিয়ে দেখে কয়েকজন দুষ্কৃতী তাঁদের মারধর করছে। তাঁদের বাঁচাতে গেলে হামলাকারীদের ছোড়া গুলিতে নিহত হয় সুদেব। এলাকার সকলের প্রিয় হিসাবে পরিচিতি সুদেবের মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমেছে। শোকের ছায়া নামে তার স্কুলেও। ছাত্রের এ হেন মৃত্যুতে মঙ্গলবার সেখানে ছুটি ঘোষণা করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। এলাকায় দুষ্কৃতী তাণ্ডব বেড়ে যাওয়ার প্রতিবাদে সরব এলাকাবাসী থেকে ছাত্র সংগঠনগুলি। দুষ্কৃতীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার সকালে ডিএসও ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা চুঁচুড়ার ঘড়ির মোড় থেকে প্রতিবাদ মিছিল করেন। বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে তাঁরা চুঁচুড়া থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান এবং দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে স্মারকলিপি দেন। এ দিন সকালে পিরতলায় সুদেবের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাবা স্বপনবাবু এবং মা শোভাদেবীকে নিয়ে খাটে বসে রয়েছেন সুদেবের দাদা জয়দেববাবু। খবর শুনে এদিন নিহত সুদেবের বাড়িতে আসেন জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের শ্রম দফতরের পরিষদীয় সচিব তপন দাশগুপ্ত, চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার। এসেছিলেন সুদেবের স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

বড়ুয়াবাগানের গলি পেরিয়ে দরমার ছোট্ট এক চিলতে ঘরে ঢোকামাত্রই সদ্য সন্তানহারা মা-বাবার হাতজোড় করে কাতর আবেদন, ‘ আমাদের মতো আর কোনও মা-বাবার কোল যেন ফাঁকা না হয়। যারা এই কাজ ঘটাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আপনারা রুখে দাড়ান’। তপনবাবু সুদেবের মায়ের হাতে কিছু আর্থিক সাহায্য তুলে দেন। এ ছাড়া পরিবারটির আর্থির দূরবস্থার জন্য এখন থেকে প্রতিমাসে তাঁদের ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। সেইসঙ্গে সুদেবের দাদা জয়দেব দাসের চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ারও আশ্বাস দেন। এ সবের মধ্যেই সুদেবের বাড়িতে হাজির হন তার স্কুল ঘুটিয়াবাজার মল্লিকবাটী পাঠশালা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক-সহ সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকারা। সুদেবের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করে শোনানো হয় তার শোকাহত বাবা, মা এবং পরিবারের সদস্যদের। এরপর শিক্ষকদের তরফেও কিছু আর্থিক সাহায্য তুলে দেওয়া হয় সুদেবের মায়ের হাতে। তপনবাবুকে সামনে পেয়ে শিক্ষকরা তাঁকে অনুরোধ করেন, ওই এলাকায় দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে পুলিশকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলার পাশাপাশি সুদেবের আততায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি যাতে হয় সেদিকেও যেন উদ্যোগী হন। তপনবাবু বলেন, “দুষ্কৃতীদের গুলিতে একজন ছাত্রের মৃত্যু খুবই বেদনাদায়ক। আমরা চাই সুদেবের আততায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি হোক। সুদেবের পরিবারে আর্থিক অসুবিধা যাতে না হয় সেদিকে আমরা নজর রাখছি।”

নিহত ছাত্রের বাড়িতে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

প্রধান শিক্ষক শুখেন্দু পান বলেন, “সুদেবের স্মৃতিতে আজ, মঙ্গলবার স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। এত দারিদ্রের মধ্যেও পড়াশোনার প্রতি ওর আগ্রহ কেন ছিল, আজ ওর বাড়িতে এসে তা বুঝতে পারলাম। বাড়ির দুঃখ-কষ্ট ও কখনও কাউকে জানাত না। সদ্য টেস্ট পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু সুদেবের পরীক্ষার খাতাগুলো স্কুলের স্মৃতি হয়ে থাকবে। কারণ প্রতিবাদ করতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের গুলিতে আমাদের স্কুলের এক ছাত্রকে জীবন দিতে হল।”

ইতিহাসের শিক্ষক মানিক বাউরী বলেন, “দ্বাদশ শ্রেণির টেস্ট পরীক্ষার ইতিহাসের খাতা দেখতে দেখতে সুদেবের খাতাটা পেয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। ওর প্রাপ্ত নম্বর আর দেখতে পাবে না ছেলেটা। ওর খাতাটাই এখন আমাদের কাছে স্মৃতি। তবে প্রতিবাদ যে মানুষের প্রাণ কেরে নেয় তা ফের ওর মধ্যে দিয়ে প্রমাণ হল।”

সুদেব খুনের ঘটনায় গ্রেফতার অভিজিৎ বসু, শোনু হরিজন এবং দোলন মন্ডলের বিরুদ্ধে খুন এবং অস্ত্র রাখার মামলা শুরু হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দোলনের বিরুদ্ধে নদিয়ার চাকদহ থানায় চারটে খুনের মামলা রয়েছে। বাকি দু’জনের বিরুদ্ধে এখনও কোনও অসামাজিক কার্যকলাপের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে খুনের কারণ জানতে ধৃতদের জেরা করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে এরা অস্ত্র কোথা থেকে জোগাড় করেছে সেদিকটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর তথাগত বসু। যদিও সনু জেরায় জানিয়েছে, সুদেবের পড়শিকে ধমকানোর জন্যই অভিজিৎ ও দোলনকে নিয়ে এসেছিলাম।

ছবি: তাপস ঘোষ।

chinsura pirtala sudeb das murder southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy