Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বিডিও-সভাপতি কাজিয়ায় টাকা পড়ে

বিডিও-র সঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির কাজিয়া। আর তার জেরে এলাকার উন্নয়নের কাজ কার্যত স্তব্ধ হাওড়ার জগত্‌বল্লভপুর ব্লকে। খরচ না হওয়ায় চলতি অর্থবর্ষে এখনও পর্যন্ত ৩০ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে মাসের পর মাস। পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ গ্রামবাসী।

নুরুল আবসার
জগৎবল্লভপুর শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৪ ০১:১৬
Share: Save:

বিডিও-র সঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির কাজিয়া। আর তার জেরে এলাকার উন্নয়নের কাজ কার্যত স্তব্ধ হাওড়ার জগত্‌বল্লভপুর ব্লকে। খরচ না হওয়ায় চলতি অর্থবর্ষে এখনও পর্যন্ত ৩০ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে মাসের পর মাস। পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ গ্রামবাসী। রাজ্য জুড়ে উন্নয়নের বন্যা বইছে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যেরা যখন দাবি করছেন, তখন তৃণমূল পরিচালিত এই পঞ্চায়েত সমিতিতে কাজ স্তব্ধ হয়ে যাওয়ায় গত ২৬ জুন জেলাশাসক চিঠি লিখে সভাপতিকে সাফ জানিয়ে দেন, বরাদ্দ টাকার অন্তত ৬০ শতাংশ খরচ করতে না পারলে সব টাকা ফেরত নেওয়া হবে। তাতে কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত জেলাশাসক, সভাধিপতি, সহ-সভাধিপতি, অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) সোমবার জগত্‌বল্লভপুরে যান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে। ব্লক এবং পঞ্চায়েত সমিতির কর্তাদের জেলাশাসক কড়া ভাষায় বকেয়া কাজ এক সপ্তাহের মধ্যে শুরু করার নির্দেশ দেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর।

জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস এ দিন বৈঠক নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। সমিতির সভাপতির সঙ্গে বিডিও-র সমন্বয় না হওয়ার ফলেই যে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে তা নজরে এসেছে বলে তিনি জেলা প্রশাসন এবং জেলা পরিষদের কর্তারা জানান। বহু নির্মাণ সহায়ক ও ব্লক প্রশাসনের অফিসারদের ধমক দেন জেলাশাসক। জেলা পরিষদ সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, “কাজ শুধু ঠিকঠাক শুরু করাই নয়, তা নিয়মিত চলছে কিনা সে বিষয়টি জেলা প্রশাসন এবং জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে নিয়মিত পর্যালোচনা করা হবে। প্রয়োজন পড় একই ভাবে ফের আমরা ব্লক অফিসে আসব।”

উন্নয়নের গতিকে সচল রাখতে বিভিন্ন জেলায় নিয়মিত সফর করছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে উন্নয়ন সংক্রান্ত বৈঠক করছেন। বকেয়া কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতির পদাধিকারী এবং ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের নির্দেশ দিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের তালিকা থেকে বাদ যায়নি হাওড়া জেলাও। কিন্তু তাঁর এই উদ্যোগের প্রতিফলন জগত্‌বল্লভপুরে কেন দেখা যায়নি?

ব্লক সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেখ ইব্রাহিম এবং বিডিও তাপসকুমার মোহান্তির মধ্যে বনিবনা না-হওয়ার জন্যই অচলাবস্থা। বিডিও চাইছেন সব কাজ আইন-নিয়ম মেনে করতে। কিন্তু প্রয়োজনীয় নথি জোগান দিতে পারছেন না পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারা। পক্ষান্তরে, সমিতির দাবি, নথিপত্র ঠিকমতো জোগান দেওয়ার কাজটি করার কথা ব্লক অফিসের অফিসার-কর্মীদেরই। এই টানাপড়েনেই বনিবনার অভাব দেখা দিয়েছে সভাপতি এবং বিডিও-র মধ্যে। গত জুলাই মাসেই টেন্ডার খোলাকে কেন্দ্র করে বিডিও র সঙ্গে তুমুল বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন সমিতির সভাপতি। বিডিও নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেখ ইব্রাহিম বলেন, ‘‘বিভিন্ন খুঁটিনাটি অবান্তর প্রশ্ন তুলে বিডিও কাজ করতে দিচ্ছেন না। ছ’বার চিঠি লিখে বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী-সহ রাজ্য ও জেলা প্রশাসনে জানিয়েছি। সোমবার জেলাশাসককেও জানিয়েছে।” তাঁর নমে ওঠা অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি বিডিও। তিনি বলেন, “জেলাশাসক সুনির্দিষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন। তা পালিত হবে।”

এ দিন জেলা প্রশাসনের কর্তারা বকেয়া কাজের পরিমাণ দেখে তাজ্জব বনে গিয়েছেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি অর্থবর্ষে ১৮৮ জনকে গীতাঞ্জলি প্রকল্পের উপভোক্তা হিসেবে নির্বাচন করা হয়। কিন্তু তাঁদের একটি টাকাও দেওয়া হয়নি। ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে ফের ১৬০০ জনের নাম পাঠাতে বলা হয়। তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে জমির দলিলের নকল-সহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র বিডিও-র কাছে জমা দেন প্রাপকেরা। কিন্তু তাঁরা একটি টাকাও পাননি। ১৬ জন গরিব সংখ্যালঘু বিধবা মহিলাকে বিতরণ করার জন্য ১৬ লক্ষ টাকা এসে পড়ে রয়েছে। তা-ও ওই মহিলারা হাতে পাননি। এ ছাড়া, বিভিন্ন খাতে খরচ না হওয়া টাকাও পড়ে সেই ২০১২-১৩ অর্থবর্ষ থেকে। তাও প্রকল্পগুলিতে টাকা বরাদ্দ হয়। লোকসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত সামান্য কিছু কাজ হলেও নির্বাচন পর্ব মিটে যাওয়ার পর কেটে গিয়েছে পাঁচ মাস। একটি টাকাও খরচ হয়নি। ওই অর্থবর্ষেই ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে হাজার উপভোক্তার দ্বিতীয় কিস্তির টাকা বাকি। ৪৭ জন প্রাপকের গীতাঞ্জলি প্রকল্পে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা বাকি। সংখ্যালঘু এলাকায় ৩৭টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র নির্মাণের টাকা এসে পড়ে। ৪০টি অতিরিক্ত স্কুলবাড়ি তৈরির টাকা কাজে লাগেনি। ৬৯২টি ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পের প্রাপকদের প্রথম কিস্তির টাকা বকেয়া। গীতাঞ্জলি প্রকল্পের ৬৬ জন প্রাপকের প্রথম কিস্তির টাকা বকেয়া। সব মিলিয়ে খরচ না হওয়া টাকার পরিমাণ অন্তত ৩০ কোটি।

জেলা প্রশাসনের কর্তারা এ দিন ব্লকে আসায় ফের নতুন করে আশার আলো দেখছেন গ্রামবাসীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jagatballavpur nurul absar fund BDO
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE