Advertisement
E-Paper

বৃদ্ধা গ্রাহককে হেনস্থা, ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে গ্রেফতারের নির্দেশ ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের

যা প্রাপ্য, তার চেয়ে বেশিই পেনশন পাচ্ছিলেন বৃদ্ধা। তিনি যেমন তা জানতেন না, তেমনই তাঁকে বেশি পেনশন দেওয়ার বিষয়টিও নজর এড়িয়ে গিয়েছিল ব্যাঙ্কের। শেষ পর্যন্ত যখন তা ব্যাঙ্কের নজরে এল, দেখা গেল বৃদ্ধাকে দেওয়া বাড়তি অঙ্কের পরিমাণ ২ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা। বাড়তি টাকা ফেরতের জন্য বৃদ্ধার শেষ সম্বল আড়াই লক্ষ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙিয়ে ওই বাড়তি টাকা উসুল করে ব্যাঙ্ক। বৃদ্ধা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে গেলে তাঁকে হেনস্থার দায়ে হাওড়া জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত ওই ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে এবং মামলার খরচ বাবদ আরও ১০ হাজার টাকা ওই বৃদ্ধাকে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪১

যা প্রাপ্য, তার চেয়ে বেশিই পেনশন পাচ্ছিলেন বৃদ্ধা। তিনি যেমন তা জানতেন না, তেমনই তাঁকে বেশি পেনশন দেওয়ার বিষয়টিও নজর এড়িয়ে গিয়েছিল ব্যাঙ্কের। শেষ পর্যন্ত যখন তা ব্যাঙ্কের নজরে এল, দেখা গেল বৃদ্ধাকে দেওয়া বাড়তি অঙ্কের পরিমাণ ২ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা। বাড়তি টাকা ফেরতের জন্য বৃদ্ধার শেষ সম্বল আড়াই লক্ষ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙিয়ে ওই বাড়তি টাকা উসুল করে ব্যাঙ্ক। বৃদ্ধা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে গেলে তাঁকে হেনস্থার দায়ে হাওড়া জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত ওই ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে এবং মামলার খরচ বাবদ আরও ১০ হাজার টাকা ওই বৃদ্ধাকে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু আদালতের রায় না মানায় ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। ২ সেপ্টেম্বর ওই পরোয়ানা শিবপুর থানায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ ও ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, রমলা দাস নামে ওই বৃদ্ধা সাঁতরাগাছির বাসিন্দা। তাঁর স্বামী সাঁতরাগাছি সরকারি প্রেসে চাকরি করতেন। স্বামীর মৃত্যুর পর ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর থেকে পেনশন পেতে শুরু করেন রমলাদেবী। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের রামরাজাতলা শাখা থেকে তাঁকে পেনশন দেওয়া হত। বছর চারেক বাদে হঠাত্‌ই রমলাদেবীকে জানানো হয়, পেনশন বাবদ ইতিমধ্যেই তাঁকে ২ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা বেশি দেওয়া হয়ে গিয়েছে। তা ফেরত দিতে হবে। রমলাদেবী বলেন, “আমি সেই সময় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম যে এর জন্য তো তাঁরাই দায়ী।” তাঁর অভিযোগ, এর পর ব্যাঙ্ক ম্যানেজার তাঁকে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য নিয়মিত চাপ দিতে থাকেন। রমলাদেবীর দাবি, “ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে আমি জানাই, যদি বাড়তি পেনশন দেওয়া হয়ে থাকে তবে সেই টাকা কিস্তিতে পেনশন থেকে কেটে নেওয়া হোক।” তাঁর অভিযোগ, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তা না শুনে ব্যাঙ্কে তাঁর নামে থাকা আড়াই লক্ষ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট থেকে ওই টাকা কেটে নেবে বলে চাপ দিতে থাকে।

রমলাদেবীর অভিযোগ, “২০১২ সালের ৪ জুন হঠাত্‌ই কয়েকজন আধিকারিককে নিয়ে বাড়িতে হাজির হন ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। আমাকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে একটি সাদা কাগজে সই করিয়ে নেন তাঁরা। তার পরে তাতে লিখে নেওয়া হয় ব্যাঙ্কে আমার যে আড়াই লক্ষ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে সেখান থেকেই বাড়তি পাওনা উসুল করা হবে।” এর পর ২০১৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন রমলাদেবী। ওই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। ১০ হাজার টাকা মামলার খরচ হিসাবে ধার্য করে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে আদালত নির্দেশ দেয় ওই টাকা যেন ম্যানেজারের বেতন থেকে কেটে নিয়ে রমলাদেবীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।

ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রাজ্য ফোরামে আবেদন করে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়সীমা না মানায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষর সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়। রাজ্য ফোরাম গত ১৩ অগস্ট জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতকে চিঠি দিয়ে তা জানিয়ে দেয়। এর পরে ২ সেপ্টেম্বর জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত রায় না মানার জন্য ম্যানেজারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। আদালতে হাজির হয়ে ওই ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে বিচারকদের সামনে বলতে হবে কবে তিনি জরিমানা এবং মামলার খরচ দেবেন।

অজয় আড়ি নামে ওই ব্যাঙ্ক ম্যানেজার পরে হাওড়ারই চ্যাটার্জিহাট শাখায় বদলি হয়ে যান। সম্প্রতি তিনি অবসর নিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আইন মেনে সরকারি টাকা আদায় করার জন্য যা করার করেছি।” আদালতের রায় প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “আমার আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করব।”

রমলাদেবীর হয়ে মামলার তদারকি করতে থাকা মেয়ে শর্মিলা দাস বলেন, “ আমার মায়ের সঙ্গে ব্যাঙ্ক যে আচরণ করেছে তা অমানবিক। আদালতের রায়ে আমরা খুশি।”

aged client bank manager arrest consumer forum order nurul absar howrah southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy