জৈব পদ্ধতিতে শীতের সব্জি চাষ। বাগনানের গোপালপুরে।—নিজস্ব চিত্র।
চার বছর আগে হাওড়ার বাগনানের গোপালপুর গ্রামকে বেছে নিয়ে সেখানে জৈব সারে সব্জি চাষ করার জন্য চাষিদের উৎসাহিত করেছিল কৃষি দফতর। কিন্তু উৎপাদিত সব্জির বিপণনের কোনও ব্যবস্থা হয়নি। ফলে, তিন বছর ধরে উৎপাদিত সব্জির দাম সে ভাবে না মেলায় জৈব সারে চাষে উৎসাহ হারাচ্ছেন চাষিরা। অনেকেই ফের রাসায়নিক সারের দিকেই ঝুঁকছেন।
সব্জির গুণমান বজায় রাখার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চাষিদের জৈব সারে চাষে উৎসাহিত করতে নানা প্রশিক্ষণ শিবির আয়োজন করে কৃষি দফতর। সরকারি উদ্যোগে চাষিদের সঙ্গে খেতে নেমে হাতে-কলমে সার প্রয়োগের পাঠও দেন কৃষি বিশেষজ্ঞেরা। কিন্তু গোপালপুরের চাষিরা বলছেন, ওই সারে চাষ করলে সব্জির মান ভাল হয় ঠিকই, কিন্তু খরচ বেশি পড়ে। সরকারি উদ্যোগে সেই সব্জি কেনার ব্যবস্থা হয় না। নিজেদের উদ্যোগেও তাঁরা যে কলকাতার বড় সংস্থা বা বিপণিতে সেই সব্জি বিক্রি করবেন, তা-ও অনেক সময়েই সম্ভব হয় না। কেননা, এ জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া সব্জির গুণমানের শংসাপত্র দেখাতে হয়। কিন্তু সেই শংসাপত্র রাজ্য থেকে মেলে না।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ রাজ্যে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি দফতর অনুমোদিত জৈব সারে উৎপাদিত ফসলের গুণমান পরীক্ষা করে টালিগঞ্জের একটি বেসরকারি সংস্থা। কিন্তু শংসাপত্র দেওয়ার এক্তিয়ার তাদের নেই। তা দিতে পারে কেন্দ্রীয় কৃষি দফতর অনুমোদিত কর্নাটক, মহারাষ্ট্রের মতো কয়েকটি রাজ্যের কিছু সংস্থা। এ জন্য চাষিদের এটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ‘ফি’ দিয়ে নিজেদের নাম ওই সংস্থাগুলির কাছে নথিভুক্ত করাতে হয়। ওই সব সংস্থার প্রতিনিধিরা নিজেরাই এসে ফসলের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায় এবং পরীক্ষা করে শংসাপত্র দেয়।
জেলা কৃষি দফতরের এক কর্তার দাবি, “সব্জি বিক্রির ব্যাপারে চাষিদেরই উদ্যোগী হতে হবে। এতে কৃষি দফতরের কিছু করার নেই।” কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “এই ধরনের কোনও সমস্যা চাষিদের হয়েছে কিনা জানা নেই। বাগনান-১ ব্লকে কিষান মান্ডি তৈরি হচ্ছে। সেখানে জৈব সারে উৎপাদিত ফসল বিপণনের কোনও ব্যবস্থা করা যায় কিনা, তা ভেবে দেখা হবে।”
জৈব সারে চাষ বাড়ানোর জন্য ২০১০ সালে হাওড়ার বাগনান, সাঁকরাইল, আমতা-সহ চারটি ব্লককে বেছে নিয়েছিল কৃষি দফতর। তার মধ্যে তিনটি ব্লকের চাষিরা সে ভাবে উৎসাহ দেখাননি। শুধু এগিয়ে এসেছিলেন বাগনান-১ ব্লকের জনা পঞ্চাশ চাষি। তাঁদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রায় দেড়শো বিঘা জমিতে জৈব সার প্রয়োগ করে ওই চাষিরা টোম্যাটো, ঢেঁড়শ, ফুলকপি, বাঁধাকপি প্রভৃতি ফলাতে থাকেন।
ওই গ্রামের চাষিরা জানান, প্রথম দিকে কলকাতার কিছু পাইকারি ব্যবসায়ী সব্জি কেনার জন্য আসতেন। কিন্তু শংসাপত্র দেখাতে না পারায় তাঁরা ফিরে যান। তখন স্থানীয় বাজারেই কম দামে সব্জি বিক্রি করে দিতে হয়। একই অবস্থা চলছে এখনও। তাঁদের অভিযোগ, সব্জির গুণমানের শংসাপত্রের জন্য কৃষি দফতরের কাছে বহুবার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি।
চাষিদের মধ্যে হারাধন বেরা, সোমনাথ বেজ-রা বলেন, “জৈব সারে চাষ করতে বিঘাপ্রতি ৯ হাজার টাকা খরচ হয়। তা বাজার থেকে কিনতে হয় বা নিজেদের তৈরি করতে হয়। অথচ, রাসায়নিক সারে চাষে এর থেকে প্রায় ২ হাজার টাকা কম খরচ হয়। কিন্তু বেশি দামের সারে চাষ করেও ফসলের উপযুক্ত দাম পাচ্ছি না। ফলে, ফের রাসায়নিক পদ্ধতিতেই চাষ করছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy