Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বেহাল রাস্তা, উদাসীন প্রশাসন

পিচের বিন্দুমাত্র অস্তিত্ব নেই, রাস্তা জুড়ে খানাখন্দ। কোথাও কোথাও আবার অনেকটা এলাকা নিয়ে গভীর গর্ত হয়ে গিয়ে ডোবার আকার নিয়েছে। মাসের পর মাস হুগলির গোঘাটের বালি পঞ্চায়েত এলাকার এই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে স্কুলের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সাইকেল, মোটরবাইক, ভ্যানরিকশা এবং রুটের সমস্ত বাসকে। অভিযোগ, রাস্তার এমন দূরবস্থা সত্ত্বেও প্রশাসনের তরফে কোনও উদ্যোগ নেই রাস্তা সারানোর।

এটাও রাস্তা! আরামবাগের কালীপুর থেকে গোঘাটের দামোদরপুর পর্যন্ত এমনই হাল। ছবি: মোহন দাস।

এটাও রাস্তা! আরামবাগের কালীপুর থেকে গোঘাটের দামোদরপুর পর্যন্ত এমনই হাল। ছবি: মোহন দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোঘাট শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:২৮
Share: Save:

পিচের বিন্দুমাত্র অস্তিত্ব নেই, রাস্তা জুড়ে খানাখন্দ। কোথাও কোথাও আবার অনেকটা এলাকা নিয়ে গভীর গর্ত হয়ে গিয়ে ডোবার আকার নিয়েছে। মাসের পর মাস হুগলির গোঘাটের বালি পঞ্চায়েত এলাকার এই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে স্কুলের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সাইকেল, মোটরবাইক, ভ্যানরিকশা এবং রুটের সমস্ত বাসকে। অভিযোগ, রাস্তার এমন দূরবস্থা সত্ত্বেও প্রশাসনের তরফে কোনও উদ্যোগ নেই রাস্তা সারানোর।

আরামবাগের কালীপুর থেকে গোঘাটের দামোদরপুর পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পের রাস্তাটি ক্রমশই বিভীষিকা হয়ে উঠেছে সকলের কাছে। মাঝে মাঝে স্থানীয়ভাবে পঞ্চায়েত সমিতি ইট-পাথর ফেলে গর্ত বোজালেও মাস খানেক পরেই ফের একই অবস্থা। খারাপ রাস্তার কারণে বাস বন্ধ হচ্ছে প্রায়ই। ঝুঁকি নিচ্ছে না অ্যাম্বুল্যান্স। প্রসূতি নিয়ে মাতৃযানকেও হাসপাতালে পৌঁছতে হচ্ছে ঘুরপথে।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর,আরামবাগের কালিপুর থেকে গোঘাটের দামোদরপুর পর্যন্ত সরু গ্রামীণ রাস্তাটি প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় নির্মাণের অনুমোদন পায় ২০০৩ সালে। রাস্তাটির জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ৪ কোটি ৬৩ লক্ষ ২১ হাজার টাকা। কাজটির ওয়ার্ক অর্ডার হয় ২০০৪ সালের ১৯ অক্টোবর। কাজ শেষ করার নির্দিষ্ট সময় ছিল ২০০৫ সালে ১৯ জুলাই। কিন্তু কাজ শেষ হয় ২০০৬ সালের ১ জুন। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, রাস্তা তৈরির পর দু’বছর যেতে না যেতেই বেশ কিছু এলাকা ভেঙেচুরে গিয়েছে। সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ এবং প্রশাসনিক মহলে দরবার করা সত্ত্বেও কোনও পদক্ষেপ হয়নি। নিয়়ম অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে রাস্তা নির্মাণের পরে নির্মাণকারী সংস্থা পরবর্তী পাঁচ বছর রক্ষণাবেক্ষণ করবে। তার পর থেকে রাজ্য সরকারের তরফে সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদের ওই সমস্ত রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা। অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই সময়মতো় মতো রাস্তা সারানো হয় না। হলেও জোড়াতালি দিয়ে কাজ সারা হয়।

জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের জন্য বরাদ্দ থেকে রাজ্য সরকারের ওই টাকা দেওয়ার কথা। সেই অর্থ প্রয়োজনের তুলনায়় কম। তাই রাস্তা সংস্কার যথা সময়ে করা যায় না। বালি পঞ্চায়়েতের তত্‌কালীন প্রধান সিপিএমের ভূমেন্দ্রমোহন রায়ের অভিযোগ, রাস্তাটি নির্মাণের ক্ষেত্রে ঠিকাদার গুণগত মান বজায় রাখছেন না বলে তখনই প্রশাসনকে জানিয়়েছিলাম। কিন্তু তাতে কোনও ফল হয়নি। রাস্তাটি দু’বছরের মাথায় ভেঙে যাওয়ার পরও প্রশাসনের সর্বস্তরে জানানো হয়েছে। এ নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু পরিস্থতি বদলায়নি। ২০১১ সাল থেকে রাস্তাটি একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়েপড়ে। নিয়ম আনুযায়ী তখন রাস্তা সংস্কারের কথা জেলা পরিষদের। কিন্তু জেলা পরিষদ এ নিয়ে একেবারেই উদাসীন। তৃণমূল পরিচালিত গোঘাট-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মৃণাল আলু বলেন, “স্থানীয় মানুষের লাগাতার অভিযোগের জেরে কয়়েকবার গোঘাট-১ পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে জোড়াতালি দেওয়া হলেও বর্তমানে রাস্তাটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার ছাড়া উপায় নেই। পঞ্চায়েত সমিতি থেকে এ জন্য ১০ কোটি ৬১ লক্ষ টাকার টাকার প্রকল্প পাঠানো হয়েছে জেলা পরিষদে। শুনছিলাম মাত্র আড়াই কোটি টাকার মতো রাস্তা সংস্কারের অনুমোদন মিলেছে।” নভেম্বরের শেষে রাস্তা সংস্কারে টেন্ডার ডাকার কথা ছিল। যদিও এখনও তা হয়নি। তাঁর অভিযোগ, ওই টাকা যদি পাওয়াও যায়, তা হলে জোড়াতালি দেওয়া ছাড়া আর কিছুই হবে না। একই বক্তব্য বালি পঞ্চায়েতের বর্তমান তৃণমূল প্রধান অশোক রায়েরওচ। তিনি বলেন, “চাওয়া হয়েছিল ১০ কোটি টাকা। পাওয়া যাচ্ছে আড়াই কোটি। এতে ১৮ কিমি রাস্তার সব গর্তও ভাল করে বোজানো যাবে না।”

অথচ স্থানীয় ভাবে রাস্তাটির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। আগে আরামবাগ থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে যাতায়াত চলত মূলত ক্ষীরপাই হয়ে। গাড়িতে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা লেগে যেত। অথচ এই রাস্তায় দামোদরপুর হয়ে যেতে মাত্র দেড় ঘণ্টা লাগে। স্বাভাবিকভাবেই রাস্তাটি সংস্কারের দাবিতে সোচ্চা দুই জেলার মানুষই। এই রুটে বর্তমানে তারকেশ্বর, আরামবাগ, হাওড়ার মধ্য়ে ২০টি বাস চলে। বাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক অভয় বিট বলেন, “রাস্তার জন্য প্রায়় প্রতিদিন বাসের যন্ত্রাংশ ভাঙছে। দুর্ঘটনা ঘটছে। বহুবার বাস বন্ধ রেখে প্রতিবাদ করেছি। প্রশাসন কথা দেয়, কিন্তু কোনও পদক্ষেপই করে না।”

রাস্তার সংস্কার নিয়ে হুগলি জেলা পরিষদের সভাধিপতি তৃণূলের মেহবুব রহমানের বক্তব্য, “শুধু এই রাস্তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার অন্তর্গত জেলার অনেক রাস্তার অবস্থা বেশ খারাপ। তার মধ্যেই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কিছু রাস্তা মেরামতের চেষ্টা চলছে। কালিপুর-দামোদরপুর রাস্তাটি সংস্কারের জন্য ২ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকার তহবিল মিলেছে। টেন্ডার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE