জেলারই চন্দননগর, রিষড়ার মতো জৌলুস না থাকলেও হুগলির খানাকুলের রাজহাটির মানুষের কাছে জগদ্ধাত্রী পুজোই বছরের প্রধান উত্সব। এলাকা জুড়ে দুই কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে পুজো সংখ্যা (একটি প্রাচীন পুজো বাদেও ১০টি ক্লাবের পুজো) তেমন আহামরি নয়। তবে পুজোকে ঘিরে এই অঞ্চলের মানুষের উন্মাদনায় পুজোর সংখ্যা যে বাড়তে চলেছে তার প্রমাণ, এ বারই পুজোর সংখ্যা একটি বেড়েছে।
মণ্ডপ, আলোয় বহু ক্ষেত্রেই এ বার চোখে পড়েছে চন্দননগরের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার চেষ্টা। গত রবিবার থেকে পুজো শুরু হয়েছে এখানে। রাজহাটির প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন পাড়িয়াল বাড়ির পুজো এবং ৫১ বছরে পা দেওয়া ‘আমরা সবাই’ ক্লাবের পুজো বাদ দিলে গত ১৫ বছরে সৃষ্টি হয়েছে রয়াল বুলেট, দিশারি, নান্দনিক, অঙ্কুর, কল্পতরু, সৃষ্টি, উদয়ন, অভিনন্দন এবং এ বছর নতুন দিগন্ত গোষ্ঠীর পুজো।
একে অন্যকে ছাপিয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে স্বাভাবিক ভাবেই ভাবেই বেড়েছে পুজোর বাজেটও। এ বার সব মিলিয়ে প্রায় আধ কোটি টাকার বাজেট। আমরা সবাই গোষ্ঠীর পুজোর বাজেট প্রায় ৮ লাখ টাকার উপর। পিতলের ত্রিশুল, ঘট, ইত্যাদি যাবতীয় পুজোর উপকরণ দিয়ে তৈরি মণ্ডপ। দিশারী গোষ্ঠীর বাজেট ৫ লক্ষ টাকা। ঝিনুক মালার মণ্ডপের পাশাপাশি আলোয় আইফেল টাওয়ার দেখা যাবে এখানে। অঙ্কুর গোষ্ঠী মণ্ডপে তুলে আনা হয়েছে এস্কিমোদের ইগ্লু (বরফের ঘর)। এরও বাজেট প্রায় ৮ লক্ষ টাকা। গ্রাম বাংলায় দৈনন্দিন ব্যবহার্য সামগ্রী চুপড়ি-কুলো ইত্যাদি দিয়ে মণ্ডপ সজিয়েছে অভিনন্দন গোষ্ঠী।
রয়াল বুলেটের মণ্ডপে বাঁশ-তালপাতা ইত্যাদির শিল্পকলা। কল্পতরু গোষ্ঠীর মণ্ডপ পোড়া মাটি এবং বাহারি খেজুর পাতার। নতুন পুজোর দিক থেকে দিগন্ত গোষ্ঠীর পুজোর বাজেটও কম নয়। আড়াই লক্ষ টাকার পুজোয় মণ্ডপ ও প্রতিমা নজর কাড়বে।
প্রায় প্রতিটি পুজো কমিটিই এ বার সামাজিক দায়িত্ব পালনের উপরে জোর দিয়েছে। কোনও মণ্ডপে পরিবেশ দূষণ, কোথাও স্বাস্থ্য, কেউ আবার ভোটার তালিকায় মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়ানো নিয়ে সচেতনায় নেমেছেন। কেউ জোর দিয়েছেন সবুজায়নে।
আরামবাগ মহকুমার এই অঞ্চলে প্রধান উত্সব হিসাবে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রসার নিয়ে দিশারীর সম্পাদক অমিত আঢ্য জানালেন, “জেলার বন্যাপ্রবণ খানাকুলে দুর্গাপুজো উপভোগ করতে না পেরেই বাসিন্দারা জগদ্ধাত্রী পুজোকে বছরের সেরা উত্সব হিসাবে বেছে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। আর তার ফলেই এখানে জগদ্ধাত্রীর রমরমা।”
বাস্ত চিত্রও এটাই যে, মহকুমার খানাকুলের দু’টি ব্লকের ২৪টি পঞ্চায়েত এলাকাই বন্যাপ্লাবিত। বন্যার সময়কাল সাধারণত অগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ। ফলে বন্যাপীড়িত মানুষ সে ভাবে দুর্গাকে বরণ করতে পারেন না। অধিকাংশ জায়গায় নমো নমো করে শেষ হয় পুজো। তাই দুর্গার আর এক রূপ জগদ্ধাত্রীতেই শারদোত্সবের আনন্দে মাতোয়ারা হন তাঁরা। পুজো উপলক্ষে থাকে মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আতস বাজির প্রদর্শনী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy