ছবি: প্রকাশ পাল।
খেলার মাঠ ঘিরে দেওয়া হয়েছে পাঁচিলে। ফলে, সেখানে বন্ধ খেলাধুলো, প্রার্তভ্রমণ বা বিকেলে বয়স্কদের গল্পগুজব। ‘ঘড়িবাড়ি মাঠ’ নামে পরিচিত শহরের ওই মাঠ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরেই আন্দোলনে নেমেছেন উত্তরপাড়ার বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ। নানা মহলে তাঁরা দরবারও করছেন। সোমবার জি টি রোড অবরোধ করে তাঁরা বিক্ষোভ দেখালেন।
শহর উত্তরপাড়ার সবচেয়ে বড় মাঠ ওই ‘ঘড়িবাড়ি মাঠ’। এক সময়ে উত্তরপাড়ার জমিদারবাড়ির সম্পত্তি ছিল মাঠটি। একটি ঘড়ির জন্য সেই জমিদারবাড়ির নাম হয়েছিল ‘ঘড়িবাড়ি’। তা থেকেই আসে মাঠের নামও। বাম আমলে সেই জমিদারবাড়ি ভেঙে আবাসন তৈরি হয়। তবে, মাঠে প্রোমোটারের হাত পড়েনি। সেখানে প্রতিদিনই খেলাধুলো হতো।
কিন্তু সম্প্রতি পুলিশ-প্রশাসনের উপস্থিতিতে মাঠটি ঘিরে ফেলেন বর্তমান মালিকেরা। তার পর থেকেই শহরের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের আশঙ্কা, প্রোমোটারের হাতে তুলে দেওয়ার জন্যই মাঠটি ঘেরা হয়েছে। এরই প্রতিবাদে রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে এবং শহরের নানা পেশার মানুষজন মিলিত ভাবে গড়ে তোলেন ‘ঘড়িবাড়ি মাঠ বাঁচাও কমিটি’। যে দিন মাঠ ঘেরা হয়েছিল, সে দিন কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ সভা করা হয়। তার পরে টানা কয়েক দিন মাঠের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভও চলে। মাঠ বাঁচানোর স্বার্থে প্রশাসনকে তা অধিগ্রহণ করতে হবে বলে দাবিও তোলে কমিটি।
একই দাবিতে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে উত্তরপাড়া পুরসভার সামনে বিক্ষোভ দেখান কমিটির লোকজন। প্রতিবাদ-সভাও হয়। সেখানে ছোটরা সবুজ বাঁচানোর ছবি আঁকে। তার পরে পৌনে ১টা নাগাদ জি টি রোড অবরোধ করেন কমিটির লোকজন। তাঁদের দাবি, যে কোনও মূল্যে প্রোমোটারদের হাতে মাঠ তুলে দেওয়া রোখা হবে। পুলিশের মধ্যস্থতায় কিছু ক্ষণ পরে অবরোধ ওঠে।
এর পরে ওই দাবিতে কমিটির পক্ষ থেকে পুরপ্রধান অদিতি কুণ্ডুর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। আন্দোলনকারীদের পক্ষে কমিটির আহ্বায়ক তুহিন বসু বলেন, “মাঠটিকে যে কোনও মূল্যে প্রশাসন অধিগ্রহণ করে পূর্ণাঙ্গ খেলার মাঠ গিসেবে স্বীকৃতি দিক। এ জন্য আমরা প্রয়োজনে আইনি সহায়তার কথাও ভাবছি।” এসএসকেইউ নেতা আভাস মুন্সি বলেন, “হিন্দমোটর কারখানা বন্ধ। এখানে শিল্প এখন একটাই প্রোমোটারি। তাই ওই মাঠ প্রোমোটারের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে।”
পুরপ্রধান বলেন, “কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশেই মাঠটির মিউটেশন দেওয়া হয়েছে। কোর্ট বললে নিশ্চয়ই মিউটেশন বাতিল করা হবে, কিন্তু পুরসভার পক্ষে এখনই মাঠ অধিগ্রহণ সম্ভব নয়।” যাঁরা মাঠটি ঘিরেছেন, তাঁদের দাবি, আইন মাফিকই সব কিছু করা হয়েছে।
প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, টানাপড়েনের জন্য মাঠ যাঁদের মালিকানায় রয়েছে, তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। হাইকোর্টের নির্দেশমতোই সম্প্রতি প্রশাসনের কর্তা এবং পুলিশের উপস্থিতিতে মাঠটি ঘেরা হয়। মাঠ সংলগ্ন একটি পুকুর কার্যত বোজানো এবং বেশ কিছু গাছ কেটে ফেলার নিয়ে অভিযোগ ওঠায় জেলাশাসক মনমীত নন্দা সম্প্রতি তা নিয়ে প্রশাসনিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy