Advertisement
E-Paper

মহকুমার স্টেডিয়ামগুলো খেলার না কি মেলা-উৎসবের, প্রশ্ন শ্রীরামপুরবাসীর

কলকাতার চৌহদ্দি ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে রমরম করে সুপার ডিভিশন থেকে বিভিন্ন স্তরের ফুটবল ম্যাচ খেলা খেলা হচ্ছে। তবে শ্রীরামপুর মহকুমার ক্রীড়াপ্রেমীরা এই ধরনের খেলার আয়োজন এবং দেখা থেকে বঞ্চিত। কেননা, ভাল মানের মাঠের অভাব।

নিজস্ব সংবাদাদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫৭
উত্তরপাড়ার সিএ মাঠে এ ভাবেই ফেলে রাখা হয় পুজোর মণ্ডপ, মেলার  কাঠামো তৈরির জন্য বাঁশ। ছবি: দীপঙ্কর দে।

উত্তরপাড়ার সিএ মাঠে এ ভাবেই ফেলে রাখা হয় পুজোর মণ্ডপ, মেলার কাঠামো তৈরির জন্য বাঁশ। ছবি: দীপঙ্কর দে।

কলকাতার চৌহদ্দি ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে রমরম করে সুপার ডিভিশন থেকে বিভিন্ন স্তরের ফুটবল ম্যাচ খেলা খেলা হচ্ছে। তবে শ্রীরামপুর মহকুমার ক্রীড়াপ্রেমীরা এই ধরনের খেলার আয়োজন এবং দেখা থেকে বঞ্চিত। কেননা, ভাল মানের মাঠের অভাব। কোথাও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, কোথাও বাঁশ পুঁতে পুজোআচ্চা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন, কোনও মাঠের তুলনায় পাশের রাস্তা উঁচু, ফলে বৃষ্টির সময় জলে ভাসে---শ্রীরামপুর মহকুমা শহরের বহু মাঠেরই অবস্থা এমন। উৎসবের ক্ষতচিহ্ন বছরভরই বয়ে বেড়াতে হয় মাঠগুলোকে। ফলে কলকাতা ময়দানের খেলা দূরঅস্ত, মাঝেমধ্যে মহকুমা ফুটবল-ক্রিকেট খেলার আয়োজন করতেও দু’বার ভাবতে হয় কর্মকর্তাদের।

মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক তরুণ মিত্র বলেন, ‘‘মাঠের অভাবে মাঝেমধ্যে খেলার আয়োজন করাটা দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। বিভিন্ন মাঠের পরিকাঠামো ঠিক করতে সরকারি সাহায্য দরকার।’’ শ্রীরামপুর মহকুমা স্তরে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি এবং অ্যাথলেটিক্স হয়। সমস্ত খেলাই হয় সাকুল্যে গোটা আটেক মাঠে। তাও আবার মরসুমের সব সময় মাঠ পাওয়া যায় না। আরও কিছু মাঠ অবশ্য রয়েছে, যেখানে আগে খেলার আয়োজন করা হত। নানা কারণে এখন আর হয় না। পরিকাঠামোর অভাবের জন্য ওই সব মাঠ থেকেও তাই কোনও লাভ হয় না। প্রাক্তন ফুটবলার সমীর চৌধুরীর কথায়, ‘‘অনেক জায়গাতেই মাঠের উপর যে ভাবে অত্যাচার চলে তাতে দুঃখ হয়। কারণ, মাঠই খেলোয়াড় তৈরির কারখানা। তাঁদের তীর্থক্ষেত্র।’’

শ্রীরামপুর স্টেডিয়াম দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা। এই স্টেডিয়ামেই রয়েছে সংস্থার অফিস। মাঠের তিন দিকে গ্যালারি, ড্রেসিংরুম সবই আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও যেন শ্রীরামপুর স্টেডিয়াম যেন শ্রী হারিয়েছে। ক্রীড়া সংস্থার দেওয়া ২ লক্ষ টাকায় স্থানীয় পুরসভা মাঠ সংস্কারে নেমেছে। যদিও এত কম টাকায় কি ভাবে উন্নত মানের মাঠ করা সম্ভব, সংস্থার ভিতরেই সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। পুরসভার তরফে জানানো হয়েছিল, প্রয়োজনে তারা বারাসত বা কল্যাণী স্টেডিয়ামের মাঠ দেখে এবং ওই পুরসভাগুলির পরামর্শ নিয়ে মাঠের সংস্কার করবে, কেননা, পরিকাঠানোর কিছুটা উন্নয়ন করলেই এই মাঠে কলকাতার খেলা টেনে আনা সম্ভব। শ্রীরামপুর এবং রিষড়া স্টেশন থেকে স্টেডিয়ামের দূরত্বও বেশি নয়। মাঠের পাশেই জিটি রোড। ফলে যাতায়াতের কোনও অসুবিধা নেই। এখন সংস্কারের পরে মাঠের চেহারা কতটা ভাল হয়, সময়ই তা বলবে।

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের অন্যতম উদাহরণ উত্তরপাড়া স্টেশন সংলগ্ন মনমোহন উদ্যান। লোকমুখে অবশ্য সিএ মাঠ হিসেবেই বেশি পরিচিত। রেল স্টেশনের পাশে হওয়ায় যাতায়াতের সুবিধা রয়েছে, জিটি রোড থেকেও মাঠটি খুব দূরে নয়। মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার কর্তারা জানাচ্ছেন, এক সময় এই মাঠে মহকুমা ক্রিকেট, ফুটবল, হকির মতো খেলার আয়োজন হয়েছে। কিন্তু দেখভালের অভাবে মাঠের বর্তমানে যে অবস্থা তাতে সেখানে খেলা দেওয়া যাচ্ছে না। খাতায়-কলমে মাঠের মালিক উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভা। যদিও মাঠ সংস্কার নিয়ে তাঁদের কোনও তাগিদ নেই বলে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ। স্থানীয় ক্লাবগুলিও এব্যাপারে তেমন উদ্যোগী হয় না। ফলে মাঠ জুড়ে খেলাধূলার বদলে অবাধে চলছে বিভিন্ন পুজো, সভা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুজো মিটে গেলেও মণ্ডপের বাঁশ-সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ডাঁই হয়ে মাঠের মাঝখানেই ফেলে রাখা হয়। সবুজ ঘাসের মাঠে যত্রতত্র বিপজ্জনক গর্ত হয়ে থাকে। ডিসেম্বরে বইমেলার জন্য সেই সময়েই এলাকার ছেলেরাও বল পায়ে মাঠে নামতে পারে না। বিএ মাঠেও দেখভালের অভাব স্পষ্ট। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, মাঠে মেলা, উৎসব বন্ধ করলে মাঠটা অন্তত বাঁচে। এ সব তো অন্যত্রও করা যায়। কোতরং স্পোর্টিংয়ের মাঠটি বেশ ভাল। তবে এখানেও কোনও নজরদারি নেই পুর-কর্তৃপক্ষের। পুরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল দিলীপ যাদবের অবশ্য দাবি, ‘‘বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাঠের যেটুকু ক্ষতি হয়, পুরসভা দায়িত্ব নিয়ে তা মেরামত করে দেয়।’’ একই অবস্থা ডানকুনিতেও। এখানেও ফুটবল মাঠে আয়োজন করা হয় পুজোর।

রিষড়া পুরসভার তত্ত্বাবধানে লেনিন মাঠে শুধু মহকুমা স্তরের প্রতিযোগিতাই নয়, বিভিন্ন ক্লাবের অনুশীলনও চলে। পুলিশ আয়োজিত ফুটবল বা বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও হয় এখানে। অথচ পরিতাপের বিষয় এটাই যে, গুরুত্বপূর্ণ এই মাঠও জগদ্ধাত্রী পুজোর মেলা, উৎসবের হাত থেকে রেহাই পায়নি। ফলে মেলা, উৎসব শেষ হলে মাঠ কার্যত খোঁয়াড়ে পরিণত হয় বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। গত বছর কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে মাঠ সারানো হয়। তার পরে মহকুমা সুপার ডিভিশন ফুটবলের সেমিফাইনাল, ফাইনালের মতো খেলা হয়েছে। স্থানীয় এক ক্রীড়াপ্রেমীর কথায়, “জগদ্ধাত্রী পুজোর পরে মাঠের হাল দেখে কান্না পায়। মাঠ সংস্কারের পরে খেলা দেখে খুব ভাল লাগছিল। এ বার জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় আবার কী হয় কে জানে?”

বৈদ্যবাটি বিএস পার্ক মাঠে গত বছর মঞ্চ তৈরি করে বিজয়া সম্মিলনী এবং শারদ অর্ঘ্য প্রদান অনুষ্ঠান করেছে স্থানীয় পুলিশ এবং পুরসভা। এ বার মাঠ সংস্কারের কাজ চলছে। কিছু ক্লাবের মাঠ রাস্তা থেকে নিচু হওয়ার কারণে বৃষ্টি হলেই জল জমার সমস্যায় ভোগে। ফলে বর্ষায় খেলা কার্যত বন্ধ থাকে। কোন্নগর অলিম্পিক, শ্রীরামপুর স্পোর্টিং, নবগ্রাম সেবক সঙ্ঘ-সহ বেশ কয়েকটি মাঠেও এই সমস্যা রয়েছে।

srirampur stadium ca ground
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy