Advertisement
E-Paper

শ্লীলতাহানি রুখতে গিয়ে প্রহৃত কোমায়, কাঠগড়ায় তৃণমূল

রাস্তার ধারে কয়েক জন তরুণীকে বিরক্ত করছিল একদল যুবক। তা দেখেই প্রতিবাদ করতে এগিয়ে যান দুই তরুণ। শুরু হয় বচসা। তার থেকে মারধর। এর পরেই প্রতিবাদী এক যুবককে মাটিতে ফেলে মাথায় লোহার রড দিয়ে মারধরের অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৩১
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অরূপ ভাণ্ডারীর (ইনসেটে) মা।  —নিজস্ব চিত্র

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অরূপ ভাণ্ডারীর (ইনসেটে) মা। —নিজস্ব চিত্র

রাস্তার ধারে কয়েক জন তরুণীকে বিরক্ত করছিল একদল যুবক। তা দেখেই প্রতিবাদ করতে এগিয়ে যান দুই তরুণ। শুরু হয় বচসা। তার থেকে মারধর। এর পরেই প্রতিবাদী এক যুবককে মাটিতে ফেলে মাথায় লোহার রড দিয়ে মারধরের অভিযোগ। মারের চোটে কোমায় চলে গিয়েছেন তিনি। বেকায়দায় পড়ে টাকার বিনিময়ে আপসের প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠল স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামীর বিরুদ্ধে। যদিও তৃণমূলের তরফে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। বুধবার রাতে হাওড়ার সালকিয়ার এই ঘটনায় ফের প্রশ্নের মুখে পুলিশের ভূমিকা। কারণ পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের তরফ থেকে কোনও সাহায্যই মেলেনি।

কী হয়েছিল বুধবার রাতে?

স্থানীয় সূত্রে খবর, সাড়ে ১১টা নাগাদ বাঁধাঘাটে সরস্বতী ঠাকুর বিসর্জন করতে আসছিলেন সালকিয়ার বিবি বাগানের হৃষিকেশ লেনের এক দল বাসিন্দা। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ঠাকুর বিসর্জন দেখছিলেন কয়েক জন তরুণী। অভিযোগ, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের দলীয় অফিসের সামনে কয়েক জন যুবক তরুণীদের উত্ত্যক্ত করছিল। কয়েক জনের গায়েও হাত দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এর পরেই বিসর্জনে আসা দলের দুই যুবক প্রতিবাদ করেন। শুরু হয় গণ্ডগোল। তখনকার মতো থেমেও যায় গোলমাল।

কিন্তু বিসর্জন সেরে বাড়ি ফেরার সময়েই ফের হয় হামলা। অভিযোগ, রাত বারোটা নাগাদ হৃষিকেশ লেনের বাসিন্দা অরূপ ভাণ্ডারী ও অভিজিৎ ঘোষ যখন বাড়ি ফিরছিলেন, তখন ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল অফিসের সামনে তাঁদের উপরে আচমকা আক্রমণ করে জনা পাঁচেক যুবক। অভিযোগ, সরু গলির পাশে নর্দমায় ফেলে অভিজিৎকে মারধর করা হয়। অরূপ বাঁচানোর চেষ্টা করলে তাঁকেও ঘিরে ধরে ওই যুবকেরা। মাটিতে ফেলে লোহার রড দিয়ে তাঁর মাথায় একাধিক বার আঘাত করা হয়। বিসর্জনে আসা দলের থেকে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছিলেন এই দুই যুবক। সেই সুযোগেই তাঁদের উপরে আক্রমণ হয় বলে অভিযোগ। এর মধ্যেই তাঁদের চিৎকার শুনে সামনে থেকে অন্য লোকেরা চলে আসায় হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে অরূপকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় স্থানীয় গোলাবাড়ি থানায়।

এর পরেই পুলিশের অসহযোগিতা শুরু হয় বলে অরূপের পরিবারের অভিযোগ। বুধবার রাতেই গোলাবাড়ি থানায় অরূপ ও অভিজিৎকে আনা হলে পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে। তার পরে স্থানীয় লোকেরাই তাঁদের হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে অরূপকে প্রথমে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে, পরে এসএসকেএমে নেওয়া হয়। তার পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করা হয় একটি নার্সিংহোমে। চিকিৎসকেরা জানান, অরূপ এখন কোমায়।

এর পরে বৃহস্পতিবার সকাল ন’টা থেকেই সালকিয়া জুড়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলতে থাকে। পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকার করার প্রতিবাদে বেনারস রোড অবরোধ করেন বিবিবাগান এলাকার বাসিন্দারা। শেষে গোলাবাড়ি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে অভিযোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ ওঠে। পরে গোলাবাড়ি থানায় অরূপের বাড়ির তরফ থেকে শুভম দুবে, আনন্দ প্রসাদ, বরুণ শর্মা, সন্দীপ তিওয়ারি এবং রাজু তিওয়ারির নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়। এরা স্থানীয় ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনজিৎ রাফেলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে মনজিতের বক্তব্য, “ওই ছেলেদের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।” তবু আশ্চর্যজনক ভাবে কিছু পরেই ঘটনা অন্য দিকে ঘুরতে শুরু করে।

অভিযুক্তদের গ্রেফতারের বদলে অবরোধকারীদের দু’জনকে গ্রেফতার করে মালিপাঁচঘরা থানার পুলিশ। অরূপের বাবা প্রতাপ ভাণ্ডারী বলেন, “বৃহস্পতিবার কাউন্সিলরের স্বামী সুভাষ রাফেল আমাদের একটি ক্লাবে ডেকে নিয়ে যান। টাকার বিনিময়ে আপস করে নিতে বলা হয়।” যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে সুভাষের দাবি, “আমি ওদের ক্লাবে ডেকেছিলাম কিছু সাহায্য লাগলে বলার জন্য। কোনও টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়নি।”

এ দিন বিকেলে অরূপের বাড়ি গিয়ে জানা যায়, আগে তিনি সিভিক পুলিশে কাজ করতেন। গত তিন মাস ধরে স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করছিলেন। বাড়ির সামনে জটলা হয়ে রয়েছে। বাবা প্রতাপ ভাণ্ডারীর চায়ের দোকান রয়েছে। সেখানে এক মহিলা মৌমিতা দলুই বলেন, “অভিযুক্তেরা কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ।” এলাকাবাসীরও অভিযোগ, অভিযুক্তেরা সকলেই তৃণমূলের ছেলে। যদিও উত্তর হাওড়ার তৃণমূল সভাপতি গৌতম চৌধুরী বলেন, “মত্ত অবস্থায় নিজেরে মধ্যে ঝামেলা করেছে। ঘটনাটি একেবারেই ওদের নিজেদের ব্যাপার।”

হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে বলেন, “মারামারির ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্তেরা পলাতক। তাদের খোঁজ চলছে। তবে পুলিশ অভিযোগ নিয়ে চায়নি, এই অভিযোগ ঠিক নয়।”

দুই তাণ্ডব, এক প্রশ্ন: পুলিশ কার জন্য

মাঝরাতে মাইক থামাতে বলে আক্রান্ত শিল্পী দম্পতি

সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

salkia arup bhandari eve teasing lynching southbengal death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy