Advertisement
E-Paper

হাওড়ায় কিষান ক্রেডিট কার্ড নিয়ে সমস্যায় চাষিরা

ঋণ নিয়ে চাষের সুবিধার জন্য রাজ্য সরকার চাষিদের কিষান ক্রেডিট কার্ড দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। বেশ কিছু জেলায় সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী চাষিদের মধ্যে ওই কার্ড বিলিও করেন। সেই সঙ্গে কিষান ক্রেডিট কার্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে জেলা কৃষি দফতরকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে কথা বলে চাষিদের সহযোগিতা করার জন্য বলেন। কিন্তু এ সব সত্ত্বেও দেখা গিয়েছে হাওড়া জেলার চাষিদের মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ কিষান ক্রেডিট কার্ড-এর আওতাভুক্ত হয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৪ ০০:৩৮

ঋণ নিয়ে চাষের সুবিধার জন্য রাজ্য সরকার চাষিদের কিষান ক্রেডিট কার্ড দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। বেশ কিছু জেলায় সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী চাষিদের মধ্যে ওই কার্ড বিলিও করেন। সেই সঙ্গে কিষান ক্রেডিট কার্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে জেলা কৃষি দফতরকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে কথা বলে চাষিদের সহযোগিতা করার জন্য বলেন। কিন্তু এ সব সত্ত্বেও দেখা গিয়েছে হাওড়া জেলার চাষিদের মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ কিষান ক্রেডিট কার্ড-এর আওতাভুক্ত হয়েছেন।

কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মাধ্যমে কৃষকদের এই প্রকল্পভুক্তির হার কিছুটা ভাল হলেও রাজ্য সরকারের ফার্মার ক্রেডিট মিশন প্রকল্পে এই হার আশানুরূপ নয়। মাত্র ২০ শতাংশ চাষিকে এই প্রকল্পের অধীনে আনা সম্ভব হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে চাষিদেরও। যদিও এ জন্য জেলা কৃষি বিভাগ দায়ী করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে। কৃষি দফতরের দাবি, ২০১২ সালে জেলার চাষিদের কিষান ক্রেডিট কার্ডের আবেদনপত্র বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে পাঠানো হয়েছিল। ব্যাঙ্কগুলি সেগুলি ফেলে রেখে দেয়। পরে ধীরে ধীরে মাত্র সাড়ে ১১ হাজার চাষিকে কিষান ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়েছে। কৃষি দফতরের আরও অভিযোগ, ব্যাঙ্কগুলি ওই সব আবেদনপত্রের যথার্থতা সম্পর্কে কোনও তথ্য দেয়নি। উল্টে সম্প্রতি ২০-২৫ হাজার আবেদনপত্র বাতিল করে ফেরত পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাঙ্কগুলির দাবি, বহু আবেদনপত্রে চাষিদের জমির মালিকানা-সহ নানা বিষয়ে প্রচুর অসঙ্গতি রয়েছে। এ সব নিয়ে জেলা কৃষি দফতরকে বহুবার সচেতনও করা হয়েছে।

ব্যাঙ্ক, জেলা কৃষি বিভাগ ও সমবায় সূত্রের খবর, জেলায় মোট কৃষক ২ লক্ষ ১৬ হাজার ৫৯৮ জন। ওঁদের কৃষিঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির প্রদত্ত ক্রেডিট কার্ড-সহ বেশ কিছু প্রকল্পের মাধ্যমে। কিন্তু এই প্রকল্পের আওতাধীন চাষির সংখ্যা খুবই কম। ফলে ২০১২ সালে রাজ্য সরকার ফার্মার ক্রেডিট মিশন নামে প্রকল্প চালু করে। যেখানে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন কৃষকেরা। ওই বছরই জেলা কৃষি দফতর ব্যাঙ্কগুলোর কাছে চাষিদের ৭৩ হাজার ৩৩৩টি কিষান কার্ডের আবেদনপত্র পাঠায়। কৃষি বিভাগের অভিযোগ, ব্যাঙ্কগুলি তার মধ্যে মাত্র সাড়ে ১১ হাজার আবেদনপত্র মঞ্জুর করে সংশ্লিষ্ট চাষিদের কিষান ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে।

কৃষি দফতর ও কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, কৃষি দফতরের নথিভুক্ত চাষিদের মধ্যে সাড়ে ১১ হাজার চাষির কিষান ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের অধীনে ৪৪ হাজার ৭২৯ জন চাষির ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। আর কিছু ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক নিজেই কিষান ক্রেডিট কার্ড বিলি করেছে। সব মিলিয়ে জেলায় ৯০ হাজার কৃষকের কিষান ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। যা জেলায় চাষির মোট সংখ্যার মাত্র ৪০ শতাংশ।

কৃষি দফতরের কর্তাদের দাবি, তাঁরা নিয়মমতোই সব কাজ করেছেন। চাষিদের কিষান ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে যাবতীয় তথ্য খতিয়ে দেখে ব্লকের সহ-কৃষি অধিকর্তা শংসাপত্র প্রদান করেছেন। এর পর আর সমস্যা থাকার কথা নয়। কিন্তু ব্যাঙ্কগুলি চাষিদের অযথা হয়রানি করছে। যে আবেদনপত্রগুলি এখনও জমা রয়েছে সেগুলির বিষয়েও কোনও তথ্য দিচ্ছে না ব্যাঙ্ক। আদৌ ওই সব আবেদনের ভিত্তিতে চাষিদের কার্ড ইস্যু হবে কি না বা হলে কবে হবে, সে ব্যাপারেও তারা কিছুই জানাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্কগুলির বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছে কৃষি দফতর। জেলা কৃষি অধিকর্তা মানস রঞ্জন প্রধান বলেন, “এটা গুরুতর সমস্যা। ব্যাঙ্কগুলির কাছে বারবার অনুরোধ করা হলেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।’’

কৃষি দফতরের অভিযোগ মানতে নারাজ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, কিষান ক্রেডিট কার্ডে ঋণ নিয়েছেন এমন বহু চাষি ঋণ শোধ না করায় বহু টাকা অনাদায়ী রয়েছে। এ ছাড়া কৃষি দফতর যে আবেদনপত্রগুলি পাঠিয়েছে তাতেও প্রচুর অসঙ্গতি রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের জেলা লিড ম্যানেজার মাধাই চন্দ্র নন্দী বলেন, “আবেদন পত্র যাচাই করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে বহু চাষির জমির পরচা ঠিক নেই। যাঁরা কিষান ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করেছেন তাঁদের অনেকের নামে কোনও জমিই নেই। আমরা তাঁদের নতুন পরচা করে আনতে বলেছি। এ ছাড়া জমির দলিল জমা রাখার পরেও দেখা গিয়েছে ওই জমি পরে বিক্রি হয়ে গিয়েছে। সেটা দেখার জন্য ভূমি রাজস্ব আধিকারিকের শংসাপত্রও চেয়েছি।”

department of agriculture kisan credit card
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy