Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
তপন দত্ত খুন

মুক্ত ৫ অভিযুক্ত, সিআইডি-র কাজে ক্ষুব্ধ কোর্ট

বালির তৃণমূল নেতা তপন দত্ত খুনের মামলায় ধৃত পাঁচ অভিযুক্তকেই বেকসুর খালাস করল হাওড়া আদালত। শনিবার ওই রায় দেওয়ার সময় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ ও প্রত্যক্ষদর্শীর অভাবে পাঁচ জনকে মুক্তি দেওয়া হল।” তবে এর পাশাপাশি তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি-র কাজ নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারক। কারণ তাঁর মতে, তপন দত্ত খুনে সিআইডি-র তদন্ত অসম্পূর্ণ।

হাওড়া আদালতে তপন দত্তের স্ত্রী প্রতিমা দত্ত। এবং অন্যতম অভিযুক্ত ষষ্ঠী গায়েন। শনিবার।  ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

হাওড়া আদালতে তপন দত্তের স্ত্রী প্রতিমা দত্ত। এবং অন্যতম অভিযুক্ত ষষ্ঠী গায়েন। শনিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২৯
Share: Save:

বালির তৃণমূল নেতা তপন দত্ত খুনের মামলায় ধৃত পাঁচ অভিযুক্তকেই বেকসুর খালাস করল হাওড়া আদালত। শনিবার ওই রায় দেওয়ার সময় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ ও প্রত্যক্ষদর্শীর অভাবে পাঁচ জনকে মুক্তি দেওয়া হল।” তবে এর পাশাপাশি তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি-র কাজ নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারক। কারণ তাঁর মতে, তপন দত্ত খুনে সিআইডি-র তদন্ত অসম্পূর্ণ।

আদালতের বক্তব্য, এই মামলায় প্রথমে রমেশ মাহাতো নামে এক দুষ্কৃতীকে মূল অভিযুক্ত করেছিলেন তদন্তকারী অফিসারেরা। কিন্তু পরে জানা যায়, ২০১১-এর ৬ মে রাতে যখন বালি লেভেল ক্রসিংয়ের সামনে তপনবাবুকে খুন করা হয়, তখন হুগলি জেলে বন্দি ছিল রমেশ। আদালতের প্রশ্ন, কী ভাবে এক জন জেলবন্দিকে তপন দত্ত খুনের ঘটনার মূল অভিযুক্ত হিসেবে দেখিয়েছিল সিআইডি? কী ভাবেই বা রমেশকে চিহ্নিত করা হয়েছিল? বিচারপর্ব মিটে যাওয়ার পরে আদালতকক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে সিআইডি-র আইনজীবী তরুণ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য সাংবাদিকদের বলেন, “এই মামলায় কোনও প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি। ঘটনার পরে বালি থানায় যে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল তাতেও কারও নাম ছিল না। পরে পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ এবং দু’জন সাক্ষীর গোপন জবানবন্দির ভিত্তিতে সাত জনকে অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তার মধ্যে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাকিরা এখনও ফেরার।”

কিন্তু পুলিশ সূত্রে খবর, তপনবাবুকে যখন খুন করা হয়েছিল তখন তাঁর মোটরসাইকেলের পিছনে বসে ছিলেন বাবলু প্রসাদ নামে স্থানীয় এক যুবক। ঘটনার পরেই বাবলু সেখান থেকে পালিয়ে যান। তা হলে কেন প্রত্যক্ষদর্শী মেলেনি বলে দাবি সিআইডি-র? পুলিশেরই একটি সূত্রের আবার দাবি, বালি থানায় বাবলু লিখিত বয়ান দিয়েছিলেন, অভিযুক্তদের তিনি চিহ্নিত করতে পারবেন। কিন্তু পরে আদালতের সামনে তা অস্বীকার করে জানান, পুলিশ তাঁকে দিয়ে একটি কাগজে সই করিয়ে নিয়েছিল। তাতে বাংলায় কিছু লেখা ছিল। ফলে না বুঝেই সেটি সই করেছিলেন তিনি। সিআইডিও দাবি করে, বাবলু কোনও সূত্র দিতে পারেননি। তপনবাবুর পরিবারের অবশ্য অভিযোগ, বাবলু পুলিশকে যে বয়ান দিয়েছিল পরে তা বদল করা হয়। তরুণবাবুর পাল্টা দাবি, বাবলু কোনও দিনই এ রকম কথা বলেননি।

তপন খুনের তদন্তে নেমে সিআইডি নিশ্চিত হয় কোনও রাজনৈতিক কারণে নয়, জলাজমি ভরাটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ‘অপরাধে’ই বালির ওই তৃণমূল নেতাকে খুন করে দুষ্কৃতীরা। ২০১১-র ৩০ অগস্ট সিআইডি ওই মামলার যে প্রথম চার্জশিটটি পেশ করেছিল, তাতে হাওড়ার বেশ ক’জন তৃণমূল নেতা-সহ ১৬ জনের নাম ছিল। তাদের মধ্যে রমেশ মাহাতো, ষষ্ঠী গায়েন, সুভাষ ভৌমিক, কার্তিক দাস ও অসিত গায়েন নামে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পি রাজু ও সন্তোষ সিংহ নামে দু’জন অধরাই থেকে যায়। পরে সিআইডি আরও একটি ‘সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট’ পেশ করে। সেখানেই বাকি ন’জনের নাম বাদ দেওয়া হয়।

এ সব দিনের রায় শুনে তপনবাবুর স্ত্রী প্রতিমা দত্ত বলেন, “নিম্ন আদালতের এই রায় প্রত্যাশিতই ছিল।” তাঁর অভিযোগ, গোড়া থেকেই তৃণমূল তদন্তকে প্রভাবিত করেছে। তাই তিনি হাওড়া আদালতের রায় বেরনোর আগেই কলকাতা হাইকোর্টে সিবিআই তদন্ত চেয়ে মামলা করেছেন। ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ওই মামলার রায় শোনাতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে তপনবাবুর পরিবারের দাবি, এ দিনের মামলায় রায়ে তাঁদের নৈতিক জয় হয়েছে। কারণ সিআইডি তদন্ত যে ঠিক ভাবে করা হয়নি, আদালতই সে কথা জানিয়েছে। গোটা পরিবার এখন হাইকোর্টের দিকে তাকিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE