Advertisement
E-Paper

মাথায় কেষ্টর হাত, এ বার সিপিএমকে দুষছেন হৃদয়

রাজনীতিতে ভোলবদল থাকেই। তবু বাংলার রাজনীতিতে ভোলবদলকেই অন্য উচ্চতায় তুলে নিয়ে যাচ্ছেন বীরভূমের হৃদয় ঘোষেরা! তাঁদের হৃদয়ে এখন পরিবর্তনের বান ডেকেছে!

মহেন্দ্র জেনা

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৫ ০৩:১৭
অনুব্রত মণ্ডলের হাত ধরেই তৃণমূলে যোগ দিলেন পাড়ুইয়ের হৃদয় ঘোষ। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

অনুব্রত মণ্ডলের হাত ধরেই তৃণমূলে যোগ দিলেন পাড়ুইয়ের হৃদয় ঘোষ। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

রাজনীতিতে ভোলবদল থাকেই। তবু বাংলার রাজনীতিতে ভোলবদলকেই অন্য উচ্চতায় তুলে নিয়ে যাচ্ছেন বীরভূমের হৃদয় ঘোষেরা! তাঁদের হৃদয়ে এখন পরিবর্তনের বান ডেকেছে!

পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে বাবা সাগর ঘোষের হত্যাকাণ্ডে তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্ট ও তাঁর দলবলের হাত দেখেছিলেন হৃদয়বাবুরা। রাজ্য প্রশাসনের তদন্তে সন্তুষ্ট না হয়ে সিবিআই তদন্ত চেয়ে আদালতে গিয়েছিলেন। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে সিবিআই তদন্তের আর্জি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। সব জল্পনা সত্যি করে রবিবার হৃদয়বাবু এবং তাঁর সতীর্থ নিমাই দাস সেই অনুব্রতেরই শরণ নিয়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন। শুধু সেখানেই শেষ নয়! তৃণমূলের ঝান্ডা হাতে এবং অনুব্রতের হাত মাথার উপরে পাওয়ার পরে বাবার হত্যাকাণ্ডে এ বার ‘সিপিএমের হাত’ দেখতে পেয়েছেন হৃদয়বাবু!

তাঁর এই সাম্প্রতিকতম দাবিতে স্বাভাবিক ভাবেই হতচকিত রাজ্য রাজনীতি! বিরোধীরা বিস্ময়ে প্রায় বিমূঢ়! তবে তার মধ্যেই চর্চা চলছে, খেল দেখাচ্ছেন বটে কেষ্ট! লোকসভা ভোটের পরে এ রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের বলার মতো এবং শাসক দলের সঙ্গে টক্কর নেওয়ার মতো সংগঠন তৈরি হয়েছিল বীরভূম জেলার কিছু অংশে। সেই জেলারই বিজেপি সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলকে প্রথমে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা গিয়েছে গেরুয়া বাহিনী থেকে। তার পরে হৃদয়বাবুদের হৃদয় পরিবর্তন ঘটিয়ে এবং মামলা তুলিয়ে তাঁদের তৃণমূলে টেনে আনা গিয়েছে। তাঁদের দিয়ে সাগর-হত্যায় সিপিএমের নামে দোষারোপও করানো গিয়েছে! এ বার নিশানা সাত্তোরের সেই নির্যাতিতা বধূ! তিনিও কি হৃদয় বদলাবেন? বেশ নিশ্চিন্ত গলায় অনুব্রত এ দিন বলে দিয়েছেন, ‘‘বিষয়টা হৃদয়-নিমাই দেখছে। তারাই বলতে পারবে!’’ অর্থাৎ কাঁটা দিয়েই কাঁটা তুলে বীরভূমে বিজেপিকে দুরমুশ করে তৃণমূলকে নিষ্কণ্টক করতে নেমেছেন কেষ্ট!

তাঁরা তৃণমূলে চলে যাবেন বুঝেই কয়েক দিন আগে হৃদয়-নিমাইকে বহিষ্কার করেছিল বিজেপি। ঠিক সেটাই ঘটেছে এ দিন। বোলপুরে তৃণমূলের কার্যালয়ে গিয়ে রীতিমতো অনুব্রতকে ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে ও তাঁর আশীর্বাদ নিয়ে তাঁর দলে যোগ দিলেন ওই দু’জন! তাঁদের হাতে দলের পতাকা তুলে দিয়ে মুখে হাসি নিয়ে অনুব্রত বলেছেন, ‘‘একটা ঘরে চার ভাই থাকলে ঝগড়া হয়। এখন বিভেদ মিটেছে। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছে!’’ যা শুনে জেলা বিজেপি-র আহ্বায়ক অর্জুন সাহার কটাক্ষ, ‘‘এক দম ঠিক বলেছেন কেষ্ট মণ্ডল। মাথা মুড়িয়েই তো ঘরে ফিরেছে হৃদয় আর নিমাই।’’

শনিবার রাত থেকে আবার পাড়ুইয়ে রটে যায়, রবিবার তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন সাত্তোরের নির্যাতিতা বধূও। তেমন কিছু অবশ্য এখনও ঘটেনি। হৃদয়কে পাশে নিয়ে নিমাই দাবি করেছেন, ‘‘শুধু এক জনের কথাই বলছেন কেন? বিজেপি থেকে বহু মানুষ এসেছেন তৃণমূলে। হয়তো তিনিও আসবেন।’’ নির্যাতিতা অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘বিজেপিতেই আছি। এবং থাকব।’’ বস্তুত, তাঁকে আগলে রেখেছেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়।

ঘটনাচক্রে, শনিবারই বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ পাড়ুইয়ের হারানো জমি পুনরুদ্ধারে সেখানে পাঠিয়েছিলেন রূপা-সহ একটি প্রতিনিধিদলকে। আর এ দিন সিউড়ি গিয়ে দলের নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ও দলীয় কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন। সদর হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের ফল বিতরণের পাশাপাশি নলহাটির নির্যাতিতা স্কুলছাত্রী এবং নিহত বিজেপি কর্মী রহিম শেখের মেয়ের পড়াশোনার জন্য আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেছেন। কিন্তু এ সব করেও কতটা কাজের কাজ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে জেলা বিজেপি-র অন্দরেই। দুধকুমারের অনেক অনুগামী আর সক্রিয় ভাবে বিজেপি-র কর্মসূচিতে থাকছেন না। পাড়ুইয়ের বহু বিজেপি কর্মী-সমর্থক প্রকাশ্যেই দলের বিরুদ্ধেবিষোদ্গার করছেন। এই পরিস্থিতিতেই আবার হৃদয়-নিমাইয়ের নতুন চাল!

বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য এই পরিস্থিতির জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের ‘অসুস্থ রাজনীতি’কেই দায়ী করছেন। রূপার কথায়, ‘‘খুব বেদনাদায়ক অবস্থা বাংলার। কী পরিস্থিতিতে পড়লে এক জন মানুষকে প্রথমে পিতাকে হারাতে হয়। তার পরে পিতৃহারা সেই মানুষটিকে নিজের পিত্যার হত্যাকারীর কাছে গিয়ে প্রণাম করে দেখাতে হয়! তার পরে আবার সেই প্রণামকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য পিতার হত্যার জন্য সিপিএমকে দোষ দিতে হয়!’’ বিজেপি নেত্রীর আরও সংযোজন, ‘‘আমার প্রশ্ন, হৃদয়ের রাতে ঘুম আসবে তো? ঘুমোতে পারবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, যিনি নিজেকে মমতাময়ী বলে দাবি করেন?’’ হৃদয়কে কটাক্ষ করেই বিজেপি-র বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘ঈশ্বর ওঁর মঙ্গল করুন!’’

এই সে দিন অবধিও সাগর-হত্যায় অনুব্রতের দিকে বারবার আঙুল তোলার পরে এ দিন হৃদয়বাবু বলেছেন, ‘‘আমরা জানতে পেরেছি, বাবার খুনের পিছনে সিপিএমের হাত ছিল! সেই কারণেই অনুব্রত মণ্ডলের কাছে ফিরে আসা।’’ এখন কী বলবেন সিপিএম নেতারা? সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোমের জবাব, ‘‘এর প্রতিক্রিয়া দিতে আমাদের রুচিতে বাধে। নিহত বাবাকে নিয়ে হৃদয় ঘোষ যা করছেন, সবাই দেখছ‌েন। সব আসলে টাকার খেলা!’’ রামবাবুর প্রশ্ন, ‘‘এ বার তা হলে উনি কি নতুন কোনও এফআইআর করতে যাচ্ছেন?’’

হৃদয়বাবু অবশ্য আপাতত উন্নয়নে মজেছেন। লোকসভা ভোটের পরে ‘মিস্‌ড কল’ দিয়ে বিজেপি-র প্রাথমিক সদস্য হয়েছিলেন হৃদয়-নিমাই। রবিবার বৈঠক করে তৃণমূলে যাবেন কিনা, তা ঠিক করবেন বলে শনিবার জানিয়েছিলেন তাঁরা। সেই মতো এ দিন দুপুরে নিহত সাগরবাবুর গ্রামের বাড়ির ঢিল ছোড়া দূরত্বে, বাঁধনবগ্রাম হাইস্কুল মাঠে কয়েশো কর্মী-অনুগামী নিয়ে একটি সভা করেন নিমাই-হৃদয়। সেখানে ছিলেন তৃণমূলের আর এক বিক্ষুব্ধ নেতা দেবাশিস ওঝা। দুপুর থেকে সন্ধে পর্যন্ত বৈঠক করার পরে হৃদয়-নিমাইরা দলবল নিয়ে শাসক দলের দলীয় কার্যালয়ে যান। অনুব্রত এলে তাঁকে প্রণামকরেন হৃদয় ও নিমাই। বিধানসভা ভোটের আগে আবার তৃণমূলে কেন? হৃদয়-নিমাই এখন বলছেন, ‘‘এলাকার মানুষ চাইছেন বলে আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নে সামিল হতে।’’

mahendra jena blessings hriday ghosh hriday ghosh blames cpm anubrata mondal hriday ghosh anubrata mondal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy