Advertisement
E-Paper

মেডিক্যালে ধুন্ধুমার, স্তব্ধ পরিষেবা

বুধবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এমনই দৃশ্য দেখা গেল। যার জেরে দূরদূরান্ত থেকে আসা বহু রোগী চিকিৎসা না পেয়েই ফিরে যান।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৮
উত্তেজনা: এ ভাবেই ধাওয়া করা হয় জুনিয়র ডাক্তারদের।

উত্তেজনা: এ ভাবেই ধাওয়া করা হয় জুনিয়র ডাক্তারদের।

বিকেল পৌনে তিনটে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে বেরিয়ে সুপারের ঘরের দিকে দৌড়চ্ছেন জনা কুড়ি জুনিয়র ডাক্তার। পিছনে তাড়া করেছেন রোগীর পরিজনেরা।

ক্ষিপ্ত জনতার মধ্যে কেউ জুনিয়র ডাক্তারদের শার্ট টেনে ধরলেন, কেউ বা সপাটে কষালেন চড়। আক্রান্ত ডাক্তারেরা কোনও ক্রমে সুপারের ঘরে যাওয়ার প্রথম ফটক পেরিয়ে কিছুটা স্বস্তি পেলেন। আর ফটকের ও-পারে পুলিশের বাধায় আটকে গিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন রোগীর পরিজনেরা।

বুধবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এমনই দৃশ্য দেখা গেল। যার জেরে দূরদূরান্ত থেকে আসা বহু রোগী চিকিৎসা না পেয়েই ফিরে যান।

গন্ডগোলের জেরে ভর্তি হতে না-পেরে ফিরে যাচ্ছেন এক রোগী। বুধবার, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, এ দিন সকাল ন’টা নাগাদ জোড়াবাগানের আদিত্য সিংহ (৪০) জ্বর ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে সেখানে আসেন। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা আদিত্যবাবুর কোনও পরীক্ষা করেননি। কিছু পরে তাঁকে বক্ষ বিভাগে নিয়ে যেতে বলা হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা জানান, অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফের জরুরি বিভাগে যেতে বলা হয়। জরুরি বিভাগে যাওয়ার পরে চিকিৎসকেরা জানান, রোগী মারা গিয়েছেন।

পরিজনদের অভিযোগ, প্রায় তিন ঘণ্টা আদিত্যবাবু বিনা চিকিৎসায় পড়ে ছিলেন। গাফিলতির জেরেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে তাঁদের দাবি। এর পরে দেহের ভিডিও তোলার সময়ে হঠাৎ কয়েক জন জুনিয়র ডাক্তার পরিজনদের আলাদা ঘরে ডেকে নিয়ে যান। অভিযোগ, সেখানে জুনিয়র ডাক্তারেরা তাঁদের মারধর করেন। এর পরেই ওই পরিজনেরা ক্ষোভে ফেটে প়ড়েন। জরুরি বিভাগের সামনেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা।

জুনিয়র ডাক্তারদের অভিযোগ, রোগীর মৃত্যুর খবর পেয়েই পরিজনেরা তাঁদের উপরে চড়াও হন। এমনকী, সেই সময়ে কর্তব্যরত এক মহিলা জুনিয়র ডাক্তারকে হেনস্থা করা হয়েছে বলেও দাবি তাঁদের। হাসপাতালের সুপার শিখা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, জুনিয়র ডাক্তারদের হেনস্থার ঘটনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেনে নেবেন না। আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা রোগীকে দেওয়া হয়েছিল। তার পরেও যদি পরিবারের ক্ষোভ থাকে, তা হলে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করা হয়নি কেন? তাঁর কথায়, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে আছে। নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।’’

পুলিশ জানায়, জুনিয়র ডাক্তারদের মারধরের অভিযোগে রোগীর পরিজনদের মধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হাসপাতাল এবং রোগীর পরিবার— দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। যা শুনে শহরের এক প্রবীণ চিকিৎসকের মন্তব্য, ‘‘রোগী আর ডাক্তারের পারস্পরিক সম্পর্কে এখন কী পরিমাণ অবিশ্বাস ঢুকে গিয়েছে, এই ঘটনা সেটাই আর এক বার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।’’

কিন্তু শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসা রোগী কী ভাবে মারা গেলেন? চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, আদিত্যবাবুর ফুসফুসে সম্ভবত কোনও সমস্যা ছিল। জরুরি বিভাগ থেকে বক্ষ বিভাগ বেশ কিছুটা দূরে। জরুরি বিভাগ থেকেই প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল করে বক্ষ বিভাগে পাঠালে হয়তো বিপদ এড়ানো যেত। তবে শিখাদেবী বলেন, ‘‘মৃত্যুর কারণ জানতে তদন্ত করতে হবে।’’

এ দিন জুনিয়র ডাক্তার এবং রোগীর পরিজনদের এই ঝামেলার জেরে জরুরি বিভাগের পরিষেবা প্রায় মুখ থুবড়ে প়ড়ে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাসপাতালে আসা রোগীরা ফিরে যান। যেমন, হাওড়ার সঞ্জু বেগম। সত্তরোর্ধ্ব ওই মহিলাকে জরুরি বিভাগে ভর্তি না নেওয়ায় ফিরে যেতে হয়। তাঁর পরিবার জানায়, পড়ে গিয়ে মুখে গুরুতর চোট পেয়েছেন তিনি। কিন্তু জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানান, গোলমালে ভর্তি নেওয়া যাবে না। একই অভিজ্ঞতা কাঁথির কার্তিক প্রধানের। দুর্ঘটনায় ঘাড়ে চোট পান তিনি। স্থানীয় হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজে ‘রেফার’ করে দিয়েছে। অথচ, চিকিৎসক বলেছেন, ঝামেলা চলছে। তাই রোগী ভর্তি হবে না।

যদিও শিখাদেবীর দাবি, ‘‘পরিষেবায় কোনও সমস্যা নেই। চিকিৎসকেরা কর্তব্য পালন করছেন।’’

ছবি: নিজস্ব চিত্র ও দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

Medical college Kolkata Patient কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy