Advertisement
E-Paper

অনুগামীদের মতামত নিতে সভা হুমায়ুনের

দশ বাই বারো, পাটাতনের মঞ্চ বাঁধার তদারকির মাঝে লম্বা একটা আড়মোড়া ভেঙে তিনি বলছেন, ‘‘অভিযোগ একটাই, দলটায় গুমোট ধরে গেছে। আমরা একটু হড়হড়ে (খোলা মনে কথা বলা) লোক। অমন বদ্ধ জায়গায় পেট ফেঁপে গিয়েছিল দাদা। সত্যি বলব, বহিষ্কার করায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছি।’’ ‘গুমোট’ তৃণমূলে বার কয়েক তাই বেফাঁস মন্তব্য করে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩০

দশ বাই বারো, পাটাতনের মঞ্চ বাঁধার তদারকির মাঝে লম্বা একটা আড়মোড়া ভেঙে তিনি বলছেন, ‘‘অভিযোগ একটাই, দলটায় গুমোট ধরে গেছে। আমরা একটু হড়হড়ে (খোলা মনে কথা বলা) লোক। অমন বদ্ধ জায়গায় পেট ফেঁপে গিয়েছিল দাদা। সত্যি বলব, বহিষ্কার করায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছি।’’

‘গুমোট’ তৃণমূলে বার কয়েক তাই বেফাঁস মন্তব্য করে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর। শেষতক ‘পিসি-ভাইপো’কে (মমতা-অভিষেক) নিয়ে মন্তব্য করায় মাস খানেক আগে ‘হড়হড়ে’ হুমায়ুনকে ঝেড়ে ফেলেছে দল।

এ বার তাই নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ‘গুমোট’ ভাবটা কাটাতে খোলা মনের অনুগামীদের মত নিয়ে পা ফেলতে চাইছেন তৃণমূলের বিতকির্ত এই সদ্য প্রাক্তনী। নিজের কেন্দ্র রেজিনগরের বিকননগর স্কুলের ঘাস ওঠা ন্যাড়া মাঠে পেল্লাই ম্যারাপ খাটিয়ে শুক্রবার তাঁর কর্মিসভা। সেখানে রেজিনগরের এগারোটি অঞ্চলের তিন জন পঞ্চায়েত প্রধান-সহ ৩৭ জন পঞ্চায়েত সদস্য, ৮ জন কর্মাধক্ষ্যকে নিয়ে সভা ডেকেছেন হুমায়ুন। শুধু পদাধিকারীরাই নয়। হুমায়ুনের দাবি, ‘‘গুনে গুনে সাত হাজার চিঠি ছেড়েছি। সভায় ডাক পেয়েছেন বুথ স্তরে চেনা পরিচিত সব কর্মী। অন্তত হাজার পাঁচেক লোক তো হবেই।’’ তাঁদের মত নিয়েই হুমায়ুন স্থির করতে চলেছেন রাজনীতির কোন রং গায়ে তুলবেন তিনি।

লোক সমাগম যাই হোক, নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনুগামীদের হাতে সঁপে দেওয়ার এ হেন পদ্ধতি যে আদ্যন্ত নতুন, মেনে নিয়েছেন মুর্শিদাবাদের জেলা তৃণমূলের তাবড় নেতারাও। তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘এলাকায় হুমায়ুনের প্রভাব যে কিছুটা হলেও রয়ে গিয়েছে, অস্বীকারের উপায় নেই। তা সত্ত্বেও নিজে সিদ্ধান্ত না নিয়ে, অন্যদের মতকে প্রাধান্য দিয়ে পরবর্তী রাজনৈতিক পদক্ষেপের এই সিদ্ধান্তে কিন্তু অভিনবত্ব রয়েছে।’’

তাঁর অনুগামীরা জানাচ্ছেন, বিভিন্ন পঞ্চায়েতের ওই পদাধিকারীদের অধিকাংশই তৃণমূলের। বেশ কয়েক জন কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের সদস্যও রয়েছেন। কিন্তু বহিষ্কৃত হুমায়ুনের সভায় যোগ দিলে তাঁদের উপরেও কি দলের কোপ নেমে আসবে না? শুক্রবারের সভায় ডাক পাওয়া তৃণমূলের এমনই এক পঞ্চায়েত প্রধান বলছেন, ‘‘হুমায়ুনের হাত ধরেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম। বৈঠকে যাব, তাতে দল বহিষ্কার করলে করবে।’’ কিন্তু অনুগামীদের মধ্যে থেকে যদি উঠে আসে, পুরনো দলে প্রত্যাবতর্নের প্রশ্ন?

তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন বলছেন, ‘‘কে ফেরাবে ওঁকে, দলনেত্রীর সমালোচনার সময়ে উনি কি অনুগামীদের মত নিয়েছিলেন?’’ আর, যাঁর সঙ্গে তাঁর অহরহ বিবাদ, মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক ইন্দ্রনীল সেন বলছেন, ‘‘এক জন বহিষ্কৃতকে নিয়ে ভাবতেই চাই না।’’

যা শুনে, নিজের ময়ূরকণ্ঠী পাঞ্জাবির হাতায় কপাল মুছে হুমায়ুন বলছেন, ‘‘মান্নানদাকে পাল্টা প্রশ্ন করব, লোকসভা নিবার্চনে জিতলে উনি কি কংগ্রেস ছাড়তেন? আসলে ইন্দ্রনীলবাবুর সহচর হওয়ার সুবাদে ভদ্রতাটাই ভুলে গিয়েছেন ওঁরা। দলে এই ভদ্রতা, সহিষ্ণুতা, নীতিপরায়ণতাটাই জরুরি। এ ব্যাপারে সরব হলেই ছাঁটাই!’’ মাসখানেক আগে সেই ছাঁটাই-ই হয়ে গিয়েছেন হুমায়ুন। তারপর?

শুক্রবার সে ব্যাপারেই রায় শুনবেন তিনি।

Humayun Kabir Trinamool TMC Mamata Bandopadhyay Mamata Banerjee Abhisekh Bandopadhyay Murshidabad Indranil Sen
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy