বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস বাকি। নির্ঘণ্টও অনেক দূরে। সে সবের আগে নিজের নতুন দল ‘জনতা উন্নয়ন পার্টি’ (জেইউপি)-র প্রতিষ্ঠা দিবসেই আংশিক প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করে দিলেন হুমায়ুন কবীর। সোমবার দুপুরে নয়া দলের উদ্বোধন করেই তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়া বিধায়কের হুঙ্কার, ‘‘আগামী বিধানসভা ভোটেই মুর্শিদাবাদে তৃণমূলকে শূন্যে নামিয়ে আনব।’’ পাশাপাশিই, তাঁকে তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করলেন ভরতপুরের বিধায়ক।
সোমবার দলের নাম ঘোষণার দিন মোট ১০টি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম বলেছেন হুমায়ুন। তার মধ্যে নিজে লড়বেন দুটো কেন্দ্রে— ভরতপুর এবং রেজিনগরে। মুর্শিদাবাদ কেন্দ্র থেকে জেইউপি প্রার্থী হচ্ছেন মনীষা পাণ্ডে। মনীষা আগে তৃণমূলে ছিলেন। রানিনগর থেকে লড়বেন আর এক হুমায়ুন কবীর। তিনি ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কংগ্রেসের কাছে হেরে যান।
হুমায়ুনের দলে যোগ দিয়েছেন প্রাক্তন পুলিশকর্মী সিরাজুল হক মণ্ডল। তাঁর দাবি, সে দিন বর্তমান বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর প্রাণ বাঁচানোর জন্য চাকরিও খুইয়েছিলেন। ক্ষমতার পালাবদলের পরে আশা করেছিলেন চাকরি ফেরত পাবেন। কিন্তু পাননি। এখন ফেরিওয়ালার কাজ করে সংসার চালান তিনি। হুমায়ুনের দলে যোগ দিয়ে সেই সিরাজুলের মন্তব্য, ‘‘আসল গদ্দার তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ তাঁকে বারাসত কেন্দ্র থেকে ভোটে লড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন হুমায়ুন।
পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর গ্ৰামীণ কেন্দ্র থেকে ‘জনতা উন্নয়ন পার্টি’র প্রার্থী হচ্ছেন ইব্রাহিম হাজি। মালদহের বৈষ্ণবনগর কেন্দ্রে হুমায়ুনের প্রার্থী মুস্তারা বিবি। ভগবানগোলায় লড়বেন আরও এক হুমায়ুন কবীর। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ওয়েদুল রহমান। কলকাতার একটি কেন্দ্রেরও প্রার্থীর নাম জানিয়েছেন হুমায়ুন— বালিগঞ্জ কেন্দ্রে ভোটে লড়বেন নিশা চট্টোপাধ্যায়।
জেইউপি-র প্রতিষ্ঠাতা হুমায়ুনের দাবি, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদেও বিজেপির আসনসংখ্যা বাড়তে পারে। তাদের নিজস্ব কৌশল অবলম্বন করতে হবে। তবে মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের আর সুযোগ নেই। তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়া বিধায়কের কথায়, ‘‘আমি বেঁচে থাকলে আগামী নির্বাচনে মুর্শিদাবাদে তৃণমূলকে শূন্যে নামিয়ে আনব।’’ একই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে কটাক্ষ করেন। একই সঙ্গে তৃণমূলনেত্রীকে নিশানা করে বলেন, ‘‘আপনি মানুষকে ‘ইউজ় অ্যান্ড থ্রো’ করেন। কত দিন আর এই শক্তি থাকে! আপনার সঙ্গে যদি কোনও গদ্দারি করে থাকি আপনি তো বলবেনই। কিন্তু আপনি কত রকম মিথ্যাচার করেছেন, সেগুলো বাংলার মানুষকে জানাব। সিদ্ধান্ত মানুষ নেবে।’’
নয়া দলের ঘোষণার দিন তৃণমূল থেকে নিজের সাসপেন্ডের প্রসঙ্গও তুলেছেন হুমায়ুন। সেখানেও নিশানা সেই মমতাকে। তাঁর কথায়, ‘‘মালদহ থেকে এসে আমাকে সাসপেন্ড করার জন্য কার সঙ্গে কথা বললেন? লালগোলার বিধায়ক মহম্মদ আলি, মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহের খান, বহরমপুর পুরসভার চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়, মুর্শিদাবাদের জেলা তৃণমূলের সভাপতি অপূর্ব সরকারের সঙ্গে। আলোচনা করে বললেন, হুমায়ুন কবীরকে দল থেকে বার করে দিলে কি দলের ক্ষতি হবে? চ্যালেঞ্জ করলাম, আপনার শক্তি থাকলে মুর্শিদাবাদে খাতা খুলে দেখাবেন! ২২টি (বিধানসভা) আসনে বিজেপিও হয়তো দু’-একটা সিট বাড়িয়ে নিতে পারে। কিন্তু আমি বেঁচে থাকলে মুর্শিদাবাদে জোড়াফুল শূন্য করব। পারলে হুমায়ুন কবীরকে রুখে দেবেন।’’ উল্লেখ্য, বর্তমানে মুর্শিদাবাদে বিজেপির বিধায়কের সংখ্যা দুই। বহরমপুরে সুব্রত মৈত্র এবং মুর্শিদাবাদে গৌরীশঙ্কর ঘোষ। তা ছাড়া সাগরদিঘি থেকে কংগ্রেসের টিকিটে জেতা বাইরন বিশ্বাস পরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:
তাঁর সমালোচনা করার জন্য তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষকে নিশানা করে হুমায়ুন বলেছেন, ‘‘ওঁকে চ্যালেঞ্জ করে বলছি, আগামী জানুয়ারিতে কলকাতার ব্রিগেডে সভা হবে। সেখানে কয়েক লক্ষ মানুষের জমায়েত করে দেখিয়ে দেব।’’ তিনি আরও জানান, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ১০০টি আসন জয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ভোটের ময়দানে নামছে জেইউপি। প্রার্থীদের মধ্যে ৭০ শতাংশ মুসলিম এবং ৩০ শতাংশ হিন্দু প্রার্থী থাকবেন।
মুর্শিদাবাদের তৃণমূল বিধায়কদের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ করেছেন হুমায়ুন। কেন ইউসুফ পাঠান, কীর্তি আজাদ এবং শত্রুঘ্ন সিন্হার মতো অবাঙালিদের তৃণমূল সাংসদ পদের জন্য মনোনীত করেছে তা নিয়েও কটাক্ষ করেন।
আগামী ৪ জানুয়ারি ডোমকল এবং ৫ জানুয়ারি হরিহরপাড়ায় হুমায়ুনের নতুন দলের পরের সভা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি দাবি করেছেন, তৃণমূল এবং আইএসএফ থেকে মোট পাঁচ হাজার কর্মী-সমর্থক তাঁর দলে যোগ দেবেন।