আগের রাতেও তাঁরা লাইব্রেরিতে এক সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু সাগরকে দেখে মনে হয়নি তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এমনটাই জানান ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চে (আইসার) দড়ির ফাঁসে মৃত সাগর মণ্ডলের এক সহপাঠিনী তথা বান্ধবী। বিএস-এমএস কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীই ইদানীং সাগরের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সাগরের ডায়েরির ভাঁজে তাঁর ছবিও পাওয়া গিয়েছে। প্রথম সাগরের বাড়িতে ফোন করে দুঃসংবাদও দিয়েছিলেন তিনিই। ১ মে সাগরের দেহ মেেল আইসারের হরিণঘাটা মোহনপুর ক্যাম্পাসে অব্যবহৃত শৌচাগারে। এই ঘটনা নিয়ে রিপোর্ট দিয়েছে আইসারের ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি’। বিস্তারিত তদন্ত করছে ‘এনকোয়ারি কমিটি’।
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় সাগরের বাবা ছেলের তিন সহপাঠীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেন। বরং তিনি আত্মঘাতী হয়ে থাকতে পারেন বলেই তদন্তকারীদের অনুমান। সাগর তফসিলি কোটায় ভর্তি হওয়ায় তাঁকে হেয় করা হত বলে অভিযোগ ছিল বাবার। কিন্তু সাগরের বান্ধবী তা বলছেন না। ঘটনাচক্রে, তিনিও তফসিলি জাতির। পুলিশকে তিনি জানান, সাগর তাঁকে সব বলতেন। কিন্তু জাতের কথা তুলে হেনস্থার কথা কখনও বলেননি। তা হলে, কেন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে গেলেন সাগর? অনুমান, চূড়ান্ত অনিশ্চয়তায় ভুগছিলেন ছাত্রটি। তাঁর আশঙ্কা ছিল, পরীক্ষার ফল খারাপ হলে কেন্দ্রের বৃত্তি বন্ধ হতে পারে। তাঁর বাবা দিনমজুর। তাঁর বান্ধবীর কথা অনুযায়ী, সাগর এ নিয়ে কান্নাকাটিও করতেন। পরীক্ষার সময়ে সেই অস্থিরতা আরও বেড়ে যেত। এ বার পরীক্ষার আগের রাতেই ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে। আইসারের ছাত্র কল্যাণ বিভাগের ডিন অরিন্দম কুন্দগ্রামী জানাচ্ছেন, পরীক্ষার গড় নম্বর ৫০%-র নীচে হলে বা কোনও একটি বিষয়ে ফেল হলে বৃত্তি বন্ধ হতে পারে। গত সেমেস্টারে এক বিষয়ে ফল খারাপ হয় সাগরের। হয়তো তাই তিনি ভয় পাচ্ছিলেন। ডিন বলেন, ‘‘সাগরের গড় নম্বর ছিল ৭৫ %। বৃত্তি বন্ধের আশঙ্কা অমূলক ছিল। ’’
পড়ুয়াকে নিয়ম জানানোর ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের একটা ভূমিকা থাকে। ডিন মানছেন, সে ক্ষেত্রে হয়তো যোগাযোগের অভাব হয়েছিল। উঠছে আরও একটি প্রশ্ন। আইসারের মতো দেশের প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসিক চাপে পড়া পড়ুয়াদের জন্য মনোবিদ নেই কেন? আগে এক জন থাকলেও গত বছর অগস্টে তাঁর চুক্তি শেষ হয়। তাঁর জায়গায় আর কেউ আসেননি। চুক্তি শেষ হওয়ার আগে ওই মনোবিদের কাছে এক বার যান সাগর। পরে আর দেখানো হয়নি। যদিও ডিনের দাবি, ‘‘ওই মনোবিদ কাছেই একটি চেম্বারে বসেন। পড়ুয়াদের বলেছিলাম, সমস্যা হলেই ওই মনোবিদের চেম্বারে নিয়ে যাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy