পিএইচডি গাইড এবং সহ-গবেষকদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে আত্মঘাতী হলেন আইসার কলকাতার এক গবেষক। মৃত্যুর আগে একটি চিঠিও লিখে যান। সেখানে তাঁর সঙ্গে হওয়া সব ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করেছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, তাঁদের নামও উল্লেখ করেছেন সেই চিঠিতে। মৃত ওই গবেষকের নাম অনমিত্র রায়।
উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের বাসিন্দা ওই অনমিত্র। গবেষণা করছিলেন নদিয়ার কল্যাণীর আইসার কলকাতায়। সমাজমাধ্যমে লেখা চিঠিতে ওই গবেষক উল্লেখ করেছেন, তিনি অটিজ়মে আক্রান্ত। শৈশব থেকেই তাঁকে নানা ভাবে শারীরিক এবং মানসিক হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। বাড়িতেও তাঁর সঙ্গে নানা সময়ে দুর্ব্যবহার করতেন বাবা-মা। গবেষক লিখেছেন, তিনি যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়েন, সেই সময় হেনস্থার শিকার হয়ে আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলেন। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে মানসিক অবসাদে চলে গিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:
গবেষক লিখেছেন, সেই অবস্থা কোনও ভাবে কাটিয়ে কলেজের গণ্ডিতে পা রাখেন। কিন্তু তখনও বাড়িতে অত্যাচার কমেনি। কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় আবার মানসিক অবসাদ গ্রাস করে তাঁকে। তার পর থেকে সেই অবস্থা থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারেননি। কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে গবেষণার পথ বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও একই ভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ তুলেছেন এই গবেষক। আরও এক গবেষকের বিরুদ্ধে বার বার হেনস্থার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, অভিযোগ, ওই গবেষকের বিরুদ্ধে তাঁদের সুপারভাইজ়ারের কাছে নালিশ করলেও তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দিতে চাননি। এর পরই আইসার কলকাতার ‘অ্যান্টি র্যাগিং’ সেলে অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু তারাও বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি বলে অভিযোগ। সুপারভাইজ়ার এবং স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিলের এক সদস্যও বলেছিলেন, ল্যাবরেটরির বদনাম হতে পারে, অভিযোগ জানানোর আগে এই কথা ভাবা উচিত ছিল। চিঠিতে গবেষক আরও লিখেছেন, যাঁরা এত দুর্ব্যবহার করেছেন, তাঁদের সঙ্গে সবাইকে খুব স্বাভাবিক ভাবে মেলামেশা করতে দেখে তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছিলেন। যে গবেষক তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিলেন, তাঁকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেটাও হয়নি।
কিন্তু যখন দেখেন, তাঁকে হেনস্থাকারী সেই গবেষকেরই প্রশংসায় পঞ্চমুখ সুপারভাইজ়ার, তাঁর কাজ নিয়ে উচ্ছ্বসিত, তখনও তিনি সরব হন। কিন্তু তখন সুপারভাইজ়ার তাঁর সঙ্গে আবার দুর্ব্যবহার করেন। এর পরই তিনি লেখেন, তাঁর হেনস্থাকারী গবেষকের যেন বিচার হয়। এর পরই চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন তিনি।