E-Paper

বেআইনি ভাবে ওষুধের দোকান হাসপাতালে

প্রায় তিন মাস সব জেনেও কেন নীরব স্বাস্থ্য দফতর? সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ না হয়েও কী করে সরকারি হাসপাতাল চত্বরে, সরকারি জমিতে বেআইনি ভাবে একাধিক ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান চলছে?

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:০৪
বহু রোগীই নির্ভর করেন ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানগুলির উপরে।

বহু রোগীই নির্ভর করেন ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানগুলির উপরে। —ফাইল ছবি।

একই সরকারি হাসপাতালে প্রকাশ্যে ওষুধ বিক্রি করছে দু’-দু’টি ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান। একটি ‘বৈধ’, অন্যটি ‘অবৈধ’! রাজ্যের অন্তত ৪টি সরকারি হাসপাতাল থেকে এই অভিযোগ স্বাস্থ্য দফতরে জমা পড়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ১৪টি জায়গায় সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে এই ব্যবস্থা চলছে গত অগস্ট মাস থেকে।

প্রায় তিন মাস সব জেনেও কেন নীরব স্বাস্থ্য দফতর? সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ না হয়েও কী করে সরকারি হাসপাতাল চত্বরে, সরকারি জমিতে বেআইনি ভাবে একাধিক ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান চলছে? তারা সরকারকে ভাড়া দিচ্ছে না, সেখানকার বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে, সরকারি হাসপাতালকে ওষুধও বিক্রি করছে বলে অভিযোগ এবং সরকারি হাসপাতালের রোগীরাও সেই দোকান থেকে ওষুধ কিনছেন।

খোদ স্বাস্থ্য দফতর নোটিস জারি করে ১৪ অগস্টের পরে অবিলম্বে দোকান বন্ধ করে জায়গা খালি করতে বলার পরেও কেন তা চলছে? রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা স্বপন সোরেনের বক্তব্য, ‘‘বিষয়টা খতিয়ে দেখতে হবে।’’

২০২৩ সালে সরকারি হাসপাতাল চত্বরে পিপিপি মডেলে (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিতে) ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান চালানোর নতুন দরপত্র ডাকা হয়। মার্চে দরপত্র খোলার পর ‘কোলে মেডিক্যাল’ নামে একটি সংস্থা সবচেয়ে বেশি হাসপাতালে দোকানের বরাত পায়। তার মধ্যে হাওড়া জেলা হাসপাতাল, আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজ, বনগাঁ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ও বসিরহাট জেলা হাসপাতালও ছিল। এই চার জায়গায় পুরনো যে ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান ছিল, তারা জায়গা ছেড়ে দেয়নি এবং দোকান বন্ধ করেনি। অথচ, তারা সরকারি দরপত্রে বাছাই করা সংস্থা নয়।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের পিপিপি সেল এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষদের বার বার অভিযোগ জানিয়েছে কোলে মেডিক্যাল। সংস্থার বিজ়নেস অপারেশনাল ম্যানেজার সুজিত দেবনাথের কথায়, ‘‘ওই চার হাসপাতালে সরকারি অনুমতি ছাড়াই অন্য দু’টি সংস্থাকে দোকান চালিয়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে। আর আমাদের হাসপাতালের পিছনের দিকে ছোট্ট জায়গায় দোকান নাম কা ওয়াস্তে চালাতে বলা হচ্ছে। তিন মাস ধরে ওই চার হাসপাতালের সুপারদের ও স্বাস্থ্য ভবনে অভিযোগ জানিয়ে লাভ হয়নি।’’

আরামবাগ ও হাওড়ায় নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান চালানোর অভিযোগ উঠেছে অন্নপূর্ণা মেডিক্যালের বিরুদ্ধে। সংস্থার তরফে প্রদীপ দে বলেন, ‘‘কোলে মেডিক্যালকে সরকারের বরাত দেওয়া নিয়ে আমাদের একাধিক মামলা চলছে। হাসপাতালের সুপারেরা যেহেতু আমাদের উঠতে বলছেন না, তাই উঠিনি! তা ছাড়া, স্বাস্থ্য দফতরের কাছে প্রচুর টাকা বকেয়া রয়েছে।’’

এ ব্যাপারে হাওড়া জেলা হাসপাতালের সুপার নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়কে একাধিক বার ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। আর আরামবাগ মেডিক্যালের সুপার ইন্দ্র দত্ত মণ্ডল দাবি করেন, ‘‘কোলে মেডিক্যাল দোকান সময়মতো চালু করতে পারছে না বলেই অন্নপূর্ণাকে দোকান চালিয়ে যেতে বলেছি। হাসপাতালে ওষুধের দোকান না থাকলে রোগীদের ক্ষোভ এসে পড়বে আমাদের উপর।’’ যদিও কোলে মেডিক্যালের দাবি, সুপারের অভিযোগ সত্য নয়।

বনগাঁ ও বসিরহাটে অবৈধ ভাবে দোকান চালানোর অভিযোগ উঠেছে ঘোষ মেডিক্যালের বিরুদ্ধে। সংস্থার তরফে সাহেব ঘোষ বলেন, ‘‘জানি, বিষয়টা বেআইনি। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে আমাদের আরও কিছু দিন দোকান চালাতে দেওয়ার অনুমতি চেয়েছি। কারণ, কোলের বিরুদ্ধে আমরাও মামলা করেছি। সেটা চলছে। আর সরকারের থেকে অনেক টাকা পাব। উঠে গেলে সেই টাকা উদ্ধার হবে কি না সন্দেহ।’’

বিষয়টি নিয়ে বসিরহাট হাসপাতালের সুপার রঞ্জন রায়ের বক্তব্য, ‘‘ঘোষ মেডিক্যাল আমাকে বলেছিল, জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে একটু সময় লাগবে। মাঝখানে পুজো এসে গেল। দেখছি বিষয়টা।’’ বনগাঁ হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বারুইয়ের বক্তব্য, ‘‘গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে তিন বার ওদের উঠে যেতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ বার ওরা কথা না শুনলে ড্রাগ কন্ট্রোলকে বলে সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করার পথে স্বাস্থ্য দফতরকে হাঁটতে হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

medicine medical college Health Department

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy