Advertisement
E-Paper

উড়ান বন্ধে হতাশ শিল্প মহল

মাত্র ছ’মাস আগেই প্রথম যাত্রায় সঙ্গী হয়েছিলেন তাঁদের অনেকে। সেই স্মৃতি এখনও টাটকা। কিন্তু এই ক’মাস চলার পরেই অন্ডাল থেকে কলকাতা হয়ে দিল্লির বিমান পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে হতাশ আসানসোল-দুর্গাপুরের বণিক ও শিল্প মহলের অনেকে।

সুব্রত সীট ও সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৬ ০৬:৪৩
আপাতত শেষ উড়ান। বুধবার অন্ডাল বিমানবন্দরে বিকাশ মশানের তোলা ছবি।

আপাতত শেষ উড়ান। বুধবার অন্ডাল বিমানবন্দরে বিকাশ মশানের তোলা ছবি।

মাত্র ছ’মাস আগেই প্রথম যাত্রায় সঙ্গী হয়েছিলেন তাঁদের অনেকে। সেই স্মৃতি এখনও টাটকা। কিন্তু এই ক’মাস চলার পরেই অন্ডাল থেকে কলকাতা হয়ে দিল্লির বিমান পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে হতাশ আসানসোল-দুর্গাপুরের বণিক ও শিল্প মহলের অনেকে। তবে শিল্পাঞ্চলের অনেকেরই মতে, যেখানে নতুন বিনিয়োগ তো দূর, পুরনো কারখানাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেই পরিস্থিতিতে শিল্পনির্ভর অর্থনীতির উপরে ভর করে চালু বিমানে পর্যাপ্ত যাত্রী হবে কি না, সে নিয়ে গোড়া থেকেই সংশয় ছিল।

বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ দিল্লি থেকে আসা এয়ার ইন্ডিয়ার ১২২ আসনের বিমান অন্ডাল বিমানবন্দর থেকে উড়ে গেল কলকাতার দিকে। আপাতত এটিই এই বিমানবন্দর থেকে শেষ উড়ান। লাভের মুখ না দেখায় এই রুটে এখন আর বিমান না চালানোর কথা জানিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। এই বিমানবন্দর থেকে অবশ্য এর আগেও বেশ কিছু বিমান পরিষেবা চালু হওয়ার পরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কলকাতা, বাগডোগরা, কোচবিহার— কোনও রুটেই পরিষেবা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।

এ দিন দিল্লি থেকে বিমানে চড়ে এসে অন্ডালে নামেন দুর্গাপুরে এনআইটি-র শিক্ষক পার্থপ্রতিম সেনগুপ্ত। টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের শহর উড়ান মানচিত্র থেকে আপাতত মুছে গেল। খারাপ লাগছে। মাঝে-মধ্যেই আমাদের অনেককে দিল্লি যেতে হয়। সেই আবার দমদম গিয়ে বিমান ধরার ঝক্কি পোহাতে হবে।’’ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী কমল কিশোরের দাবি, ‘‘যাত্রী যে একেবারে হতো না, তা নয়। কী করে বন্ধ হয়ে গেল, বুঝতে পারছি না। আমাদের খুব অসুবিধে হবে।’’

শহরের বধূ উশ্রী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ঘরের পাশে এত ভাল একটা এয়ারপোর্ট ফাঁকা পড়ে থাকবে। অথচ, প্রয়োজনে আমরা বিমানে চড়ার সুযোগ পাব না, এটা ভাবা যায় না!’’ দুর্গাপুরের সদানন্দ দাস কত্থক শিল্পী। থাকেন দিল্লিতে। মাঝে মাঝে দল নিয়ে দুর্গাপুরে আসেন অনুষ্ঠান করতে। এ দিন দিল্লি থেকে ফোনে জানান, ৭ অক্টোবরের টিকিট কাটা ছিল। এয়ার ইন্ডিয়া ই-মেল করে জানিয়েছে, দুর্গাপুর নয়, দমদম পর্যন্ত টিকিট বহাল থাকছে। তিনি বলেন, ‘‘দমদমে নেমে গাড়িতে দুর্গাপুর যেতে হবে। সময় ও টাকা, দুটোই বেশি খরচ হবে।’’ তাঁর আশা, ‘‘সাময়িক বন্ধ হলেও আবার উড়ান চালু হবে বলে মনে করছি।’’

উড়ান বন্ধে হতাশ শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি। দক্ষিণবঙ্গের ন’টি জেলার সমন্বয়ে গঠিত ‘ফেডারেশন অব সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের কার্যকরি সভাপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতান জানান, তিনি এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আর্জি জানিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছেন। গত ৭ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে এই উড়়ান চালুর দিনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দিল্লি গিয়েছিলেন তিনিও। রাজেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘শহরে বিমান পরিষেবা থাকলে শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যের উপরে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এলাকার অর্থনীতির উন্নতি হয়। ধীরে হলেও এই শিল্পাঞ্চল সেই সুফল পেতে শুরু করেছিল। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে আমরা আশাহত।’’

প্রথম দিন বিমানে যাত্রী ছিলেন আসানসোল চেম্বার অব কমার্সের প্রাক্তন সভাপতি সুব্রত দত্তও। তাঁর মতে, যাত্রীর অভাবে বিমান পরিষেবা বন্ধের সিদ্ধান্তে ভিন্‌ রাজ্যের শিল্পমহলে ভুল বার্তা যাবে। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘দিল্লি উড়ানের পড়ে অন্ডাল থেকে বেঙ্গালুরু, চেন্নাই ও মুম্বুইয়ের বিমান চালুর কথা ছিল বলে শুনেছিলাম। কিন্তু এখন তো আর সে সুযোগ থাকল না।’’ ‘বেঙ্গল সাবার্বান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’-এর সাধারণ সম্পাদক প্রফুল্ল ঘোষের মতে, ‘‘নতুন লগ্নি নেই। বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আর্থিক পরিস্থিতি ভাল নয়। তাই বিমানে পর্যাপ্ত যাত্রী হয় না।’’ পরিস্থিতি না পাল্টালে এই বিমানবন্দরের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল নয় বলে মনে করেন তাঁরা। আর এক বণিক সংগঠন ‘দুর্গাপুর চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর সম্পাদক হরপ্রসাদ ঘোষাল বলেন, ‘‘অনেক আশা জাগিয়ে দিল্লির উড়ান চালু হয়েছিল। শিল্পাঞ্চলের জন্য এটা খুবই খারাপ খবর।’’ এই সংগঠনটির সভাপতি চন্দন দাস বলেন, ‘‘মাত্র আড়াই ঘণ্টায় দিল্লি যাওয়ার সুযোগ মিলেছিল। শুধু দুর্গাপুর নয়, আসানসোল, বাঁকুড়া, বীরভূমের মানুষজনও এখান থেকে বিমান ধরতে পারতেন। সুবিধে হতো।’’

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৫-র ১০ মে প্রথম যাত্রী হিসেবে অন্ডাল থেকে বিমানে দিল্লি যান। তার পরে ১৮ মে এয়ার ইন্ডিয়ার সহযোগী সংস্থা ‘অ্যালায়েন্স এয়ার’ কলকাতা-দুর্গাপুর রুটে ৪৬ আসনের এটিআর বিমান চালানো শুরু করে। পর্যাপ্ত যাত্রী কোনও দিনই হয়নি। ৭ ডিসেম্বর এয়ার ইন্ডিয়ার কলকাতা-দুর্গাপুর-দিল্লি রুটে বিমান পরিষেবার সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২১ ডিসেম্বর বাণিজ্যিক পরিষেবা শুরু হয়। তবে বন্ধ হয়ে যায় কলকাতা-দিল্লি রুটের আগের পরিষেবা। ৩১ ডিসেম্বর অন্ডাল-কলকাতা-কোচবিহার রুটে ছোট বিমান চালানো শুরু করে এক বেসরকারি সংস্থা। আর একটি সংস্থা কলকাতা হয়ে বাগডোগরা পর্যন্ত ছোট বিমান চালানো শুরু করে। কোনওটিই মাসখানেকের বেশি চলেনি। বুধবার বন্ধ হয়ে গেল একমাত্র চালু উড়ানটিও।

Andal airport Plane Air India Industrial sector
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy