এক পক্ষের আশঙ্কা, ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে কোনও অপচেষ্টা দেখা যেতে পারে। অন্য পক্ষ সরব, এ সব অপপ্রচার। বাংলা ও বাঙালির অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের অঙ্গন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ ঘিরে বিবদমান দু’টি শিবিরের সংঘাতচলছেই। ঠিক এক বছর আগে পরিষদের বার্ষিক সভায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছিল। আজ, রবিবার পরিষদের বার্ষিক সাধারণ সভা ও কর্মাধ্যক্ষ বাছাইয়ের ভোটাভুটির আগে কয়েকটি মহলে নানা আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
পরিষদে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নতুন একটি প্যানেলের আহ্বায়কদের তরফে বিবৃতিতে ওই প্রতিষ্ঠানটির কাজকর্মে গণতন্ত্রের অভাব নিয়ে আক্ষেপ করা হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, পরিষদের কাজকর্ম যে ভাবে চলছে, তাতে অতীতে অনেক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদইকার্যনির্বাহী সমিতিতে অস্বস্তির শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনুপ মতিলাল, শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায়, কল্যাণ নন্দী, উৎপল ঝা, সাইফুল্লা, সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ কয়েক জনের নাম উল্লেখও করা হয়েছে। এ বার বার্ষিক সাধারণ সভার আগে কার্যনির্বাহী সমিতির সাম্প্রতিক বৈঠকে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরোধীপ্যানেলের প্রতিনিধিদের মনোনয়ন কোনও কারণ না দেখিয়ে বাতিল করা হয়েছে বলেও জানান পরিষদের প্রাক্তন সহ-সভাপতি স্বাগতা দাস মুখোপাধ্যায়। তবে তাঁরা ওই প্যানেলের নামগুলি ফের জমা দিয়েছেন বলেও স্বাগতা জানান।কয়েকটি মহলের আশঙ্কা, বার্ষিক সভায় ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলটিকে ভোটাভুটিতে যেতে বাধা দেওয়া হতে পারে। পরিষদের বিদায়ী সম্পাদক রমেন সর অবশ্য পরিষদের কাজকর্ম সব কিছুই বিধিমাফিক হচ্ছে বলে দাবি করেন। তাঁর বক্তব্য, “পরিষদের কার্যনির্বাহী সমিতি ভোটাভুটিতে একটি প্যানেল বেছে নিতেই পারেন। কিন্তু ওই প্যানেলের বিরুদ্ধের নামগুলি যদি ১ ফাল্গুনের আগে পেশ করা হয়ে থাকে, বার্ষিক সাধারণ সভায় তা ফের উত্থাপন করা যেতেই পারে। বার্ষিক সভায় যা হবে, সব নিয়ম মেনেই হবে।” তবু নানা মতবিরোধ ও বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় ভোটাভুটির বিষয়টি সব শিবিরই স্থানীয় পুলিশকে জানিয়েছে।
পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের মধ্যেও অবশ্য এই জ্ঞান ভান্ডারের সংরক্ষণ বা প্রসার নিয়ে নানা অভিযোগ আছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক রাজ্যেশ্বর সিংহ বলেন, “অতীতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার জন্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদেরাও পরিষদে প্রত্যাশিত সাহায্য পাননি বলে অভিযোগ। পরিষদের অমূল্য সম্পদ (যা বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের দলিল) ডিজিটাইজ় করায় কোনও তৎপরতা নেই। ওই সম্পদের ডিজিটাল নথি থাকলে, পরিষদের ক্ষমতা দখলের সংঘাতটাই গুরুত্বহীন হয়ে পড়ত।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)