বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র
আচার্যের অনুরোধ সত্ত্বেও আন্দোলন থেকে পিছু হটল না কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের নিয়ে গঠিত যৌথ মঞ্চ।
গত ২৫ জুন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স অফিসারকে সাসপেন্ড এবং ওই পদ বিলুপ্তির প্রতিবাদে অবস্থান শুরু করে যৌথ মঞ্চ। ওই দিনই সিন্ডিকেটের বৈঠক ছিল। সেই বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্ত না হওয়ায় সারা রাত সেনেট হলের সামনে অবস্থান করেন তাঁরা। তার পর থেকে প্রতি দিন ওই অবস্থান চলতে থাকে। ১ জুলাই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও বহিরাগতরা যৌথ মঞ্চের কয়েকজন কর্মীকে আক্রমণ করে বলে অভিযোগ। সেই ঘটনায় প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে শাসক দল।
এর মধ্যে সোমবার আচার্য রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। সেই সময় এক লিখিত বিবৃতিতে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের অবস্থান তুলে নিতে আর্জি জানিয়েছিলেন আচার্য। মঙ্গলবার সেই বিবৃতিটি উপাচার্য ফের পাঠ করে শোনান। শুধু তাই নয়, যৌথ মঞ্চের নেতাদের ডেকে পাঠিয়ে এ দিন তাঁদের কথা শোনেন রাজ্যপাল নিজেও। শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ হয়েছে বলে আগে যে অভিযোগ শিক্ষকরা করেছিলেন, এ দিন সে প্রসঙ্গ রাজ্যপালের কাছে তোলেননি তাঁরা। তবে শিক্ষকদের উপরে হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে মঞ্চের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স অফিসারকে সাসপেন্ড করা ও পদ বিলুপ্তির বিষয়ে রাজ্যপাল কিছু জানতেন না। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা হবে। এর পরে যৌথ মঞ্চ তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেবে বলেই আশা করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তা হয়নি।
এ দিন রাজভবন থেকে ফিরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন (কুটা)-র সাধারণ সম্পাদক দিব্যেন্দু পাল জানিয়ে দেন, তাঁরা অবস্থান চালিয়ে যাবেন। দিব্যেন্দুবাবু বলেন, ‘‘আমরা রাজ্যপালকে জানিয়েছি, দয়া করে আমাদের অবস্থান করার অনুমতি দিন। তবে আমরা অবস্থানের সময় আরও কমিয়ে আনব।’’ যদিও রাজ্যপালের বক্তব্য ছিল, অবস্থান পুরোপুরি তুলে নিলেই ভাল হয়। আন্দোলনের বেশ কিছু সমর্থকও অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত মানতে পারছেন না। এক শিক্ষক বলেন, ‘‘রাজ্যপালের অনুরোধ মেনে অবস্থান তুলে নিলে মানুষের কাছে ভাল বার্তা পৌঁছত। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে রাজ্যপাল যে ভূমিকা নিয়েছেন, আমরা তার বিপক্ষে বলেই এখন মনে হবে।’’
কেন তা হলে অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দিল যৌথ মঞ্চ? দিব্যেন্দুবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘অতীতে বহু অভিযোগ নিয়ে বহু আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু পরে দেখা গিয়েছে অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। তাই এ বারে পুরোপুরি আন্দোলন তুলে নেওয়া হল না।’’ তিনি জানান, শুক্রবার গণ কনভেনশন রয়েছে। সেখানেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আপাতত প্রতি দিন দুপুর দু’টো থেকে চারটে পর্যন্ত অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়াও তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সুরঞ্জনবাবুকেই যাতে উপাচার্য পদে রেখে দেওয়া হয়, রাজ্যপালকে সেই অনুরোধও করেছে কুটা। দিব্যেন্দুবাবুর দাবি, আচার্য জানিয়েছেন, সিদ্ধান্ত নেবেন সুরঞ্জনবাবুই।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য কাজে যোগ না দেওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়েই যাবেন সুরঞ্জনবাবু। দুপুরে ফিনান্স অফিসারের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য রাজ্যপালের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
যৌথ মঞ্চের সদস্যদের আগে এ দিন রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে যান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। স্বাভাবিকতা ফেরানো নিয়েই এ দিন শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ত্রিপাঠীর কথা হয়েছে বলে রাজভবন সূত্রের খবর। পরে পার্থবাবু বলেন, ‘‘রাজ্যপালকে জানিয়েছি, ওঁর বক্তব্যের সময়ে আমরা সহমত। আবার বলছি, শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে যে কোনও প্রতিষ্ঠানেরই স্বাধিকার আছে। কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কোনও প্রতিষ্ঠানে আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগ এলে সরকার চুপ করে থাকতে পারে না। কারণ, সরকার করদাতা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy