Advertisement
১৯ মে ২০২৪
পুরসভার বিদ্যাসাগর মঞ্চ

জবরদখল উচ্ছেদ ঘিরে তৃণমূল বনাম তৃণমূল

পুর-সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয়েছে থানা গড়ার জন্য। অথচ ‘দখলদার’ হকারেরা সেখানে কব্জা ছাড়তে নারাজ। আর এই দ্বন্দ্বের জেরে শাসকদল অস্বস্তিতে। কারণ, তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কোমর বেঁধে পথে নেমে পড়েছে তৃণমূলেরই শ্রমিক সংগঠন!

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৯
Share: Save:

পুর-সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয়েছে থানা গড়ার জন্য। অথচ ‘দখলদার’ হকারেরা সেখানে কব্জা ছাড়তে নারাজ। আর এই দ্বন্দ্বের জেরে শাসকদল অস্বস্তিতে। কারণ, তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কোমর বেঁধে পথে নেমে পড়েছে তৃণমূলেরই শ্রমিক সংগঠন!

বৃহস্পতিবার এই নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠল সিআইটি পদ্মপুকুর। ওখানে কলকাতা পুরসভার একটি বাড়িকে সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। বাড়িটিতে বেনিয়াপুকুর থানা কমপ্লেক্স গড়ে ওঠার কথা। কিন্তু বেঁকে বসেছেন দখলদার হকারেরা। তাঁদের দাবি, পুনর্বাসন দিতে হবে, নচেৎ জায়গা ছাড়বেন না।

এবং এই দাবিতে এ দিন ওই বিল্ডিং ও তার চত্বর ‘দখল’ করে থাকা হকারেরা তৃণমূলের ঝান্ডা হাতে বিক্ষোভ দেখান। যার পুরোভাগে ছিলেন তৃণমূলের শ্রমিক নেতা প্রমথেশ সেন। যদিও মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সাফ কথা, ‘‘ওটা সরকারি সম্পত্তি। পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। কেউ জোর করে আটকে রাখতে পারে না। তা সে যে ইউনিয়নই হোক না কেন।’’

পুরভবনের খবর: সিআইটি পদ্মপুকুরে প্রায় কুড়ি কাঠা জমির উপরে বাড়িটি তৈরি হয়েছিল ১৯৯৩-এ, বাম পুরবোর্ডের জমানায়। পোশাকি ঠিকানা— পি ৮৫/৩ ননীগোপাল রায়চৌধুরী রোড। ভবনের নাম দেওয়া হয় ‘বিদ্যাসাগর মঞ্চ’। জন্ম ইস্তক সেটি কার্যত অব্যবহৃত হয়ে পড়ে রয়েছে। ক্রমে ভবনের ভিতরে-বাইরে গেড়ে বসেছে হকারবাহিনী। উঠেছে নানা অসামাজিক কাজকর্মের অভিযোগ। পুর-সূত্রের কথায়, ‘‘এমনিতেই এলাকাটা স্পর্শকাতর। তার উপরে বিদ্যাসাগর মঞ্চের ব্যাপার-স্যাপার প্রশাসনের রীতিমতো মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’

এই পরিস্থিতিতে ভবন হস্তান্তরের উদ্যোগ দানা বাঁধে। পুর-বাজার দফতর সূত্রের খবর: ২০১৪-য় কলকাতার পুলিশ কমিশনার একটি চিঠি দেন মেয়র শোভনবাবুকে। যার বক্তব্য: পদ্মপুকুরের অব্যবহৃত বাড়িটি দুষ্কর্মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। পুলিশ বারবার অভিযান চালিয়েছে। সমস্যার পাকাপাকি সুরাহার স্বার্থে বাড়িটি পুলিশ-কর্তৃপক্ষকে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছিল, ভবন হাতে পেলে লালবাজার তা সারিয়ে-সুরিয়ে বেনিয়াপুকুর থানা কমপ্লেক্স গড়তে পারে।

প্রস্তাবে পুরসভা সম্মতি দিলেও গত দু’বছরে হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। মূল কারণ সেই দখলদারি। গেড়ে বসা হকারেরা পরিষ্কার জানিয়ে রেখেছেন, তাঁদের অন্যত্র বসার বন্দোবস্ত না-করে কিচ্ছুটি করা যাবে না। বস্তুত পুর-প্রশাসন শিগগির ভবনের দখল নিতে পারে— এই খবর রটে যেতেই এ দিন সংশ্লিষ্ট হকারদের নিয়ে বিক্ষোভে নেমে পড়ে তৃণমূলের ইউনিয়ন। যার নেতা প্রমথেশবাবুর দাবি, ‘‘থানা হোক বা যা-ই হোক, আগে হকারদের জায়গা দিতে হবে।’’

তৃণমূলশাসিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে দলের এক সংগঠনের এ হেন বিক্ষোভ দেখে পুরমহল স্বভাবতই আলোড়িত। বাজার দফতরের পূর্বতন মেয়র পারিষদ তারক সিংহের প্রতিক্রিয়া, ‘‘বছরখানেক আগে গিয়ে দেখেছিলাম, হকারেরা দখল করে বসে রয়েছে। তখন বিল্ডিংয়ের চার দিক খোলা ছিল। পরে পাঁচিলে ঘেরা হয়।’’ তারকবাবুর পরে বাজার দফতরের দায়িত্বে এসেছেন যিনি, সেই মেয়র পারিষদ আমিরুদ্দিন ববি এ দিন বলেন, ‘‘মেয়র পরিষদে ঠিক হয়েছে, বিল্ডিং পুলিশের হাতে দেওয়া হবে। মেয়র এ মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন। গত অগস্টে কলকাতা পুলিশ প্রশাসনকে তা জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। এখন শুধু হস্তান্তরের কাজ বাকি।’’

কিন্তু হকারেরা যে সরতে নারাজ?

মেয়র পারিষদ মুখ খুলতে চাননি। ‘‘পুর-প্রশাসনের কর্তা হলেন মেয়র। শেষ কথা তিনিই বলবেন।’’— মন্তব্য আমিরুদ্দিনের। মেয়র অবশ্য এ দিন বিকেলে বলেন, ‘‘আমি পুলিশকে বলে দিয়েছি, আপনারা বিল্ডিংয়ে ঢুকে কাজ শুরু করে দিন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tmc conflict
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE