E-Paper

নজির তৃণমূলের, স্থান চান বিজেপির আদিরা

গত বিধানসভা ভোটে হারের পরে দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে সুকান্ত মজুমদারকে রাজ্য সভাপতি করে বিজেপি। কার্যত তার পরেই দলের নানা স্তরের সাংগঠনিক ‘ব্যাটন’ নব্য-নেতাদের দেওয়া নিয়ে উষ্মার স্বর শোনা যায় ‘গুরুত্বহীন’ প্রবীণদের গলায়।

বিপ্রর্ষি চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:০৩

— প্রতীকী চিত্র।

দলের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি থেকে শৃঙ্খলা-কমিটিতে প্রবীণ নেতাদের সামনে এনেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পদক্ষেপকেই দৃষ্টান্ত খাড়া করে এ বার তাঁদেরও যাতে দলে গুরুত্ব বাড়ে, সে জন্য সওয়াল করছেন বিজেপির প্রবীণ নেতাদের একাংশ। এই সূত্রেই বঙ্গ-বিজেপির নব্য অংশকে সাংগঠনিক নানা প্রশ্নেও নিশানা করছেন তাঁরা।

গত বিধানসভা ভোটে হারের পরে দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে সুকান্ত মজুমদারকে রাজ্য সভাপতি করে বিজেপি। কার্যত তার পরেই দলের নানা স্তরের সাংগঠনিক ‘ব্যাটন’ নব্য-নেতাদের দেওয়া নিয়ে উষ্মার স্বর শোনা যায় ‘গুরুত্বহীন’ প্রবীণদের গলায়। ইতিমধ্যে সুকান্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ায় সভাপতি পদে বদল যখন কার্যত অনিবার্য, সেই প্রেক্ষিতেই দলের নবীন-প্রবীণ ‘দ্বন্দ্ব’ ফের সামনে আসতে শুরু করেছে। সেই সূত্রেই বিভিন্ন উপনির্বাচনে শোচনীয় ফল, লোকসভা নির্বাচনে ২০১৯-এর তুলনায় এ বারে বিজেপির আসন কমার মতো নানা ঘটনার দৃষ্টান্তও দিচ্ছেন আদি-নেতারা।

তৃণমূলে সাম্প্রতিক সাংগঠনিক দায়িত্ব বণ্টনের উদাহরণ টেনে রাজ্য বিজেপির এক নেতার বক্তব্য, সাফল্যের শীর্ষে থেকেও মমতা দল পরিচালনায় প্রবীণদের উপরেই যেখানে আস্থা রাখছেন, সেখানে কঠিন পরিস্থিতিতে অভিজ্ঞ নেতাদের ঘরে বসিয়ে রাখছে বিজেপি। যাঁরা এখন দল পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই বিজেপিতে এসেছেন ২০১৯-এর পরে। বিজেপি কী, সেটাও অনেকেই জানেন না বলে ওই অংশের দাবি।

দীর্ঘ দিনের বিজেপি নেতা রাজকমল পাঠকেরও স্পষ্ট বক্তব্য, “সুকান্তের নিজের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা চার বছরের। ওঁর সঙ্গের লোকজন তৃতীয় সারির খেলোয়াড়! প্রথম সারির খেলোয়াড়দের গ্যালারিতে বসিয়ে রাখা হয়েছে। যাঁরা কেন্দ্রীয় ভাবে দায়িত্বে, তাঁরা কলকাতায় এসে রাজারহাটের হোটেলে বসে রিপোর্ট নেন, তা না হলে পাঁচতারা পার্টি অফিসে বসে থাকেন। সাধারণ কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই।”

দলের সাংগঠনিক ফাঁকফোকরের কথাও উঠে আসছে। বিজেপির এক প্রবীণ নেতা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০১১-র বিধানসভা ভোটে মাদারিহাটে জয়ী আরএসপি-র থেকে মাত্র ৭,৯০৯ ভোটে পিছিয়ে ছিল দল। অর্থাৎ, সেখানে দলের পুরনো সংগঠন রয়েছে। মাদারিহাট আসনে সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে হারের সূত্রেই ওই নেতার বক্তব্য, “আমাদের সংগঠনের কী হল? সন্ত্রাস হলে, তা রোখা গেল না কেন?” উঠছে শৃঙ্খলার প্রশ্নে ‘দ্বিচারিতা’র কথাও। শৃঙ্খলার কথা বলে বিজেপির পুরনো নেতা রীতেশ তিওয়ারিকে বহিষ্কার করা হলেও সম্প্রতি উপনির্বাচনে দলের ভরাডুবির পরে রাজ্য সভাপতির বিরুদ্ধে অর্জুন সিংহ, জিতেন্দ্র তিওয়ারিরা মুখ খুললেও তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলছেন আদি-নেতাদের একাংশ।

দলের পুরনো অংশের বক্তব্যকে সমর্থন করে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপও বলছেন, “বিজেপি বলে যাঁরা পরিচিত, তাঁদেরই দেখা যাচ্ছে না! তা হলে কর্মীরা কার ভরসায় রাস্তায় নামবেন? নেতাদের উচিত সকলকে নিয়ে চলা। আমি যখন যেখানে যাই, পুরনো নেতাদের ডাকি। আশা করি, দলে নতুন কমিটি তৈরি হলে সেখানে পুরনো নেতাদের জায়গা দেওয়া হবে।”

যদিও দ্বন্দ্ব-তত্ত্বকে উড়িয়ে দিয়ে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “তৃণমূল ব্যক্তি ও পরিবার নির্ভর দল। আমাদের দল আদর্শ ও সংগঠন নির্ভর। যাঁরা দলের কাজ করেন, সকলেই দলের নেতা। আদি-নব্য বলে কিছু নেই। পুরনোদের মাথায় রাখতে হবে, নতুনেরা সুযোগ না-পেলে দল এগোবে না। আর নতুনদের মনে রাখতে হবে, পুরনোরা প্রদীপ জ্বেলে বসে না-থাকলে দল আজ এই জায়গায় পৌঁছত না!”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

BJP TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy