সিঙ্গাপুরের সিল্ক এয়ারের বিমানটিকে কলকাতায় নামার অনুমতি দিয়ে দিয়েছিল শহরের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)। রাত তখন প্রায় ৯টা। বিমানের পাইলট নামার সময়ে দেখেন কলকাতার রানওয়ে দিয়ে ওড়ার জন্য দৌড়চ্ছে অন্য একটি বিমান। যেন তাঁর বিমানের দিকেই উড়ে আসছে অন্য বিমানটি।
ঘাবড়ে যান সিল্ক এয়ারের বিদেশি পাইলট। তিনি মুখ ঘুরিয়ে চক্কর কাটতে যান। আকাশে বিমান পরিবহণে এক একটা মিনিট ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সিল্ক এয়ার মুখ ঘোরানোর সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় তার ঘাড়ের কাছে এসে পড়ে কলকাতার রানওয়ে থেকে উঠে আসা ইন্ডিগোর বিমান। কলকাতা থেকে পেট ভর্তি যাত্রী নিয়ে সেটি হায়দরাবাদ যাচ্ছিল। সামান্য সময়ের হেরফেরে রক্ষা পায় দু’টি বিমানই। বেঁচে যান প্রায় আড়াইশো যাত্রী।
গত ১১ ডিসেম্বরের এই ঘটনার তদন্তে নেমেছে ভারতে বিমান পরিবহণের নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ডিজিসিএ)। আপাতত কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সে দিন কলকাতার এটিসিতে থাকা কন্ট্রোলার-কে। দেখা হচ্ছে, যে সময়ে সিল্ক এয়ারকে নেমে আসতে বলা হয়েছিল, তখন নামলে রানওয়ে থেকে উড়ে যাওয়া ইন্ডিগোর সঙ্গে তার ধাক্কা লাগতো কি না। সিল্ক এয়ারের পাইলট স্রেফ ভয় পেয়েই বিমানের মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন কি না তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
এটিসি অফিসারদের দাবি, সমস্ত হিসেব করেই সিল্ক এয়ারকে নামার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের কথা মতো সিল্ক এয়ার নেমে এলে কোনও সমস্যা হতো না। কিন্তু, সিল্ক এয়ারের পাইলট নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে চক্কর কাটতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন।
সূত্রের খবর, ডিজিসিএ-এর নিয়ম অনুযায়ী আকাশে দু’টি বিমানের উপর-নীচের ন্যূনতম ব্যবধান এক হাজার ফুট থাকার কথা। কিন্তু, সে দিন দু’টি বিমানের মধ্যে উপর-নীচের ব্যবধান শূন্যতে নেমে আসে। শুধু আড়াআড়ি ব্যবধান প্রায় ৯ কিলোমিটার থাকায় বেঁচে যায় প্রায় আড়াইশো মানুষের প্রাণ।
ইন্ডিগোর যুক্তি, কলকাতার এটিসি-র নির্দেশ মেনে তাদের পাইলট কলকাতার রানওয়ে ছেড়ে উড়েছেন। ফলে, তাদের তরফে কোনও গাফিলতি নেই। প্রাথমিক ভাবে সে কথা মেনেও নিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। শুধু ইন্ডিগোর সেই বিমানে থাকা যাবতীয় তথ্য বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তদন্তের স্বার্থে। ইন্ডিগোর অভিযোগ, সে দিন সিল্ক এয়ারের পাইলটকে বিমানের মুখ ঘোরাতে বলেছিল কলকাতা এটিসি-ই।
কলকাতার এটিসি অবশ্য সেই অভিযোগ মানতে রাজি নয়। তাদের দাবি, সিল্ক এয়ারকে শুধু নামার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তাকে আচমকা মুখ ঘুরিয়ে চক্কর কাটার কথা বলা হয়নি। এটিসি-তে থাকা কন্ট্রোলার ও পাইলটদের মধ্যে কথোপকথনের সেই টেপ ডিজিসিএ-এর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সিল্ক এয়ার অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছে যে, তাদের পাইলট নামার সময়ে অন্য বিমানকে রানওয়ে থেকে উড়তে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন। পরে সেটি নির্বিঘ্নে নেমে আসে কলকাতায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy