Advertisement
১১ মে ২০২৪
IPS Officer

পদোন্নতি হলে বেতন ছাঁটাই! ক্ষুব্ধ আমলারা

প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘কাউকে টাকা ফেরত দিতে হবে না। প্রত্যেকের বেতনের বিষয়টি আলাদা ভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২১ ০৫:৫৪
Share: Save:

এ যেন ‘উলটপুরাণ’! পদোন্নতি হলে বা চাকরি ক্ষেত্রে দায়িত্ব বাড়লে সাধারণ ভাবে বেতনও বাড়ে। এটাই দস্তুর। অথচ সরকারি ক্ষেত্রে পদমর্যাদা বৃদ্ধির পরেও বেতন কমছে এক ধাক্কায় অনেকটা! এবং এটা ঘটছে আইএএস স্তরে। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে যে, যাঁদের বেতন কমছে, তাঁদের সরকারকে টাকা ফেরত দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ভোটের মুখে এমন ঘটনায় আমলাদের অনেকেই বেজায় ক্ষুব্ধ।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে যে-সব ডব্লিউবিসিএস অফিসার আইএএস স্তরে উন্নীত হয়েছেন, মূলত তাঁদের ক্ষেত্রেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। ৪০-৫০ জন এমন অফিসার বিশেষ সচিব হিসেবে ১০ হাজার টাকার ‘গ্রেড পে’ নিয়ে আইএএসে উন্নীত হয়েছিলেন। ‘পে ফিক্সেশন’ (বেতনে সামঞ্জস্য) করেই সংশ্লিষ্ট আমলাদের ‘গ্রেড পে’ নির্ধারিত হয়েছিল।

নবান্ন সূত্রের খবর, নতুন করে ‘পে-ফিক্সেশন’ করে ওই আমলাদের গ্রেড পে ৮৭০০ টাকা করার পথে হাঁটছে সরকার। বেসিক বা মূল বেতন নির্ধারিত হয় ব্যান্ড পে এবং গ্রেড পে মিলিয়ে। আধিকারিক মহলের বক্তব্য, আইএএস-দের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে ডিপার্টমেন্ট অব পার্সোনেল অ্যান্ড ট্রেনিং বা ডিওপিটি-র নির্দেশের জেরেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের কর্মিবর্গ এবং প্রশাসন (পার) দফতর থেকে নতুন ভাবে ‘পে ফিক্সেশন’ করতে চাওয়ায় অফিসারদের ক্ষোভ বাড়ছে সংশ্লিষ্ট দফতরের উপরে। এক অফিসার বলেন, “কেন্দ্রের নিয়মেই বলা রয়েছে, যাঁরা রাজ্যের সিভিল সার্ভিস (ডাব্লিউবিসিএস) থেকে আইএএস সার্ভিসে যাচ্ছেন, তাঁদের ‘পে প্রোটেকশন’ বা বেতন-সুরক্ষা দিতে হবে। নতুন করে বেতন কমানো যাবে না। কিন্তু রাজ্য সরকার এটা কী ভাবে করছে, তার ব্যাখ্যা মিলছে না। এর আগে প্রত্যেকের বেতনের সমতা-সামঞ্জস্য রাখতে অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট কেটে নেওয়া হয়েছিল।”

সংশ্লিষ্ট অফিসারেরা জানাচ্ছেন, এমনিতেই একাধিক ইনক্রিমেন্ট খুইয়ে তাঁদের আইএএস সার্ভিসে যোগ দিতে হয়েছে। তার উপরে নতুন পে ফিক্সেশনে গ্রেড পে ৮৭০০ টাকা হয়ে গেলে প্রত্যেকের প্রচুর লোকসান হয়ে যাবে। চার-পাঁচ বছর ধরে যাঁরা ১০,০০০ টাকার ‘গ্রেড পে’ পেয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককে কয়েক লক্ষ টাকা ফেরত দিতে হবে সরকারের ভাঁড়ারে। উদাহরণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট মহল জানাচ্ছে, আইএএসে ঢোকার পরে ১০ হাজার টাকার গ্রেড পে অনুযায়ী কারও মূল বেতন কমবেশি দেড় লক্ষ টাকা হয়। সেই গ্রেড পে ৮৭০০ টাকা হলে অঙ্কটা স্বাভাবিক ভাবেই কমবে। মূল বেতনের সঙ্গে ডিএ, এইচআরএ যোগ দিয়ে মোট বেতন নির্ধারিত হয়। ফলে সেই হিসেবে ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে পরবর্তী ৩৮ মাস পর্যন্ত প্রত্যেককে অন্তত ২.৮০ লক্ষ টাকা ফেরত দিতে হতে পারে।

অর্থ দফতর অবশ্য জানাচ্ছে, যাঁরা এত দিন কর্মিবর্গ ও প্রশাসন (পার) দফতরের ‘ফিক্সেশন অর্ডারে’ বেশি বেতন পেয়ে এসেছেন, তাঁদের টাকা ফেরত দিতে হবে না। কারণ, এতে অফিসারদের কোনও দোষ নেই। অথচ অফিসারদের অভিযোগ, পার দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী সেই ছাড় দেওয়া হয়েছে ২০২০ সালের ৩ অগস্ট পর্যন্ত। ‘‘যাঁদের বেতন উচ্চতর হারে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ‘ফিক্স’ হয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ছাড় হওয়া উচিত ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা ভোটের আগে জোর করে এত জন সিনিয়র অফিসারের এই আর্থিক ক্ষতি করে পার দফতর কী বার্তা দিল? যাঁরা তিন-চার বছর আইএএস বেতনক্রমে চাকরি করলেন, রাজ্য-রোপায় অপশন দিলেন না, গা-জোয়ারি করে তাঁদের বেতন এ ভাবে কমিয়ে দেওয়ার পিছনে কি অন্য কোনও উদ্দেশ্য কাজ করছে,’’ প্রশ্ন এক অফিসারের।


(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nabanna Promotion WBCS Officer IPS Officer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE