—প্রতীকী চিত্র।
এ রাজ্যে লিভার প্রতিস্থাপনের সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে বারবার। কখনও পরিকাঠামো, আবার কখনও বা অস্ত্রোপচার পরবর্তী পরিচর্যা প্রশ্নের মুখে পড়ে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এখানে অস্ত্রোপচার পরবর্তী পরিচর্যার ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত কিছু ত্রুটি রয়েছে। কিন্তু অস্ত্রোপচার পরবর্তী জীবনযাপন সম্পর্কে এ রাজ্যের রোগীদের মধ্যে সচেতনতার অভাবের হারও বেশি। যা অঙ্গ প্রতিস্থাপনে সাফল্যের পথে বড় অন্তরায় হয়ে উঠছে।
তাই ভিন্ রাজ্যে সফল প্রতিস্থাপনের পরেও যক্ষ্মার মতো একাধিক রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ সংশয় দেখা দেয় এ রাজ্যের রোগীদের। যেমন, ষাটোর্ধ্ব অশোক গঙ্গোপাধ্যায়। দীর্ঘদিন ধরে লিভারের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। কলকাতার চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছিলেন, লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি। সেই পরামর্শ মতো গত বছর হায়দরাবাদে অশোকবাবুর লিভার প্রতিস্থাপন হয়। কলকাতায় ফিরে তাঁর জীবন স্বাভাবিক ছন্দে কাটছিল।
এ বছর জুন মাসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন অশোকবাবু। শুরু হয় বমির সঙ্গে রক্তক্ষরণ। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের চিকিৎসক শৌভিক ঘোষের কাছে চিকিৎসা শুরু হয়। শারীরিক পরীক্ষা করে জানা যায়, যক্ষায় আক্রান্ত হয়েছেন অশোকবাবু। শুরু হয় চিকিৎসা। এখন কিছুটা সুস্থ উঠেছেন তিনি।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অশোকবাবু ব্যতিক্রম নন। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে সাফল্য মেলার সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে রোগীর অসচেতনতা। জানা গিয়েছে, লিভার প্রতিস্থাপনের কয়েক মাস পরে অশোকবাবু মুখের মাস্ক ব্যবহার ছেড়ে দিয়েছিলেন। এমনকী বিয়ে, জন্মদিনের মতো নানা সামাজিক অনুষ্ঠানেও যাতাযাত শুরু করেন। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, এর জেরেই ঘটেছে বিপত্তি!
শৌভিকবাবুর কথায়, ‘‘অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পরে সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই নিয়মমাফিক চলতে হবে। অস্ত্রোপচারের পরে নিয়ম মেনে না চললে সফল অস্ত্রোপচারও রোগীর দীর্ঘ জীবন দিতে পারবে না।’’
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সফল অস্ত্রোপচারের পরেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীর নানা শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়। এমনকী, অনেক সময় প্রাণসংশয়ও হয়। যার কারণ রোগীর অসাবধানতা। লিভার প্রতিস্থাপনের মতো জটিল অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে হাসপাতালের পরিকাঠামো ও চিকিৎসকের দক্ষতা সাফল্যের প্রথম ধাপ মাত্র। এর পরে ছয় থেকে আট মাস সাফল্যের সঙ্গে কাটানোর পরেও থাকে বিপদ।
তাঁরা জানাচ্ছেন, কোনও নির্দিষ্ট অঙ্গের সমস্যার জেরে যখন রোগীর বাঁচার সম্ভবনা প্রায় ফুরিয়ে যায়, তখন চিকিৎসক প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। সফল প্রতিস্থাপন হলে রোগীর আয়ু বাড়ে। কিন্তু সুস্থ জীবন কাটাতে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হবে। গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট অশোকানন্দ কোনারের কথায়, ‘‘সারা জীবনই সতর্কতা অবলম্বন করে চলতে হবে। শুধু রোগী নয়, তাঁর পরিজন ও আশপাশের মানুষদের মধ্যেও সেই সচেতনতা থাকা জরুরি।’’
চিকিৎসকদের একাংশ জানান, নতুন অঙ্গ গ্রহীতার দেহে প্রতিস্থাপিত হওয়ার পরে শরীর সেটা গ্রহণ করল কি না, সেটাই সবচেয়ে আশঙ্কার কারণ। দেহের প্রতিরোধ শক্তি নতুন অঙ্গ গ্রহণে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সেই বিপদ কাটাতে রোগীকে বেশ কিছু ওষুধ দেওয়া হয়, যা শরীরের সেই প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে। সেখান থেকে তৈরি হয় দ্বিতীয় আশঙ্কা। যা এড়াতে প্রয়োজন রোগীর সচেতনতা।
অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পরে নিয়মমাফিক ওষুধ এবং টিকাকরণের পাশাপাশি আরও কয়েকটি বিষয় মেনে চলা জরুরি। যেমন, ঘরের বাইরে বেরোলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। যাতে ধুলো, ধোঁয়া থেকে বাঁচা যায়। চিকিৎসকেরা জানান, এ দেশে বায়ুদূষণ মারাত্মক হারে বাড়ছে। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পরে যেহেতু গ্রহীতার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম যায়, তাই ধুলো, ধোঁয়া থেকে দূরে থাকা দরকার। পাশাপাশি, খাওয়ার জলের বিশুদ্ধতার প্রতি বিশেষ নজরদারি থাকা জরুরি। গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরীর মতে, আর পাঁচ জনের সামান্য জ্বর হলে বিশেষ উদ্বেগের কিছু থাকে না। কিন্তু অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পরে গ্রহীতার সামান্য জ্বর কিংবা অ্যালার্জিও তৎপরতার সঙ্গে দেখা দরকার। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় যে কোনও রোগ শরীরে দ্রুত ছড়াতে পারে। তাই সুস্থ, দীর্ঘ জীবনের জন্য নিয়মমাফিক চলা জরুরি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy