ছ’ মাসের মেয়াদ পূর্ণ হলেই আর দায় এড়িয়ে যাওয়া চলবে না।
সেচ দফতরের কোনও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর ঠিকাদার সংস্থাকে তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে হবে অন্তত দু’ বছরের জন্য। সেচ দফতর সূত্রের খবর, বাঁধ, সেতুর মতো বিপুল খরচের প্রকল্পের কাজের রক্ষণাবেক্ষণে অতীতে একাধিক বার ঠিকাদার সংস্থার ‘দায়িত্বজ্ঞানহীনতা’র প্রতিষেধক হিসেবেই ওই ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সেচ দফতরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ বন্যা ঠেকানোর জন্য বাঁধ নির্মাণ। কিন্তু বহু জায়গাতেই নির্মাণের পরে প্রকল্পের ত্রুটি-বিচ্যুতি সামনে আসছে। অন্য দিকে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় ঠিকাদার সংস্থাও আর প্রকল্প নিয়ে মাথা ঘামাতে চাইছে না। এর জেরে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের ত্রুটি ঠিক করতে কালঘাম ছুটছে সেচ দফতরের।
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনায় একটি নদীবাঁধ নির্মাণের পরে সেটির কিছু অংশে সমস্যা দেখা গিয়েছে। আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেটির উদ্বোধন করে সরকারের ভাবমূর্তি জনসমক্ষে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্ব। কিন্তু দুর্দশা সামনে আসায় নদীবাঁধটি এ পর্যন্ত উদ্বোধন করা সম্ভব হয়নি। ওই জায়গায় শাসকদলের এক নেতার কথায়, ‘‘একটি বর্ষা পেরনোর আগেই ঠিকাদার সংস্থার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বকাল শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই কোনও সমস্যা হলে তারাও হাত তুলে নিচ্ছে। অস্বস্তিতে পড়ছি আমরা। সেচ দফতরের কাছে এ ব্যাপারে আমরা অভিযোগ জানিয়েছি।’’
অভিযোগ পেয়ে সেচ মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া সেচ দফতরের আধিকারিকদের একাংশের কাজ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন বলেই খবর। দু’ থেকে তিন মাসের মধ্যে ওই নদীবাঁধ উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত করে দেওয়ার নির্দেশও তিনি দফতরকে দিয়েছেন। দফতর সূত্রের খবর, ওই নদীবাঁধ নিয়ে বৈঠক করার সময়েই ঠিকাদার সংস্থার প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণের মেয়াদ কতটা বাড়ানো যেতে পারে, তা নিয়ে আধিকারিকদের মতামত জানতে চান সেচমন্ত্রী। পরে তিনি বলেন, ‘‘সব দিকটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারের সুবিধা, মানুষের সুবিধা সব দিক বিবেচনা করেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে বসিরহাটে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বড় বড় প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দীর্ঘ সময়ের জন্য ঠিকাদার সংস্থার হাতে দিতে বলেছিলেন। সেই মতো পূর্ত দফতর ঠিকাদার সংস্থাররক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বের মেয়াদ বাড়িয়েছে। সেচ দফতরের ক্ষেত্রেও সেটাই হওয়ার কথা। কিন্তু তার কিছুই হয়নি। সেচ দফতরের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, এর মধ্যে তিন বার দফতরের মন্ত্রী বদল হয়েছে। তাই অনেক কিছুই এগোয়নি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে রক্ষণাবেক্ষণের মেয়াদ বাড়ানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়িতকরতে এটাই কি একমাত্র প্রতিবন্ধকতা ছিল? দফতরের কর্তারা কোনওমন্তব্য করেননি।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)