বাবুলের সঙ্গে বাদানুবাদের ফলে দিলীপ দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির তরফে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে শো-কজ করাতে পারেন এ রকম একটি গুজব ছড়াচ্ছিল। যদিও বাবুল সে সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিচ্ছেন কি না জানতে চাওয়ার জন্য আনন্দবাজার অনলাইন তাঁর সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বাবুল সাড়া দেননি। অগত্যা তাঁর এক হিতৈষীকে দিয়ে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ওই প্রশ্ন করানো হয়েছিল। সেই হিতৈষীর দাবি, তার জবাবে বাবুল বলেছেন, তিনি ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চান না। তবে আপাতত তিনি কয়েকদিন রাজনীতি থেকে ছুটি নিচ্ছেন।
যা থেকে ওই শুভাকাঙ্ক্ষীর ব্যাখ্যা, রাজনীতি ছাড়ার প্রশ্নে বাবুল যেমন ‘হ্যাঁ’ বলেননি, তেমনই সরাসরি ‘না’-ও বলেননি।
ঘটনাচক্রে, মোদী মন্ত্রিসভার শেষ রদবদলে বাবুলকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর পর মমতা প্রকাশ্যেই বাবুলের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘‘ওরা (বাবুলের সঙ্গেই বাদ পড়েছেন অপর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী) আবার কী দোষ করল!’’ যা শুনে ঘনিষ্ঠদের কাছে সন্তোষ গোপন করেননি বাবুল। যেমন তিনি প্রীত হয়েছেন একদা আসানসোলে তাঁর ‘শত্রু’ অধুনা বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির শংসা পেয়েও। জিতেন্দ্র বলেছেন, ‘‘বাবুল সুপ্রিয় মন্ত্রী থেকেও কাজ করেছেন। মন্ত্রী না থাকলেও করবেন।’’
তার পরে তৃণমূলে এমন জল্পনাও ছড়িয়েছে যে, মমতা-বাবুল দূরত্ব কি ক্রমশ কমছে? যার পরিণতিতে ভবিষ্যতে বাবুলের পদ্মফুল থেকে জোড়াফুলে যাওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন রাজ্যে শাসকশিবিরের একাংশ।
অনেকটা আচমকাই বলিউডের নেপথ্যগায়ক বাবুলের আগমন হয়েছিল জাতীয় রাজনীতিতে। এক উড়ানে পাশের আসনে যোগগুরু বাবা রামদেবকে দেখে তাঁকে লোকসভা ভোটে বিজেপি-র টিকিট দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন বলিউডের গায়ক। অতঃপর আসানসোল কেন্দ্রে জয় এবং কেন্দ্রে মন্ত্রী। পাঁচ বছর কেন্দ্রে মন্ত্রী থাকার পর গত লোকসভা ভোটেও আসানসোল থেকে রেকর্ড ভোটে জেতেন বাবুল। ফলে তাঁকে নিয়ে বিজেপি-র অন্দরে একাংশের বিবিধ অনুযোগ থাকলেও কেন্দ্রে দ্বিতীয়বার মন্ত্রী করা হয় তাঁকে।
বিধানসভা ভোটে সাংসদ বাবুলকে টালিগঞ্জ আসন থেকে টিকিট দেয় বিজেপি। বাবুল শিবিরের দাবি, বাবুল একটি ‘কঠিন’ কেন্দ্র চেয়েছিলেন। বাবুলেরই আর্জি মেনে তাঁকে টালিগঞ্জ কেন্দ্রটি দেওয়া হয়। তবে তিনি হেরে যান তৃণমূলের অরূপ বিশ্বাসের কাছে। ভোটের পরেও দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে বাবুল জিতবেন। বাবুল ঘনিষ্ঠদের দাবি, মোটর সাইকেল নিয়ে কেন্দ্রের অলিগলিতে প্রচার করায় অমিত শাহ সন্তুষ্টও হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাবুল হেরে যান। তবে গণনা চলাকালীন গণনা কেন্দ্রে তৃণমূলের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে একাধিক ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন তিনি। যার মোদ্দা কথা, গণনা ঠিকঠাক হয়নি। তিনি হেরে যাওয়ায় দলের অন্দরে তাঁর বিরোধীরা যেমন ‘সক্রিয়’ হয়ে ওঠেন। তারই ফলে তাঁকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা বাবুল-শিবিরের। তাদের অনুমান, সেই কারণেই রাজনীতি থেকে ক্রমশ দূরে সরার ইঙ্গিত দিচ্ছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। যত জোরালো হচ্ছে তাঁর ইঙ্গিত, তত বাড়ছে তাঁর রাজনীতি-ত্যাগের জল্পনা।
তাঁর কেন্দ্র আসানসোলের সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটিতেই হেরে যাওয়ার দায় বাবুলের নয় বলে মনে করছেন তাঁর ঘনিষ্ঠরা। তাঁদের বক্তব্য, সাতটির মধ্যে মাত্র তিনটি আসনে বাবুলের সুপারিশ করা প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিল বিজেপি। তার মধ্যে দু’টি আসন আসানসোল দক্ষিণ ও কুলটিতে বিজেপি জিতেছে।