Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
COVID19

Covid 19: করোনার ভাটার টানে নতুন খেল্ কি না ধন্দ

প্রথমটা সত্যি হলে সেটা অতি বড় আশার কথা। আর দ্বিতীয়টা ঠিক হলে আশঙ্কা সীমাহীন। আশঙ্কার সঙ্গে বাস্তবের একটা ফারাক তৈরি হচ্ছে!

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:২৩
Share: Save:

সত্যি সত্যিই অতিমারিতে ভাটার টান? না, ধুরন্ধর ভাইরাসের এটাও আসলে নতুন অবতারে নয়া খেল্?

প্রশ্নটা উঠছে। কারণ, প্রথমটা সত্যি হলে সেটা অতি বড় আশার কথা। আর দ্বিতীয়টা ঠিক হলে আশঙ্কা সীমাহীন। আশঙ্কার সঙ্গে বাস্তবের একটা ফারাক তৈরি হচ্ছে! শেষ দু’দিনের করোনা সংক্রমণের পরিসংখ্যান অন্তত সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে। এবং সেই সূত্রেই ফের আশান্বিত প্রশ্ন উঠছে, সংক্রমণের গতি কি কিছুটা হলেও থমকে যাচ্ছে?

বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসকেরা এখনই নিশ্চিত ভাবে কিছু বলতে রাজি নন। তাঁরা আরও দেখতে চাইছেন। সংক্রামক বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের কথায়, “ওমিক্রনের চরিত্র অদ্ভুত ধরনের। উপসর্গেও বদল ঘটেছে। তাই করোনার এই নতুন প্রজাতি আবার নতুন কিছু খেলা দেখাতে চলেছে কি না, সেটা এখনও অজানা। তাই সতর্কতায় কোনও শৈথিল্য নয়।”

রবিবার করোনা পরীক্ষা কম হয়। ওই দিন রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৯,২৮৬। আশঙ্কা ছিল, সোমবার তা অনেক বাড়বে। বাস্তবে তা হয়নি। স্বাস্থ্য দফতরের মঙ্গলবারের বুলেটিন বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার) আক্রান্ত ২১,০৯৮ জন। পরীক্ষা হয়েছে ৬৫,২১০ জনের। যা রবিবারের (৫১,৬৭৫ জন) থেকে অনেক বেশি। দৈনিক পরীক্ষা ও আক্রান্তের আনুপাতিক হারের হিসেবে রবিবারের (৩৭.৩২%) থেকে সোমবারের পজ়িটিভিটি রেট ৫% কমে হয়েছে ৩২.৩৫%।

কার্ডিয়োথোরাসিক শল্যচিকিৎসক কুণাল সরকার বলেন, “এই ভেরিয়েন্টটির সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি। আবার সেটি যেমন অত্যন্ত তাড়াতাড়ি বাড়ে, তেমনই কমে। তার প্রমাণ মিলেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। মানুষ যত দ্রুত বেশি মাত্রায় সতর্ক হবেন এবং সংক্রমণের রাস্তা বন্ধ করবেন, তত তাড়াতাড়ি ভাল ফল দেখতে পাব। এক দিনের পরিসংখ্যান দেখে সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়।” গত দু’দিন আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কম হওয়ায় সংক্রমণের বিস্তার খানিকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে— এমন মন্তব্য করার আগে আরও দু’-চার দিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন আছে বলে কুণালবাবুর অভিমত।

শল্যচিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার জানান, ওমিক্রনে আজ নয়তো কাল সকলে আক্রান্ত হতে পারেন, সেটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু মৃদু উপসর্গ থাকলেও গরিবদের অনেকে পরীক্ষা করাচ্ছেন না। কারণ রিপোর্ট পজ়িটিভ এলে তাঁর অন্তত সাত দিনের গৃহবন্দিদশায় অর্থনৈতিক সমস্যার আশঙ্কা আছে। পরীক্ষা করাচ্ছেন মূলত মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তেরা। অনেকে বাড়িতে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করে রিপোর্ট পজ়িটিভ আসার পরেও তা সরকারকে জানাচ্ছেন না। তিনি বলেন, “দৈনিক আক্রান্ত যখন ১৮ হাজার ছিল, কলকাতায় তখন সংক্রমণ ছিল আট হাজারের ঘরে। এখন সেটা নামছে। সংলগ্ন জেলায় সংক্রমণ স্বাভাবিক নিয়মেই বাড়তে শুরু করছে। কিন্তু জেলায় ক’জন সচেতন ভাবে পরীক্ষা করাবেন, সেটা নিশ্চিত ভাবে বলা মুশকিল।” চিকিৎসকেরা এটাও জানাচ্ছেন যে, রোগের তীব্রতা লক্ষ করা যাচ্ছে না বলেই অনেকে মৃদু উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষা করাতে রাজি হচ্ছেন না।

এক জনের থেকে অন্যের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর সময়টা অনেক কমেছে বলে জানান ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদার। তাঁর ব্যাখ্যা, ধরা যাক, দু’ফুটের মধ্যে দু’জন মানুষ কথা বলছেন। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে এক জনের থেকে আর এক জন সংক্রমিত হতে পারেন। ড্রপলেটের মাধ্যমে মিলিয়ন ভাইরাস পার্টিকেল বেরোয়। সেখান থেকে কয়েক হাজারও যদি অন্যের শরীরে ঢোকে, তা হলেও তিনি সংক্রমিত হতে পারেন। কিন্তু মানুষ যদি ভাইরাস প্রবেশের পথেই লকডাউন করতে পারেন অর্থাৎ ঠিক ভাবে নাক-মুখ মাস্কে ঢেকে রাখেন, তা হলে সংক্রমণ ছড়ানোর হার কমবে। চিকিৎসকেরা বলছেন, শুধু ওমিক্রন নয়, ডেল্টাও এখনও রয়েছে বহাল তবিয়তে। সেটা ভুললে চলবে না।

গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারি রাজ্যের ৩৭৫টি নমুনা জিনোম সিকোয়েন্স করে ২৬৭টির মধ্যে ওমিক্রন পাওয়া গিয়েছিল। তার মধ্যে ওমিক্রন (বি.১.১.৫২৯) ছিল একটি। আবার ওমিক্রনের উপজাতি ‘বিএ.১’ মিলেছে ২১টি এবং ‘বিএ.২’ পাওয়া গিয়েছে ২৪৫টি। ১৪টি ডেল্টা ভেরিয়েন্ট (বি.১.৬১৭.২) এবং ডেল্টার উপজাতি ‘এ ওয়াই সিরিজ’ মিলেছিল ৬৯টি। ২৫টির ভেরিয়েন্ট নিশ্চিত করা যায়নি। স্বাস্থ্য দফতরের অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট, যে-সব নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছিল, সেগুলির রিপোর্ট অনুযায়ী কলকাতায় ২৯৩টি নমুনার মধ্যে প্রায় ৭৪%, উত্তর ২৪ পরগনায় ৩৩টি নমুনার মধ্যে ৮৭% এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি, হাওড়ার যে-সব নমুনা জিনোম পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল, সেগুলিতে কমবেশি ওমিক্রনের সন্ধান মিলেছে। চিকিৎসকদের অনুমান, মঙ্গলবারের পরিস্থিতিতে ওমিক্রন সংক্রমণের হার বেড়েছে। হাসপাতালে ভর্তির হার অবশ্য তেমন ভাবে বৃদ্ধি পায়নি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এ দিন রাজ্যে হাসপাতালের ভর্তির হার ছিল ৩.৩%।

তবে সব চিকিৎসকই জানাচ্ছেন, পজ়িটিভিটি রেট এখনও ৩০-এর উপরেই রয়েছে। তাই বঙ্গের আকাশে সিঁদুরে মেঘ কেটে গিয়েছে, এমন কথা এখনই বলা যাবে না। সেটা বলতে হলে পজ়িটিভিটির হারকে অন্তত ১০ থেকে ১২-য় নামতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

COVID19 West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE