Advertisement
E-Paper

এ রকম ‘পিসফুল’ ভোটই ভাল, তাই না!

ভোটের ক্যাম্পে ঢুকতেই বছর বাইশের ছেলেটিকে সপাটে চড় কষালেন তৃণমূলের এক জেলা নেতা। চোয়াল চেপে ধরে ছেলেটি বলল, ‘‘দাদা, আমি তো টিএমসি।’’ এ বার ‘দাদা’ আরও কড়া। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘ঠিক আছে, যা। আমি দেখে নিচ্ছি।’’

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:১৫

ভোটের ক্যাম্পে ঢুকতেই বছর বাইশের ছেলেটিকে সপাটে চড় কষালেন তৃণমূলের এক জেলা নেতা। চোয়াল চেপে ধরে ছেলেটি বলল, ‘‘দাদা, আমি তো টিএমসি।’’ এ বার ‘দাদা’ আরও কড়া। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘ঠিক আছে, যা। আমি দেখে নিচ্ছি।’’

বাগুইআটির একটি বহুতলে রাতারাতি ওই ক্যাম্প অফিস খুলেছে তৃণমূল। বাইরে অসহ্য গরম। ভিতরে এসি। ঠান্ডায় বসে ‘দাদা’ আর তাঁর অনুগতেরা। বাইরে ভিড় ছেলে-ছোকরাদের। সকাল ৮টা নাগাদ তাদেরই এক জনকে ডেকে ‘দাদা’ বললেন, ‘লোকাল’ না ‘আউট স্টেশন’, দেখার দরকার নেই। শুধু ‘লাল তৃণমূল’দের ব্যাপারে ঝুঁকি নিবি না। মেয়েদের বেশি কাজে লাগাতে বল।’’ কার প্রতি নেতার এই নির্দেশ, বোঝা গেল না। কিন্তু বোঝা গেল, চড় খাওয়া ছেলেটা ‘লাল তৃণমূল’।

বিধাননগর পুর-নিগমের ভোট করতে গিয়ে এ ভাবেই দিনভর টক্কর চলল ‘নকল’ বনাম ‘আসল’-এর। আর তা সামলাতেই ঘাম ছুটছে নেতাদের। ক্যাম্প অফিসে বসেই যেমন বারাসতের এক নেতা বলেন, ‘‘নিজেরাই ‘সাবোতাজ’ (চক্রান্ত্র) করছে। এরা ভোট করতেই জানে না। ২০টা ছেলে দিয়েছি। কিন্তু একটা লোকাল ছেলেও সঙ্গে নেই।’’ নেতার স্বগতোক্তি, ‘‘আমরা না এলে তো আমাদের প্রার্থী গো-হারান হারত।’’

বাগুইআটির মতো সল্টলেকের এবি-এসি পার্কের পাশেও বহিরাগতদের ভিড়। খাল পেরিয়ে দক্ষিণদাঁড়ি থেকে ঢুকেছে ওরা। তাদের নিয়ন্ত্রণে আছেন দমদমের এক প্রভাবশালী তৃণমূল কাউন্সিলর। পুলিশের সঙ্গে নিয়ত যোগাযোগ রেখে তিনি নানা বুথে যখন যেমন দরকার ৪০-৫০ জন করে ছেলে পাঠাচ্ছিলেন। ছেলেদের বলছিলেন, ‘প্রিসাইডিং অফিসারকে বলা আছে। ‘পজিশন’ বুঝি ভোট দিবি। তবে সব দিস না। কিছু রেখে দিস।’

ভোটের এক দিন আগে শুক্রবার সকালেই বনগাঁ, বসিরহাট, অশোকনগর ও হাবরার মতো উত্তর ২৪ পরগনার দূরের এলাকা থেকে পিলপিল করে ছেলেরা ঢুকে পড়েছিল বিধাননগর, রাজারহাটে। ওই সব এলাকার পুরোনো বাড়ি, সদ্য তৈরি ফ্ল্যাট, বিয়েবাড়ি ও গেস্টহাউসে তাদের থাকার ব্যবস্থা করেছিল শাসক দলের একাংশ। আর বেলেঘাটা, দমদম, বেলঘরিয়া, বিরাটির মতো কাছাকাছি এলাকার কর্মীরা এসেছিল সূর্য ওঠার আগেই। ভোট শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বাগুইআটির ওই ক্যাম্প অফিস কার্যত ‘কন্ট্রোল রুম’-এর চেহারা নিয়ে নেয়। প্রায় সারাক্ষণই বাজছে মোবাইল। এ প্রান্ত থেকে বুথের নম্বর ধরে ধরে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ‘১০ জন পাঠাও। আমাদের লোকও যাচ্ছে।’ সেই নির্দেশ ঘরের বাইরে পৌঁছনোমাত্র মোটরবাইকে স্টার্ট দিয়ে গন্তব্যস্থলের উদ্দেশে রওনা দিল জনা তিনেক ছেলে। তারা সব লোকাল। পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে।

কন্ট্রোল রুমে চা খেতে খেতে এক নেতা জানালেন, এ বার অনেক মহিলা কর্মীকে ভোটের কাজে লাগানো হয়েছে। ওদের মাথা ঠান্ডা, গোলমালও করে কম। কেউ খুব বেশি সন্দেহও করে না।’’ বেলা ১টা নাগাদ খবর এল, ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে। কারা দিল? উত্তর মিলল, ‘এলাকারই বাসিন্দা।’ আর তার পরেই ঠান্ডা ঘরের নির্দেশ, ‘এ বার ধীরে ধীরে শুরু করো। গোলমাল যেন না হয়।’ শুরু হয়ে গেল ছাপ্পা ভোট। কিছু ক্ষণ পরপরই ঘরের দরজা খুলে নেতাদের জানিয়ে দিচ্ছেন বিশ্বস্তেরা, ভোটের হার বাড়ছে। সাড়ে ৩টে নাগাদ জানা গেল ভোটের হার পৌঁছেছে ৭৫ শতাংশে। কিন্তু ২৫ শতাংশের কী হবে? নেতা বললেন, ‘‘সকালের ৫০ শতাংশের মধ্যে আমাদের অনেক কট্টর ভোটার আছেন। বিরোধী দলের ‘কমিটেড’ ভোটাররাও ১টার মধ্যে ভোট দিয়েছেন। তাই বাদ বাকি নিয়ে ভাবছি না।’’

এ সব খবরাখবর আসার মধ্যেই শুরু হল দুপুরের খাবার বিলি। বড় বড় থলিতে প্যাকেট প্যাকেট বিরিয়ানি নিয়ে বাইকে চেপে রওনা দিচ্ছে দলের ছেলেরা। এর মধ্যেই শুরু হল বৃষ্টি। নেতার কাছে জানতে চাইলাম, এ ভাবে ভোট করাটা...? প্রশ্ন শেষ করতে না দিয়ে নেতার জবাব, ‘‘যাদের লোকবল বেশি, ক্ষমতা তাদের হাতেই থাকা উচিত। নির্বাচন তো ক্ষমতার লড়াই।’’

বিকেলের আগেই ‘কাজ’ শেষ। ফুরফুরে মেজাজে নেতা। টেবিলে তাল ঠুকছেন। গাইছেন— এ শুধু গানের দিন...। বললেন, ‘‘রক্তারক্তির চেয়ে এমন ‘পিসফুল’ ভোট ভাল, না? এই যে তোমার সঙ্গে কত ক্ষণ গল্প করছি।’’

পড়ুন: পাছে দাপট কমে যায়, শাসকের ভরসা তাণ্ডবে

পড়ুন: বেঁচে ফেরার অভিজ্ঞতা

পড়ুন: দিনভর চলল ‘ভোট-লুঠ’, সব দেখেও সুশান্ত শান্তই

পড়ুন: ভোট দেওয়াই হল না, গেরো রহস্যের মেরো

পড়ুন: সাংবাদিক নিগ্রহের নিন্দা, গ্রেফতারির দাবি

পড়ুন: ভোট করাল ভজাইরা, পাহারা দিল পুলিশই

পড়ুন: ইহারা জননীর গর্ভের লজ্জা

municipal election election abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy