Advertisement
E-Paper

‘দাগি অযোগ্য’দের তালিকায় ‘যোগ্য’-ও? সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সোনালির মামলা দ্রুত শুনবে কলকাতা হাই কোর্ট

এসএসসি-র প্রকাশ করা ‘দাগি অযোগ্য’দের তালিকায় সোনালি দাস নামে এক প্রার্থীর উপস্থিতি নিয়েই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। আড়াই বছর ধরে কলকাতা হাই কোর্টে বিচারাধীন সোনালির মামলা।

ভাস্কর মান্না

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২৫ ২০:৪১
এসএসসি প্রকাশিত ‘দাগি অযোগ্য’দের তালিকায় সোনালি দাসের নাম নিয়ে বিভ্রান্তি।

এসএসসি প্রকাশিত ‘দাগি অযোগ্য’দের তালিকায় সোনালি দাসের নাম নিয়ে বিভ্রান্তি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বেআইনি ভাবে চাকরি পাওয়া দাগিদের তালিকা প্রকাশ করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। সেই তালিকায় কি এক ‘যোগ্যের’ নামও রয়েছে?

এসএসসি ১,৮০৬ জন ‘দাগি অযোগ্য’-এর যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে সোনালি দাস নামে এক প্রার্থীর উপস্থিতি নিয়েই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। আড়াই বছর ধরে কলকাতা হাই কোর্টে বিচারাধীন সোনালির মামলা। গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টেও বিষয়টি ওঠে। সেই মামলাতেই শীর্ষ আদালতের বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং অরবিন্দ কুমারের বেঞ্চ হাই কোর্টকে নির্দেশ দিয়েছে দ্রুত সোনালির মামলা শোনার জন্য। সেইমতো চলতি সপ্তাহেই হাই কোর্টে শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এসএসসি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এক জন দাগি অযোগ্যও যাতে এসএসসি-র নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে না পারেন। সেই নির্দেশ অনুযায়ী, দাগি অযোগ্যদের তালিকায় নাম উঠে যাওয়ায় সোনালিও পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। এ দিকে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা। অর্থাৎ, হাতে আর সাত দিন। এই অবস্থায় চিন্তিত সোনালির পরিবার। তারা আপাতত হাই কোর্টের দিকেই তাকিয়ে। সোনালির স্বামী দীপক সাউ বলেন, ‘‘মামলা হাই কোর্টে বিচারাধীন। এখনই আমরা এই বিষয়টি নিয়ে কিছু বলব না।’’

নবম-দশম শ্রেণির ভূগোলের শিক্ষিকা হওয়ার জন্য ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিলেন সোনালি। পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউ-তে উত্তীর্ণও হন। তাঁকে কাউন্সেলিংয়ে ডাকা হয়েছিল। পরে এসএসসি-র সুপারিশ মেনে সোনালিকে নিয়োগপত্র দেয় পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।

২০১৯ সালে কাকদ্বীপের রুদ্রনগর দেবেন্দ্র বিদ্যাপীঠে ভূগোলের শিক্ষিকা হিসাবে চাকরি পেয়েছিলেন সোনালি। এর পর ২০২১ সালে হাই কোর্টে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির মামলা দায়ের হয়। তদন্ত শুরু করে সিবিআই। সেই মামলায় ২০২২ সালে হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (যিনি বর্তমানে বিজেপির সাংসদ)-এর নির্দেশে ৯৫২ জন অযোগ্য প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হয়। তাতে সোনালির নাম ছিল। তার বিরুদ্ধেই ২০২৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেন শিক্ষিকা।

উচ্চ আদালতে সোনালি জানান, তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তাঁর ‘পার্সোনালিটি টেস্ট’ও হয়েছিল। সব পদ্ধতি মেনেই তাঁর নাম মেধাতালিকায় উঠেছিল। সব নথি যাচাই করেই তাঁকে চাকরি দেওয়া হয়েছিল।

সোনালি আদালতে এ-ও জানিয়েছিলেন, ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর ‘আনসার কি’ (লিখিত পরীক্ষার পর সব প্রশ্নের উত্তর সংবলিত একটি উত্তরপত্র প্রকাশ করা হয়, যা মিলিয়ে দেখে পরীক্ষার্থীরা বুঝতে পারেন, তাঁরা পরীক্ষায় ঠিক উত্তর দিয়েছেন কি না) প্রকাশ করেছিল এসএসসি। সেই ‘আনসার কি’-র সঙ্গে তাঁর উত্তরের মিল ছিল। ফলে দুর্নীতির কোনও প্রশ্নই ওঠে না। সোনালি আরও জানিয়েছিলেন, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর এসএসসি আবার একটি ‘আনসার কি’ প্রকাশ করেছিল। তবে সেটি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি। ফলে নতুন ‘আনসার কি’ কী ছিল, তা জানা সম্ভব হয়নি। কিন্তু নম্বরে গরমিল দেখা যায়। ৪২ নম্বরের পরিবর্তে তাঁকে ৪১ নম্বর দেওয়া হয়। সোনালির দাবি, তার পরেও মেধাতালিকায় তাঁর নাম ছিল। তার পরেও কী ভাবে সিবিআইয়ের দেওয়া অযোগ্যের তালিকায় তাঁর নাম উঠল, তিনি বুঝতে পারছেন না।

উচ্চ আদালতে সোনালির মামলাটি উঠেছিল বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর বেঞ্চে। বিচারপতি সেই সময় জানিয়েছিলেন, এসএসসি সংক্রান্ত মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। তাই তিনি ওই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন না।

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট এসএসসি মামলায় রায় দিয়েছে। তাতে প্রায় ২৬ হাজার জনের চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছিল। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে শুরু হয়েছে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া। তাতে অযোগ্যদের পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। ফলে আগে সিবিআই প্রকাশিত অযোগ্যদের তালিকায় নাম থাকায় সোনালির নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বসতে পারার কথা নয়। সেই কারণেই তিনি শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সেখানে এসএসসি-র আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁরা বিষয়টি দেখবেন।

ঘটনাচক্রে, তার পরেও এসএসসি প্রকাশিত ‘দাগি অযোগ্য’দের তালিকায় সোনালির নাম রয়ে গিয়েছে! সোনালির আইনজীবী ভিষক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিষয়টি হাই কোর্টের নজরে এনে দ্রুত শুনানির আবেদন করব, যাতে সোনালি দাস পরীক্ষায় বসতে পারেন।’’

Bengal Recruitment Case Calcutta High Court Supreme Court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy