ধৃত আখতার খান।
কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে পাকিস্তানের একটি ব্যাঙ্কের ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে টাকা তোলা হচ্ছে! এমনই খবর পেয়ে নড়েচড়ে বসেছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তাঁরা দেখেন, পাকিস্তানি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে শুধু টাকা তোলাই হচ্ছে না, সে দেশের আর একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমাও হচ্ছে। এমন সন্দেহজনক ঘটনা দেখেই নজরদারি শুরু করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার একটি দল। এবং গোয়েন্দাদের দাবি, সেই নজরদারিতেই ফাঁস হয়েছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের ‘কলকাতা নেটওয়ার্ক’।
পাক গুপ্তচর সংস্থার হয়ে কাজ করার অভিযোগে শনিবার কলুটোলা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল আখতার খান নামে এক ব্যক্তিকে। উদ্ধার করা হয়েছে পাকিস্তানের হাবিব ব্যাঙ্কের ইন্টারন্যাশনাল ডেবিট কার্ড। পাকিস্তান থেকে তার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ত। সেই টাকার কিছুটা সে তুলত এবং বাকিটা পাকিস্তানে থাকা তার দুই ছেলের কাছে পাঠিয়ে দিত বলে দাবি গোয়েন্দাদের।
পুলিশ জানাচ্ছে, আখতারকে জেরা করেই কলিন স্ট্রিট থেকে সোমবার তার ভাই জাফর খানকে পাকড়াও করেছে লালবাজারের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। তার কাছ থেকেও সন্দেহজনক নথি উদ্ধার করা হয়েছে। মিলেছে পাকিস্তানের পাসপোর্টও। তাদের আর এক শাগরেদকেও ইতিমধ্যে নজরবন্দি করা হয়েছে বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছন।
গোয়েন্দাদের দাবি, দীর্ঘদিন পাকিস্তানে কাটিয়ে আসা আখতার ও জাফর এ রাজ্যের বিভিন্ন সেনাছাউনি, বায়ুসেনা, ঘাঁটি এবং বন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের ছবি-সহ নথি পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-কে পাচার করত। এ দিন এসটিএফের এক কর্তা জানিয়েছন, কলকাতার বিভিন্ন সাইবার ক্যাফে থেকে ই-মেল করে আইএসআইকে সরবরাহ করত দু’ভাই। কয়েকটি সাইবার ক্যাফেকেও সনাক্ত করা হয়েছে। কী ভাবে সেনা ও বন্দরের খবর জোগাড় করত আখতার ও জাফর?
গোয়েন্দারা বলছেন, আখতার ও জাফর, দু’জনেই ‘মকটেল’ ও ‘ককটেল’ তৈরিতে ওস্তাদ। সেই সূত্রেই সেনা ও বন্দরের বিভিন্ন পার্টিতে যাতায়াত শুরু হয় দু’জনের। পার্টির সূত্র ধরেই সেনা ও বন্দরের বিভিন্ন তথ্য হাতিয়ে নিত দু’জনে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক অফিসার বলছেন, ‘‘ককটেল তৈরির সূত্রে পুলিশের কয়েক জন অফিসারকেও চিনত আখতার।’’ গোয়েন্দাদের সন্দেহ, পুলিশেরও বেশ কিছু খবর পাচার করেছে আখতারেরা।
এ দিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্তার দাবি, জাফর ও আখতার কী কী নথি পাকিস্তানে পাচার করেছে, তার কিছুটা জানা গিয়েছে। বাকিটা জেরা করে জানার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বন্দর সংক্রান্ত নথি পাচার হওয়ায় তার নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন গোয়েন্দারা। তদন্তকারীদের একটি সূত্র বলছে, কলিন স্ট্রিটে মামার বাড়িতে থাকত জাফর। আশির দশকে দাদার সঙ্গেই করাচিতে কাকা ইজরায়েল খানের বাড়িতে যায় সে। করাচিতেই একটি কারখানায় কাজ করত দু’ভাই। পাকিস্তানে এক যুবতীকে বিয়েও করেছিল আখতার। ২০০৯ সালে জাফর দেশে ফিরে আসে। ২০১১ সালে আখতার ফিরে আসার আগে আইএসআইয়ের খপ্পড়ে পড়ে এবং ভারতে ফেরার শর্ত হিসেবে এজেন্ট হতে বলে। সেই শর্ত মেনেই দেশে ফিরেছিল আখতার। গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের বক্তব্য, ‘‘আখতার এ দেশে জাফর-সহ ১৫ জনকে আইএসআইয়ের কাজে লাগিয়েছিল। জাফর ছাড়াও বাকিদের উপরেও নজরদারি রয়েছে।’’ এসটিএফের সূত্র বলছে, পাকিস্তান, নেপাল-সহ বিদেশের বেশ কিছু সন্দেহজনক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল আখতারের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy