Advertisement
E-Paper

কোনি বৈষ্ণবীর শেষকৃত্যে আতাউলেরা      

শিকরা গ্রামের আতাউল হক মল্লিক জানান, বছর পঁয়ষট্টির কোনি বৈষ্ণবী দীর্ঘদিন গান গেয়ে গ্রামে ভিক্ষা করতেন।

তারাশঙ্কর গুপ্ত  

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২০ ০৩:৩৯
সমব্যথী: ইন্দাস ব্লকের শিকরা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

সমব্যথী: ইন্দাস ব্লকের শিকরা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

করোনা-পরিস্থিতিতে যখন দূর সম্পর্কের আত্মীয়েরা এগিয়ে এলেন না সৎকারে, বৈষ্ণব রীতি মেনে বৃদ্ধার শেষকৃত্য করলেন আতাউল, সাদ্দামেরা। শনিবার এমন ঘটনার সাক্ষী থাকল বাঁকুড়ার ইন্দাস ব্লকের শিকরা গ্রাম।

স্থানীয় আমরুল পঞ্চায়েতের প্রধান পূজা পণ্ডিত দে বলেন, ‘‘এই সময়ে এমন ঘটনা একটা নজির তৈরি করল। ওই যুবকদের জন্য আমরা গর্বিত।’’

শিকরা গ্রামের আতাউল হক মল্লিক জানান, বছর পঁয়ষট্টির কোনি বৈষ্ণবী দীর্ঘদিন গান গেয়ে গ্রামে ভিক্ষা করতেন। গ্রামে একটি ফাঁকা বাড়ির বারান্দায় থাকতেন। দিন চারেক আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন বৃদ্ধা। ইন্দাস হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। শনিবার সকালে তিনি মারা যান।

ওই গ্রামের আইনাল মল্লিক বলেন, "আমরা ভর্তি করিয়েছিলাম। দেহ আমরাই নিয়ে আসি। কিন্তু শেষকৃত্যের রীতিনীতি তো জানি না। সে জন্য স্বজনের থাকাটা দরকার।’’ গ্রামের কয়েকজন শুনেছিলেন, একই পঞ্চায়েত এলাকার মৌরাই গ্রামে বৈষ্ণবীর দূর সম্পর্কের আত্মীয়েরা আছেন। আমরুল পঞ্চায়েতের প্রধান পূজাদেবী বলেন, ‘‘মৌরাই গ্রামে বৃদ্ধার দূর সম্পর্কের আত্মীয়দের কাছে মৃত্যুসংবাদ দেওয়া হয়। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেননি।’’

শিকরা গ্রামের শেখ সুরুল, শেখ সাদ্দামেরা জানান, এমন পরিস্থিতিতে তাঁরাই সৎকার করার সিদ্ধান্ত নেন। সুরুল বলেন, ‘‘মানুষটা প্রায় তিরিশ বছর এই গ্রামে ছিলেন। তাঁর ঠিকঠাক শেষকৃত্য হবে না?’’

কিন্তু সৎকারের নিয়মকানুন সম্পর্কে বিশেষ ধারণা তাঁদের ছিল না। তাঁরা যান আমরুল গ্রামের বৈষ্ণব দিলীপ বৈরাগীর কাছে। বয়সের কারণে দিলীপবাবু নিজে যেতে পারেননি। তবে বিশদে সব কিছু বুঝিয়ে দেন। এমনকি, সৎকারের সময়ে ধাপে ধাপে ফোনে পরামর্শ দিয়েছেন।

দিলীপবাবু বলেন, ‘‘বৈষ্ণব ধর্মে সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে। বিপদে মানুযের পাশে মানুষ থাকবেন এটাই কাম্য। শিকরা গ্রামের সংখ্যালঘু ভাইয়েরা এক বৈষ্ণবীর জন্য যা করলেন, তা অন্য কোথাও হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’’

স্থানীয় বাসিন্দা শেখ রহমতুল্লা জানান, শেষ পর্যন্ত কবরস্থানের পাশে একটা ফাঁকা জায়গায় বৃদ্ধাকে সমাধিস্থ করা হয়। নাম সংকীর্তনের জন্য দু’জন কীর্তনিয়াকে নিয়ে আসা হয়।

আতাউলের কথায়, ‘‘অন্যের ধর্মকে সম্মান দেওয়াটা কর্তব্য। বহু বছর উনি আমাদের গ্রামে ছিলেন। ধর্মটাই আলাদা। মনের দিক থেকে কোনও বিভেদ নেই।’’ ইন্দাসের তৃণমূল বিধায়ক গুরুপদ মেটে বলছেন, ‘‘সারা বিশ্বই করোনা- সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়ছে। এই পরিস্থিতিতে শিকরা গ্রামের সংখ্যালঘু ভাইয়েরা যে সম্প্রীতির উদাহরণ রাখলেন, তা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ুক। আমরা এক সঙ্গে থাকলেই সব বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।’’

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy