Advertisement
E-Paper

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে তদন্তে দিশাহীন পুলিশ

ফাটাপুকুরের ডাকাতির তদন্তে নেমে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উলুখাগড়ার দশা পুলিশের। ডাকাতির ঘটনার তিন দিন পরেও পুলিশ একজনকেও ধরতে পারেনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৫ ০৩:২০
তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা কার্যালয়ে মনোরঞ্জন দাস (ডান দিকে)। পাশে প্রাক্তন জেলা সভাপতি কল্যাণ চক্রবর্তী। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা কার্যালয়ে মনোরঞ্জন দাস (ডান দিকে)। পাশে প্রাক্তন জেলা সভাপতি কল্যাণ চক্রবর্তী। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

ফাটাপুকুরের ডাকাতির তদন্তে নেমে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উলুখাগড়ার দশা পুলিশের। ডাকাতির ঘটনার তিন দিন পরেও পুলিশ একজনকেও ধরতে পারেনি। বরং, সন্দেহের বশে এক তৃণমূল নেতাকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আটকে শাসক দলের নেতা-কর্মীদের চাপে ছেড়ে দেওয়ার পরেও ‘শাস্তি’র আশঙ্কা করছেন অনেকে। তাই হয়তো এসপি থেকে ওসি, কার বদলি কিংবা কাকে ‘কম্পালসরি ওয়েটিং’এ যেতে হবে কি না তা নিয়ে দিনভর পুলিশেরই নানা স্তরে চলছে আলোচনা।

কিছু প্রবীণ পুলিশ অফিসার-কর্মী একান্তে মানছেন, শাঁখের করাতের উপর দিয়ে হাঁটার মতো অবস্থা হয়েছে তাঁদের। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া বলেন, “আমাদের তদন্ত চলছে। কিছু সূত্র মিলেছে। আশা করছি দ্রুত সুফল মিলবে।”

তৃণমূলের পক্ষ থেকে সিআইডি-র হাতে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে। সেই দাবি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে বলে জেলা নেতৃত্ব জানিয়েছেন। তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করে পুলিশ সুপার বলেন, “আমরা তদন্তে অনেকটা এগিয়েছি এটা বলতে পারি।”

তৃণমূল নেতা তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব অভিযোগকারী পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সমবেদনা জানিয়ে কড়া আইনি পদক্ষেপের কথা বললেও পুলিশ স্বস্তি পাচ্ছে না। রবিবারই গৌতমবাবু আক্রান্ত ব্যবসায়ী সুধীররঞ্জন ধাড়ার ফাটাপুকুরের বাড়িতে যান। স্থানীয় সূত্রে খবর, এর পরে মন্ত্রী পুলিশ কড়া পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়ে দেন। তাতে পুলিশ সে সময়ে থানায় আটক সন্দেহভাজন তৃণমূল নেতা মনোরঞ্জন দাসকে জেরা করে কিছু তথ্য পাওয়ার চেষ্টায় নামে।

কিন্তু, তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী, প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণ চক্রবর্তী, রাজগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক খগেশ্বর রায়-সহ অনেকেই অভিযোগকারীর বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তা নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের নেতৃত্বে থানায় হইহল্লা হতে বিষয়টি গড়ায় নবান্ন পর্যন্ত। সরকারি সূত্রের খবর, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে রিপোর্ট পাঠান পুলিশের উত্তরবঙ্গের পদস্থ কর্তারা। সেই রিপোর্টে মনোরঞ্জনবাবুর বিরুদ্ধে প্রাথমিক ভাবে কোনও প্রামাণ্য তথ্য মেলেনি বলে জানানো হয়। রাতে তাঁকে ছেড়েও দেয় পুলিশ। এর পরে তদন্ত কোন পথে এগোবে, ভেবে পাচ্ছেন না তদন্তকারী অফিসারদের অনেকে।

একাধিক পুলিশ অফিসার জানান, একই দলের দুটি শক্তিশালী গোষ্ঠী একটা ডাকাতির ঘটনা নিয়ে দ্বিমত হলে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে।

শনিবার রাতে ফাটাপুকুরের ব্যবসায়ী সুধীরবাবুর বাড়িতে ১৫-২০ জন ডাকাত হামলা করে নগদ ও গয়না মিলিয়ে অন্তত ৫০ লক্ষ টাকা লুঠ করে পালায় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে পৌঁছলেও পুলিশের সামনেই ডাকাতরা বোমা ফাটায় বলে অভিযোগ। পরিবার অভিযোগ করার পরে তৃণমূলের রাজগঞ্জ ব্লকের সুখানি অঞ্চল কমিটির সহ-সভাপতি মনোরঞ্জন দাসকে পুলিশ আটক করে। পরে তৃণমূলের আন্দোলনের চাপে তাঁকে ছাড়তে বাধ্য হয় পুলিশ।

এ দিন মনোরঞ্জনবাবু তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলার অফিসে বসে দাবি করেন, ‘‘ডাকাতি-ফাকাতি সব বানানো। আমার কাছে ধাড়া পরিবার একটি জমি বন্ধক রেখেছিলেন। শর্ত অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময়ের পরে সেই জমি আমার নামে হয়েছে। এখন ওঁরা গায়ের জোরে সেটা নিতে চান বলে আমি অভিযোগ করেছি। তাই ডাকাতি মামলায় আমাকে ফাঁসিয়ে ওই তিন বিঘা জমি নিতে চায় পরিবারটি।’’

কিন্তু, ধাড়া পরিবার পাল্টা দাবি করেছে, জমির বিষয়টিকে সামনে এনে গোটা পরিস্থিতি গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। পরিবারের অনেকের দাবি, ‘‘ওই রাতে কী হয়েছে ভিডিও ফুটেজে তার কিছুটা রয়েছে। প্রয়োজনে সেটা সর্বসমক্ষে দেখানো হবে। আমরা দলাদলির মধ্যে পড়তে চাই না।’’

কিন্তু, তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর যা অবস্থান তাতে তদন্ত শেষ পর্যন্ত কোথায় পৌঁছবে সেটাই বুঝতে পারছেন এলাকার অনেকেই। যদিও তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ব্যাপার নেই। যতদূর জানি, পুলিশ খোলা মনে তদন্ত করছে। মনে হয় সব কিছু স্পষ্ট হতে দেরি হবে না।’’

siliguri police jalpaiguri police crime investigation siliguri tmc group rivalry fatapukur dacoity goutam dev saurav chakraborty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy