Advertisement
E-Paper

অস্থায়ী বাঁধকে ঘিরেই সন্দেহের ঘূর্ণি

সেদিনের হড়পা বানের কারণ খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসন থেকে গড়া কমিটিতে সেচ দফতরের বিশেষজ্ঞদের রাখা হয়েছে। সেই দফতরেরই আধিকারিকদের একাংশ এখন ওই অস্থায়ী বাঁধকেই ‘খলনায়কে’র ভূমিকায় দেখছেন।

অনির্বাণ রায় , সব্যসাচী ঘোষ

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২২ ০৬:৩২
মাল নদীতে হড়পা বানে বিপর্যয়।

মাল নদীতে হড়পা বানে বিপর্যয়। নিজস্ব চিত্র।

না সিকিম, না ভুটান। অস্বাভাবিক রকম বেশি বৃষ্টির খবর এখনও পর্যন্ত কোথাও মিলল না। অন্তত তেমন পরিমাণ বৃষ্টি, যা হড়পা বান ডেকে আনতে পারে। ফলে দশমীর রাতে জলপাইগুড়ির মাল নদীতে হড়পা বানের কারণ নিয়ে প্রশাসন এখনও ‘অন্ধকারে’। তবে এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞদের একাংশের আঙুল এখন ওই নদীর অস্থায়ী বাঁধের দিকেই।

সেদিনের হড়পা বানের কারণ খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসন থেকে গড়া কমিটিতে সেচ দফতরের বিশেষজ্ঞদের রাখা হয়েছে। সেই দফতরেরই আধিকারিকদের একাংশ এখন ওই অস্থায়ী বাঁধকেই ‘খলনায়কে’র ভূমিকায় দেখছেন। তাঁদের দাবি, বিভিন্ন ছবি থেকে দেখা গিয়েছে, ইংরেজি ‘ভি’ অক্ষরের আকৃতির বাঁধ তৈরি হয়েছিল নদীতে। মাটি ও পাথরের তৈরি সেই বাঁধ বেশি জল ধরে রাখার পক্ষে উপযুক্তই ছিল না। নদীতে হঠাৎ জল যে বেড়ে গিয়েছিল, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ বা প্রশাসন কারও সন্দেহ নেই। সেচ দফতরের ওই আধিকারিকদের বক্তব্য, হঠাৎ বেড়ে যাওয়া জমা জলের চাপে মাটি-পাথরের বাঁধ ভেঙে পড়েছিল দশমীর সন্ধ্যায়। পাশাপাশি, নদীখাত থেকে মাটি তুলেই বাঁধ তৈরি হয়েছিল। ফলে নদীখাতও ছিল গর্তে ভরা, গভীর। বাঁধ-ভাঙা জল গর্তে পড়ে সেই হঠাৎ আসা জলস্রোতকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছিল বলে তাঁদের একাংশ দাবি করছেন।

নদীতে জল হঠাৎ কী ভাবে বেড়ে গেল তা নিয়ে সংশয় এখনও যথেষ্ট।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে যে জল আটকে রাখা হয়েছিল ওই বাঁধ ভেঙে পড়ার পরে সেই জলই বিসর্জনে আসা মানুষকে দশমীর রাতে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। আবার শুধু সেই জন্যেই জল অতখানি বেড়ে গিয়েছিল কি না, সেই বিষয়ে সন্দীহান অন্য অংশ।

যে কয়েকটি কারণে বিশেষজ্ঞদের একাংশ অস্থায়ী বাঁধটিকে বিপর্যয়ের জন্য দায়ী করেছেন তার অন্যতম হল, দেহ উদ্ধারের স্থান। যেখানে অস্থায়ী বাঁধ তৈরি হয়েছিল সেখান থেকে এক থেকে তিন কিলোমিটার দূরে সব দেহ উদ্ধার হয়েছে। একেবারে পাহাড় থেকে হড়পা বান তার স্বাভাবিক তীব্র গতিতে নেমে এলে দেহ ভাসিয়ে আরও দূরে নিয়ে যেত বলে দাবি করছেন কেউ কেউ। এ ক্ষেত্রে সেটা না হওয়ায় একটু দূরে অস্থায়ী বাঁধ ভেঙে নামা জলের স্রোতকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞেরা।

জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা রবিবার বলেন, “ভারী বৃষ্টির তথ্য এখনও মেলেনি। কমিটি গড়া হয়েছে। তারা তদন্ত করে দেখে কারণ জানাবে।” তবে এ নিয়ে বিশেষজ্ঞেরা কিছুটা ধন্দেও। কোনও ঝোরার জল গতি বদলে নেমে এসেছিল কিনা, সে প্রশ্নও উঠেছে। যদিও এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও চিহ্ন মেলেনি। তবে যে ভাবে প্রতিনিয়ত পাহাড়ি ঝোরাগুলিকে বুজিয়ে দেওয়া বা গতিপথ বদলে দেওয়া হচ্ছে, তাতে যে কোনও দিন বড়সড় বিপদ ডেকে আনতে পারার আশঙ্কা মনে করিয়ে দিয়েছে মাল নদীর বিপর্যয়। শুধু মাল নদী নয়, এই আশঙ্কা জেগে আছে অন্যান্য পাহাড়ি নদীতেও। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য এ প্রসঙ্গে এ দিন বলেন, “আমি মন্ত্রী থাকাকালীন পাহাড়ি ঝোরা নিয়ে একটা সমীক্ষা হয়েছিল। তখনই দেখা গিয়েছিল, বহু ঝোরা জবরদখল হয়েছে বা বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিবেশের পক্ষে এ অত্যন্ত ক্ষতিকর।”

এ দিকে, শনিবারের হড়পা বানের পর রবিবারেও মালবাজারে দুপুরে প্রবল বৃষ্টি নামে। তবে বৃষ্টি হলেও এ দিন মাল নদীর জলস্তর স্বাভাবিক ছিল।

Jalpaiguri Mal River Disaster Mal Bazar Flash flood
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy