Advertisement
E-Paper

ভয়াল বানে জোড়া জেটি উধাও, বিপর্যস্ত পারাপার

হুগলি নদীতে শনিবার রাতের প্রবল বানে দু’-দু’টো জেটি ভেসে যাওয়ায় রবিবারেও হাওড়া-কলকাতা ফেরি-যোগাযোগ ব্যাহত হয়। ভয়াবহ উচ্চতায় আসা বানের তোড়ে ভেসে গিয়েছে শিবপুর ও বাউড়িয়া লঞ্চঘাটের জেটি। আর বাবুঘাটের গঙ্গায় নৌকা উল্টে তলিয়ে গিয়েছেন এক মাঝি। রবিবার রাত পর্যন্ত তাঁর খোঁজ মেলেনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৫ ০৪:০৬
বানে ভেসে কোথায় গেল লঞ্চঘাটের জেটি। শিবপুরে পরিদর্শন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের। —নিজস্ব চিত্র।

বানে ভেসে কোথায় গেল লঞ্চঘাটের জেটি। শিবপুরে পরিদর্শন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের। —নিজস্ব চিত্র।

হুগলি নদীতে শনিবার রাতের প্রবল বানে দু’-দু’টো জেটি ভেসে যাওয়ায় রবিবারেও হাওড়া-কলকাতা ফেরি-যোগাযোগ ব্যাহত হয়। ভয়াবহ উচ্চতায় আসা বানের তোড়ে ভেসে গিয়েছে শিবপুর ও বাউড়িয়া লঞ্চঘাটের জেটি। আর বাবুঘাটের গঙ্গায় নৌকা উল্টে তলিয়ে গিয়েছেন এক মাঝি। রবিবার রাত পর্যন্ত তাঁর খোঁজ মেলেনি।

ওই রাতে বান আসে প্রায় ৪.১৪ মিটার উচ্চতায়। হুগলি নদী জলপথ সমবায় সমিতি সূত্রের খবর, সাম্প্রতিক কালে এত উঁচু বান আসতে দেখা যায়নি। জলের তোড়ে শিবপুর লঞ্চঘাটের গ্যাংওয়েটি কয়েক ফুট উপরে লাফিয়ে ওঠে এবং পন্টুনের সঙ্গে বাঁধা শিকলগুলি ছিঁড়ে যায়। গ্যাংওয়েটি ভেঙে সেখানেই পড়ে থাকে। শিবপুরের জেটি বা পন্টুনটি প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন জেটির কাছে পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু রবিবারেও বাউড়িয়া লঞ্চঘাটের পন্টুনের খোঁজ মেলেনি। খোঁজ নেই গ্যাংওয়েরও। শনিবার রাত থেকেই সেখানে লঞ্চ পরিষেবা বন্ধ। আবহবিদেরা অবশ্য গঙ্গার এ ভাবে ফুলেফেঁপে ওঠার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু দেখছেন না। তাঁরা জানাচ্ছেন, এখন গঙ্গায় ভরা কোটাল চলছে। ফলে অনেক উচ্চতায় জল ওঠা মোটেই অস্বাভাবিক নয়।

রবিবার, ছুটির দিনে জেটিঘাটে ভিড় তেমন ছিল না। কিন্তু আজ, সোমবার সপ্তাহের প্রথম দিনে কী ভাবে পারাপার হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে। হুগলি নদী জলপথ সমবায় সমিতির তরফে বলা হয়, শিবপুর লঞ্চঘাটে পরিষেবা দ্রুত চালু করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু বাউড়িয়া ঘাটের ভেসে যাওয়া পন্টুন এবং গ্যাংওয়ের খোঁজ না-মেলায় সেখানে ফের কবে পরিষেবা চালু হবে, বলা যাচ্ছে না। শনিবারের বানে বাবুঘাটে নোঙর করা দু’টি নৌকা উল্টে যায়। কলকাতা পুলিশ জানায়, দুই মাঝি সাঁতার কেটে পাড়ে উঠলেও এক জন তলিয়ে যান। পুলিশ, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর রবিবার রাত পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়েও তাঁর সন্ধান পায়নি।

ধেয়ে আসছে জোয়ার। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বুরুলের গঙ্গায়।

এই সময় পৃথিবীর সব থেকে কাছাকাছি চলে আসে চাঁদ।

সে জন্যই জোয়ারের এত স্রোত, এমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

রবিবার উৎপল সরকারের তোলা ছবি।

বানের তোড়ে পারাপার ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে পন্টুন ও গ্যাংওয়ের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে। কয়েক বছর আগে প্রায় দু’কোটি টাকায় শিবপুর লঞ্চঘাট মেরামত করেছিল সেচ দফতর। তার পরেও এক রাতের বানে কী ভাবে সেখানকার জেটি ভেসে গেল, প্রশ্ন তুলছেন নিত্যযাত্রীরা। সমর বাগচী নামে এক আতঙ্কিত যাত্রী বললেন, “ভাগ্যিস, ঘটনাটা ঘটেছে রাতে! দিনের বেলা বান এলে কী যে হত!”

রবিবার সকালেই শিবপুর লঞ্চঘাটে পৌঁছন হুগলি নদী জলপথ সমবায় সমিতির কর্তারা। সম্পাদক অনুপ চক্রবর্তী বলেন, “মেরামতির সঙ্গে সঙ্গে জেটির আধুনিকীকরণের কাজও হয়েছে।” তবু জেটি ঢেউয়ের আঘাত সহ্য করতে পারল না কেন? ওই কর্তা জানান, আগে এত উচ্চতায় বান আসেনি। “শনিবারের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের শিক্ষা হয়ে গেল। এর পরে মেরামতির সময় বানের উচ্চতার কথা ভেবে কাজ করা হবে,” বলেন জলপথ সমবায় সমিতির ওই কর্তা।

সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা এ দিন ঘটনাস্থলে যান। খোদ সেচমন্ত্রীও জেটির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বান আসার খবর পেলে জেটি বা পন্টুনের সঙ্গে বাঁধা শিকল ছাড়াও অতিরিক্ত শিকলের বাঁধন দেওয়াটাই দস্তুর। শনিবার রাতে কেন তা করা হয়নি, সেই প্রশ্নও তোলেন মন্ত্রী। সেচ দফতর সূত্রের খবর, কর্মী কম থাকায় ওই রাতে বাড়তি শিকল বাঁধা হয়নি। তবে মোটা তার দিয়ে পন্টুন বাঁধা হয়েছিল। পরবর্তী কালে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে ভাসমান ক্রেনের সাহায্যে পন্টুন ধরে রাখার ব্যবস্থার কথাও বলেন সেচমন্ত্রী।

শিবপুর লঞ্চঘাটে মেরামতির কাজ করবে সেচ দফতর। ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানকার পন্টুন ও গ্যাংওয়ে সারাতে ১০-১২ দিন লাগবে। কারণ শনিবার থেকে কাল, মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা বান আসার কথা। তাই বুধবারের আগে মেরামতির কাজ শুরুই করা যাবে না। বাউড়িয়া লঞ্চঘাট কিন্তু সেচ দফতর সারাবে না। ওই কাজ করবে হুগলি নদী জলপথ সমবায় সমিতি। সেখানে কাজে নামার আগে পন্টুন এবং গ্যাংওয়ের খোঁজ পাওয়া দরকার। সমিতির চেয়ারম্যান তথা এলাকার বিধায়ক অশোক ঘোষ এ দিন বলেন, “বাউড়িয়ার কাজ শুরু করার জন্য সরকার ও জেলা প্রশাসনের সাহায্য চাওয়া হবে। সমিতির আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। এখন তারা পন্টুন ও গ্যাংওয়ে সারানোর টাকা বহন করতে পারবে না।” এই অবস্থায় ১০-১২ দিনের মাথায় শিবপুর থেকে লঞ্চ পরিষেবা ফের চালু হলেও বাউড়িয়া ঘাটে কবে পারাপার শুরু হবে, কর্তারা তা নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি।

hightide jetty missing Shibpur Howrha Daily Passenger Rajib Banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy