Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Murder

‘খুন আমিই করেছি’, ফেসবুকের এক পোস্টেই পঞ্জাব পুলিশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় জয়পাল

ছিনতাই-তোলাবাজির মতো ‘মাঝারি মানের’ অপরাধের ঘেরাটোপ থেকে জয়পাল নিজের পিঠে পঞ্জাব পুলিশের ‘এ’ গ্রেড অপরাধীর তকমা রাতারাতি নিজেই বসিয়েছিল।

জয়পাল সিংহ ভুল্লার।

জয়পাল সিংহ ভুল্লার। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২১ ০৫:২২
Share: Save:

‘খুনটা আমিই করেছি’— ফেসবুকে সদর্পে করা এই পোস্ট-ই তার ‘জাত’ চিনিয়ে দিয়েছিল বলে মনে করছেন পঞ্জাব পুলিশের কর্তারা।

ছিনতাই-তোলাবাজির মতো ‘মাঝারি মানের’ অপরাধের ঘেরাটোপ থেকে জয়পাল সিংহ ভুল্লার তার নিজের পিঠে পঞ্জাব পুলিশের ‘এ’ গ্রেড অপরাধীর তকমাটা রাতারাতি নিজেই বসিয়ে নিয়েছিল।

বুধবার দুপুরে, নিউ টাউনের সুখবৃষ্টি আবাসনে রাজ্য পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে দেশের অন্যতম এই ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ অপরাধীর মৃত্যুর পরে পঞ্জাব পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, অপরাধ জগতে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা (পুলিশের ভাষায় ক্রিমিনাল সুপ্রিমেসি) করতে এ ছাড়া জয়পালের আর কোনও উপায় ছিল না। পাকিস্তান ঘেঁষা পঞ্জাবের সীমান্ত বরাবর এলাকায় মাদক পাচারের কারবারে অন্যতম চেনা নাম যশবিন্দর সিংহ ওরফে রকি খুন হওয়ার দিন কয়েক পরে তাই ফেসবুকে জয়পাল নিজেই জানিয়েছিল, মাদক-দুনিয়ায় তার একাধিপত্য কায়েম করতে রকিকে সে-ই খুন করেছে!

পঞ্জাব পুলিশের ‘অরগানাইজ়ড ক্রাইম কন্ট্রোল উইং’ সূত্রে জানা গিয়েছে, মাদক কারবারে সীমান্ত এলাকায় ছড়ি ঘোরানো রকির সঙ্গে জয়পালের আলাপ হয়েছিল ভাতিন্ডা জেলে। আলাপ গড়িয়েছিল বন্ধুত্বে। তবে, দূরত্ব তৈরি হতেও সময় লাগেনি। খুনের দায় নিজের কাঁধে নেওয়ার পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করে। তবে জামিন পেয়ে বেরিয়ে আসার পরে জয়পাল নিজেকে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গিয়েছিল বলেই দাবি পুলিশের।

যেমন, বাবার অনুশাসন সত্ত্বেও এক সময়ে সে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিল অপরাধের অন্ধকার দুনিয়ায়। পঞ্জাব পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত সাব-ইন্সপেক্টর ভূপিন্দর সিংহ ভুল্লার আদতে ফিরোজপুরের বাসিন্দা। উর্দিধারীদের গুলিতেই ছেলের প্রাণ হারানোর খবর পেয়ে বুধবারই সংবাদ মাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘ও আমাকে অনেক লজ্জা দিয়েছে। তবে, আর যা-ই হোক, নিজের ছেলে তো, মনটা ভেঙে যাচ্ছে।’’ জানান, ছেলে যে বিপথে যাচ্ছে, ব্যস্ততার মধ্যেও তা আঁচ করতে পারছিলেন তিনি। তাই যে থানাতেই পোস্টিং হোক, জয়পালকে থানার কোয়ার্টারে নিজের কাছে রাখার চেষ্টা করতেন। তিনি জানান, এই সময়ে ফিলোর পুলিশ ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে ছ’মাসের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলেন। ওই সময়টা জয়পাল তাঁর সঙ্গে ছিল না। বাবার অনুশাসনের ঘেরাটোপে আর ধরা দেয়নি সে।

ভূপিন্দরের অনুপস্থিতিতেই তোলাবাজির দায়ে প্রথম বার হাজতবাস এই সময়েই। এর পরে ভাতিন্ডা-চন্ডীগড়-ফিরোজপুরের জেলখানায় আনাগোনা চলতে থাকে। আর জেল-যাত্রা মানেই, কারাগারে একের পর সমাজবিরোধীর সঙ্গে ‘সখ্য’ গড়ে ওঠা! রকির সঙ্গে আলাপ জমে ওঠে সেই সূত্রেই।

পঞ্জাব পুলিশের ডিজি দীনকর গুপ্ত জানান, গত সাত বছরে পঞ্জাবের বিভিন্ন এলাকায় বেড়ে ওঠা নানা অপরাধের তালিকায় উঠে আসছিল একের পক এক নাম। সেই তালিকায় ঢুকে পড়ে মনজিৎ সিংহ ওরফে জয়পাল। রাজ্য প্রশাসন এ ব্যাপারে তাঁদের সবুজ সঙ্কেত দেওয়ায় পুলিশ নড়েচড়ে বসে। তৈরি হয় অরগানাইজ়ড ক্রাইম কন্ট্রোল উইং। ৩১ জন অপরাধীর তালিকা তৈরি করে শুরু হয় ধরপাকড়। দীনকর জানান, ওই তালিকার ২০ জনের হয় এনকাউন্টারে জয়পালের মতো পরিণতি হয়েছে, না হয় পুলিশি হেফাজতে রয়েছে তারা। তিনি জানান, রিন্দা নামে আরও এক কুখ্যাত মাদক কারবারি এখন পাকিস্তানে আস্তানা গেড়েছে। হ্যারি চাখখা নামে সমগোত্রীয় এক কারবারি গা ঢাকা দিয়েছে ইউরোপের এক দেশে। আর ছিল জয়পাল। বুধবারের এনকাউন্টারের পরে যাকে ওই তালিকা থেকে ছেঁটে ফেলে নিশ্চিন্ত বোধ করছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder arrest Facebook Newtown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE